পত্রিকা প্রতিবেদন ♦
লণ্ডন, ৩০ অক্টোবর: ইসরাইলের প্রতি অযাচিতভাবে সহানুভূতি দেখিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন রুশনারা আলী এমপি। তাকে একজন ইহুদী জাতীয়তাবাদী দখলবাজ ইসরাইল রাষ্ট্রের সমর্থক আখ্যায়িত করে আগামী নির্বাচনে ভোট না দেয়ার জন্য দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে মুসলিম ভোটাররা যাতে লেবার পার্টিকে বর্জন করে সে দাবিও উঠেছে। বিক্ষোভ হয়েছে রুশনারা আলী এমপির পার্টি অফিসের সামনে।
পূর্ব লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রীন এণ্ড বো আসনের এমপি রুশনারা আলী। তিনি লেবার দলীয় রাজনীতিক। ২০১০ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকে লেবারের ঘাঁটি খ্যাত বাংলাদেশি ও মুসলিম অধ্যুষিত বেথনাল গ্রীন এণ্ড বো আসনে কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই টানা এমপি নির্বাচিত হচ্ছেন রুশনারা। কিন্তু ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যুতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে নিজের এলাকার ভোটারদের সরাসরি বিপরীতে অবস্থান নিলেন।
গত ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশিদের দুটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইসরাইলে হামাসের হামলার নিন্দা জানান। হতাহতের শিকার ইসরাইলি পরিবারগুলোর জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেন। কিন্তু ইসরাইলের হামলায় শত শত ফিলিস্তিনি নারী-শিশু নিহত হওয়ার কথা তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখও করেননি। তিনি যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেননি। ইসরাইলকে প্রশ্রয় দেয়া পশ্চিমা শাসকদের সঙ্গে সূর মিলিয়ে রুশনারা আলী বলেছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
ওইসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন বলছেন, এসব অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অন্য কোনো বক্তা ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। সরকারের মন্ত্রী ও অন্যান্য এমপিও তাঁর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাঁরাও রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য দেননি। কিন্তু রুশনারা আলী সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে ওইসব অনুষ্ঠানে ইসরাইলের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনের মানুষের ন্যায়বিচারের পক্ষে সমান গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেননি।
সমালোচনার মুখে রুশনারা আলী টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার কাউন্সিলারদের নিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ দেখিয়েছেন। এক বিবৃতিতে ইসরাইলের প্রতি আবারও সহানুভূতি দেখানোর পাশাপাশি যুদ্ধ বিরতির দাবি করেছেন। কিন্তু এতে তাঁর ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভের প্রশমন হয়নি।
গত শুক্রবার টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার পার্টির সামনে বিক্ষোভ করেছেন অনেকে। ওই বিক্ষোভরত মানুষের সঙ্গে রুশনারা আলী বা লেবার পার্টির কেউ সাক্ষাত কিংবা কথা না বলায় ক্ষোভ আরো বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। আগামী নির্বাচনে লেবারের বিপরীতে বিকল্প প্রার্থী নিয়েও আলোচনা করছেন কেউ কেউ।
লেবার দলের নেতা একজন স্বঘোষিত ইসরাইলপন্থী স্যার কিয়ার স্টারমার একাধিক সাক্ষাতকারে গাজায় ইসরাইলের হামলার প্রতি সমর্থন দিয়েছেন। গাজায় পানি, বিদ্যুত, খাবার বন্ধ করে দেয়াকেও ইসরাইলের অধিকার বলে সমর্থন দিয়েছেন লেবার নেতা। তাঁর এমন মন্তব্যের পর দেশব্যাপী ২০ জনের বেশি লেবার কাউন্সিলার দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। দল ছেড়েছেন অনেক লেবার সদস্য। বিশেষ করে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। মুসলিম কাউন্সিলরদের পদত্যাগের কারণে লেবার দল অক্সফোর্ড কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের বর্বরতাকে সমর্থন দেয়ার কারণে আগামী নির্বাচনে লেবার পার্টিকে চড়া মূল্য দিতে হবে। যেসব মুসলিম এমপি ফিলিস্তিনের ওপর বর্বর হামলার বিষয়ে নিরব কিংবা ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের তালিকা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।