লণ্ডন, ১৭ এপ্রিল: লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব আয়োজিত বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আফসার উদ্দিনের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, তিনি ছিলেন একজন আপাদমস্তক ভদ্রলোক। ছিলেন সদালাপী, বিনয়ী ও কৃতজ্ঞতাবোধসম্পন্ন মানুষ। একজন সাংবাদিক ও শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। তিনি যে কাজটিই করতেন তা সুন্দর ও সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন। সংবাদপাঠকে তিনি মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন। টেলিভিশনে ব্যতিক্রমী ধারার সংবাদ উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে তিনি দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার মাধ্যমে বিলেতে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে যে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন সেজন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বক্তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে জান্নাতে সমাসীন করেন।
১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব লণ্ডনের কমার্শিয়াল রোডস্থ লণ্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এই শোকসভায় বিলেতের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকগণ বক্তব্য রাখেন।
লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়েরের সভাপতিতে অনুষ্ঠিত শোকসভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ।
অতিথিবক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক নতুন দিন সম্পাদক মহিব চৌধুরী, চ্যানেল এস-এর প্রতিষ্ঠাতা মাহি ফেরদৌস জলিল, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, সদ্যসাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদক মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী এবং সাবেক সভাপতি ও জনমত-এর সাবেক সম্পাদক নবাব উদ্দিন। অতিথিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী।
শুরুতে অনুবাদসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন এবং মানুষের জীবন ও মৃত্যু নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ইস্ট লণ্ডন মসজিদের সিনিয়র ইমাম সৈয়দ আনিসুল হক। এরপর সৈয়দ আফসার উদ্দিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন চ্যানেল-এস-এর সংবাদ উপস্থাপক শহীদুল ইসলাম সাগর। তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাংবাদিক কামাল মেহেদীর নেওয়া সৈয়দ আফসার উদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। এর আগে তাঁর ওপর নির্মিত ৫২ বাংলা টিভিতে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মরহুম সৈয়দ আফসার উদ্দিনের পরিবারের পক্ষে সলিসিটর সৈয়দ শাহীন, চ্যানেল এস এর চেয়ারম্যান আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ও ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহগীর বক্ত ফারুক, প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ব্রিটিশ বাংলাদেশী ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহানুর খান, ব্রিটিশ বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক কামাল আহমদ, সাবেক প্রযোজক উদয় শঙ্কর দাশ, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, সাংবাদিক ও কবি সারওয়ার-ই-আলম, টিভিওয়ান-এর ডাইরেক্টর অপারেশন্স গোলাম রাসুল, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, চ্যানেল এস এর সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক ডাঃ জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার, এটিএন বাংলা ইউকের উপস্থাপক উর্মি মাযহার, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার সালেহ আহমদ, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ইভেন্টস এন্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রুপি আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও শিক্ষক মোস্তফা কামাল মিলন, চ্যানেল এস এর হেড অব নিউজ কামাল মেহেদী, হেড অব প্রোগ্রামস ফারহান মাসুদ খান, সিনিয়র সংবাদ উপস্থাপক তৌহিদ শাকিল, এটিএন বাংলা ইউকের সিনিয়র রিপোর্টার মোস্তাক আলী বাবুল, সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল মুনিম জাহিদী ক্যারল, সানরাইজ টুডে অনলাইন-এর সম্পাদক এনাম চৌধুরী, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য-সাবেক নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু ও এনটিভি ইউরোপের সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার শামসুল তালুকদার।
প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিব চৌধুরী বলেন, সৈয়দ আফসার ঊদ্দিন ছিলেন একজন অমায়িক মানুষ। তিনি তাঁর স্মৃতি ধরে রাখতে প্রেস ক্লাব এবং চ্যানেল এস মিলে যৌথভাবে কিছু করার আহবান জানান।
চ্যানেল এস-এর প্রতিষ্ঠাতা মাহি ফেরদৌস জলিল বলেন, আফসার উদ্দিন একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন। তিনি কাজকে মায়ের মত সম্মান করতেন। তাই তার সংবাদ পাঠে ভুল থাকতো না। তিনি সব জায়গায়ই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, জীবন একটি সুযোগ, এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন আফসার উদ্দিন। তাই তিনি তাঁর কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন সকল জায়গায়। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন। সর্বদা হাসিখুশী থাকতেন।
সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, সৈয়দ আফসার উদ্দিন ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কিছু করতেন না। তাঁর মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ ছিলো। সৌখিন, পরিপাটি ও গোছানো মানুষ ছিলেন, ছিলেন প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ মানুষ। তিনি আরো বলেন, মরহুম আফসার উদ্দিন বিলেতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষার চর্চা ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে তাঁর স্মৃতির প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।
সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমদ বলেন, আফসার ঊদ্দিন একজন সজ্জন মানুষ ছিলেন। তিনি সবার সাথে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতেন।
নবাব উদ্দিন বলেন, আফসার উদ্দিন বহুমাত্রিক গুণের অধিকারি ছিলেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী “তসদ্দুক আহমদ জার্নালিস্ট এওয়ার্ড” চালু করা যায় কিনা- বিষয়টি ভেবে দেখতে প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
আহমেদ ঊস সামাদ চৌধুরী বলেন আফসার ঊদ্দিন একজন গোছানো এবং ফ্যাশন-সচেতন মানুষ ছিলেন। তিনি তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
আবু মুসা হাসান বলেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন ছিলেন বিরল গুণের অধিকারী। তিনি তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শাহগীর বখত ফারুক বলেন, আফসার উদ্দিন সর্বগুণে গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর কৃতজ্ঞতাবোধ ছিলো অপরিসীম।
মোস্তফা কামাল মিলন বলেন আফসার উদ্দিন একজন স্পষ্টবাদী মানুষ ছিলেন।
সলিসিটর সৈয়দ শাহীন বলেন, আফসার উদ্দিন মিঠু একজন সজ্জন এবং বিনয়ী মানুষ ছিলেন। তিনি সকলকে আপন করে নিতে পারতেন।
স্মরণসভার শেষ দিকে ছিলো দোয়া মাহফিল। দোয়া পরিচালনা করেন ব্রিকলেন জামে মসজিদের প্রধান ইমাম মাওলানা নজরুল ইসলাম। সভায় সৈয়দ আফসার উদ্দিনের নামে একটি শোকবই খোলা হয়। অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকরা শোকবইয়ে তাঁদের প্রিয় সহকর্মী সৈয়দ আফসার উদ্দিন সম্পর্কে তাঁদের অনুভুতি লিপিবদ্ধ করেন। আপ্যায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য, চ্যানেল এস এর সিনিয়র সংবাদ পাঠক বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষক সৈয়দ আফসার উদ্দিন দীর্ঘ নয় বছর বোন ম্যারো (মাল্টিপল মাইলোমা) ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত ১২ই এপ্রিল শুক্রবার রাত আড়াইটায় লণ্ডনের গাই’স হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর।
লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব গত ২৩ ফেব্রুয়ারি (২০২৪) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সৈয়দ আফসার উদ্দিনকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিলেতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে বিশেষ রাখায় “লাইফটাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড” প্রদান করে।