ভিশন প্যানেলের সংবাদ সম্মেলনে নানা অনিয়ম-অসঙ্গতির অভিযোগ
অভিযোগগুলো সত্য নয়: বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ওবিই
পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ২৩ অক্টোবর: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন ‘বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন’র (বিসিএ) গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এজিএম ও নির্বাচনকে অবৈধ এবং সংবিধান বহির্ভূত উল্লেখ করে অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য উপায়ে বিসিএ’র এজিএম ও নির্বাচন দাবি করেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিশন প্যানেল। গত ১৯ অক্টোবর লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, ‘অবিলম্বে স্বেচ্ছাচারিতা পরিহার করে আপনারা বৈধ এবং সাংবিধানিক পথে ফিরে আসুন। সাধারণ সদস্যদের নেতৃত্ব বাছাই করার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করুন।’
অন্যথায়, প্রাণপ্রিয় সংগঠন বিসিএ’র কল্যাণ এবং সাধারণ সদস্যদের অধিকার সুরক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন বলে জানান তাঁরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আতাউর রহমান লায়েক, সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সাইদুর রহমান বিপুল, হেলাল মালিক, সাইফুল আলম, হুমায়ন রশিদ, সিদ্দিকুর রহমান জয়নাল, ফজলুল হক, আনোয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও টিপু মিয়া। সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অবৈধ এবং বিসিএ’র সংবিধান লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে এজিএম ও নির্বাচনের নামে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। সংগঠনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের নেতৃত্বে তাঁর পছন্দের লোকদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য এমন অন্যায় করা হয়েছে।
তারা বলেন, বিসিএ’র সংবিধানের ধারা ২৮ ও ২৯ মতে, এজিএম-এ কোরাম পূর্ণ হতে ২৫ শতাংশ সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। বিসিএ’র বর্তমান মোট সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় কোরাম পূর্ণ হতে কমপক্ষে ৩৮০ জন সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু ওই এজিএম-এ অতিথিসহ মোট উপস্থিতি ২শ জনের কম ছিলো। সাধারণত এজিএম-এ সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কারো উপস্থিত থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেখানে সংগঠনের সদস্য নন এমন অনেকেই উপস্থিত। এমনকি এজিএম-এর মঞ্চেও ছিলেন অতিথি কথিত নির্বাচনের কমিশনার। এছাড়া, বিসিএর সংবিধানের ধারা ৭০ অনুযায়ী এজিএম-এর ২১ দিন আগে মেম্বারদের কাছে বাৎসরিক আর্থিক রিপোর্ট পাঠাতে হয়। রিপোর্ট পাঠানো দূরের কথা; কথিত ওই এজিএম-এ উপযুক্ত কোনো আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়নি। ফলে ওই এজিএম সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ‘ভিশন প্যানেল’- এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই প্যানেলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাইদুর রহমান বিপুল, সেক্রেটারি জেনারেল প্রার্থী হেলাল মালিক এবং চীফ ট্রেজারার প্রার্থী সাইফুল আলম। কিন্তু বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট একের পর এক অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা এবং পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ দেন নাই বলে অভিযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ‘ভিশন প্যানেল’ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মেম্বারশীফ অনুমোদনের সময় তিনি প্রকাশ্যে পক্ষপাতিত্ব করেন। তাঁর এমন পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে বিসিএ’র সাবেক দুজন প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ এমবিই এবং পাশা খন্দকার এমবিই’র কাছে বিচারও দিয়েছিলেন ‘ভিশন প্যানেল’ এর নেতৃবৃন্দ। কিন্তু কোনো সুরাহা পাননি। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেচনায় সম্পূর্ণ অন্যায় ও অসাংবিধানিকভাবে চীফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুলের ক্ষমতা কেড়ে নেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। অথচ সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী আবারও একই পদে প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট তাঁকে বাধা দেননি। মেম্বারশীপ আবেদনের চেক ডিসঅনার হয়েছে। কিছু চেক ডেডলাইনের পরে ক্লিয়ারিং ডেইট দেয়া ছিলো কিন্তু প্রেসিডেন্ট দীর্ঘ ৭ মাসেও এসব নিয়ে কিছু বলেননি। অথচ সিদ্ধান্ত ছিলো একটি চেক ডিসঅনার হলে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লিয়ার না হলে সংশ্লিষ্ট বাণ্ডিলের সব আবেদন বাতিল হয়ে যাবে, যেহেতু বাল্ক হিসেবে আবেদনগুলো জমা হয়েছিলো।
এছাড়া মেম্বারশীপ তালিকা উপস্থাপন না করেই প্রেসিডেন্ট এনইসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এর অনুমোদন করিয়ে নেন। মেম্বারশীপ তালিকার জন্য ইলেকশন কমিশন এবং প্রেসিডেন্টের কাছে বার বার অনুরোধ করলেও সময়মতো তালিকা দেয়া হয়নি। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো ৫ অক্টোবর ২০২৩। তার আগেরদিন ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় এক ইমেইলে ইলেকশন কমিশন জানায়- তারা ‘ইনিশিয়াল’ একটি তালিকা পেয়েছে এবং বিসিএ-কে সেটি পুনরায় চেক করতে বলেছে। চূড়ান্ত তালিকা পাবে ৫ অক্টোবর ২০২৩। অথচ এর প্রায় এক মাস আগেই মেম্বারদের কাছে ইলেকশন প্যাক পাঠিয়েছে বিসিএ। তাঁরা প্রশ্ন রাখেন- মেম্বারশীপ তালিকা চূড়ান্ত না হলে ২২ আগস্টের এনইসি মিটিংয়ে প্রেসিডেন্ট কোন তালিকার অনুমোদন চাইছিলেন? কোন তালিকা ধরে তিনি মেম্বারদের কাছে ইলেকশন প্যাক পাঠালেন’ মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে গেলেও ভিশন প্যানেলকে মেম্বারশীপ তালিকা দেয়া হয়নি। তালিকা দেয়া হয়েছে ৯ অক্টোবর যা কথিত নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন আগে। ফলে তাদের ক্যাম্পেইনেরও সুযোগ দেয়া হয়নি। সুরাহা করা হয়নি মেম্বারশীপ নিয়ে আপত্তির। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ওবিই সাপ্তাহিক পত্রিকাকে বলেন, অভিযোগগুলো শতভাগ মিথ্যা। বিসিএ’র সাংবিধানিক নিয়ম মেনে নির্বাচন হয়েছে। তারা মনোনয়ন জমা দেয়নি। ফলে যারা প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচন কমিশন তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি নির্বাচন কমিশনকে ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ মেম্বারশীপ তালিকা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনার কেন ৪ অক্টোবর ইনিশিয়াল তালিকা পেয়েছেন বলেছেন, সেটির জবাব নির্বাচন কমিশনার দিতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাহমুদ হাসান এমবিই সাপ্তাহিক পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচন কমিশন মেম্বারশীপ তালিকা পেয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর। কিন্তু অভিযোগকারীরা এই তালিকার জন্য কোনো যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করেছে ৪ অক্টোবর। ওইদিন রাতেই আমি তাদের জবাব দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি বিসিএ-এর সভাতেই বলেছি তাদের সংগঠনে নিয়ম-কানুন নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। সংবিধানে লেখা আছে একটা; কিন্তু তারা ইন্টারপ্রিট করে আরেকটা। তাদের সংগঠনের ভিশন ঠিক করতে হবে। সংগঠনের নিয়ম-কানুনগুলো সব রিভিউ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাদেক আহমেদ সবুজ, শিপা করিম, জুবায়ের লস্কর, নুরুল ইসলাম মাহবুব, নুরুল ইসলাম জিতু, শেখ নুরুল ইসলাম, মইনুদ্দিন আহমদ, হারুন রশিদ, আব্দুল আহাদ, তরিশ মিয়া, ইশতিয়াক হোসেন দুদু, শামীম বশর, সানু মিয়া, ফরহাদ আহমেদ, বাবর করিম চৌধুরী, আব্দুল রব, কামাল আহমদ, জিয়াউর রহমান, মান্না চৌধুরী, টিপু চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, শাহ নুরুল ইসলাম, কাজী জহির ইসলাম, কাউন্সিলার মোহাম্মদ খালেদ মিল্লাত, মিজানুর রহমান রকেট ও সবুজ পাটওয়ারী প্রমুখ।