নার্সিং পেশায় দক্ষিণ এশীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে ব্রিটেনে নতুন ক্যাম্পেইন ‘উই আর দি এনএইচএস’
ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান নার্সিং এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার মারিমোত্তু কুমারস্বামী
এনএইচএস-এর প্রধান জনবল কর্মকর্তা ডক্টর নাভিনা ইভানস নার্স প্রতাপ পারসিদোস
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ৮১ শতাংশই বলেছেন, নার্সরা তাঁদের জীবনে বা তাঁদের নিকটজনদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া দক্ষিণ এশীয়দের প্রতি পাঁচজনে দুজনের বেশি (৪১%) বলেছেন, তাঁরা নাসিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়টি ভাববেন।
এনএইচএস-এর অধীনে নার্সিংয়ে যেসব ফলপ্রসূ ও বৈচিত্রপূর্ণ চাকরি রয়েছে, তাতে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে ‘উই আর দি এনএইচএস’ নামের নতুন কর্মসূচি।
মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ
লণ্ডন, ৩১ অক্টোবর: প্রতাপ পারসিদোস এখন আর কেবলই একজন নার্স নন। দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই ব্যক্তি রীতিমতো তারকা বনে গেছেন। ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা (এনএইচএস) বিভাগের বৃহৎ এক কর্মসূচির মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি।
প্রচারাভিযানের নাম ’উই আর দি এনএইচএস’। এনএইচএস ইংল্যান্ড পাঁচ বছর আগে নিয়েছিল এই কর্মসূচি। নতুন তথ্য হচ্ছে- এবার তারা দক্ষিণ এশীয়দের প্রতি লক্ষ্য রেখে নিয়েছে নতুন এক উদ্যোগ। এর মাধ্যমে তারা যেমন দক্ষিণ এশীয় নার্সদের অসাধারণ সব কাজের গুণকীর্তন করছে, তেমনি এই অঞ্চলের মানুষজনকে নার্সিং পেশায় আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
সেই ক্যাম্পেইনের মুখ হয়ে উঠেছেন প্রতাপ, যিনি কাজ করেন ওক্সলিস এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে। নার্সিং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেসব ইতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে, তা তুলে ধরে গর্বিত প্রতাপ। এই পেশা রোগীদের জীবনের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে যেসব সুফল বয়ে এনেছে, তা তুলে ধরছেন তিনি।
প্রতাপ বলেন, ‘এটা খুবই ফলপ্রসূ একটা দায়িত্ব। আমি রোগীদের সঙ্গে কথা বলাটা উপভোগ করি। তাঁদের উদ্বেগের কথা শুনতে চাই। তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া থাকলে জানতে চাই। আপনি যাতে সর্বোচ্চ সেবাটা দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
লন্ডন সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি থেকে নার্সিং ডিগ্রি শেষ করেছেন প্রতাপ। এখন তিনি একজন নার্স কনসালট্যান্ট। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন নার্সিং কোর্সের প্রার্থীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে একটি সাপোর্ট সিস্টেমে। সেখানে আছে কীভাবে ধাপে ধাপে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, তার সমস্ত দিকনির্দেশনা। নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহায়তা করতে রয়েছে বাৎসরিক অন্তত ৫ হাজার পাউন্ডের সহায়তা।
‘এনএইচএস সবচেয়ে গতিশীল ও ফলপ্রসূ যেসব চাকরির সুযোগ দিয়ে থাকে, তার মধ্যে নার্সিং অন্যতম। ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য রয়েছে চলমান প্রশিক্ষণ ও সীমাহীন সব সুযোগ-সুবিধা। আমি নিশ্চিত, নার্সিং পেশা আপনার জীবনটাকেই বদলে দেবে। যেভাবে আমার জীবনটা বদলে গেছে। আপনি যদি এমন একটা কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ পান, যেখানে আপনি বেড়ে উঠতে পারবেন এবং আপনার পুরো সত্ত্বাটাকে প্রতিদিন কাজের ভেতরে ডুবিয়ে রাখতে পারবেন, তাহলেই আপনি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবাটা দিতে সক্ষম হবেন,’ বলেন প্রতাপ।
যুক্তরাজ্যে গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন করার পর চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি নার্সিংয়ে। এখানে নার্সিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে চাকরি পাচ্ছেন ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। নার্সিং পেশায় একবার ঢুকতে পারলেই খুলে যায় সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার সব দুয়ার। নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নতির শিখরে তুলে নেওয়া যায় বাড়তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, যেখানে আলোকপাত থাকে বিশে বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন ট্রমা (মানসিক আঘাত), অর্থোপেডিকস (অস্থির চিকিৎসা) বা নিওন্যাটাল কেয়ার (নবজাতকের পরিচর্যা)।
এসব বিষয় তুলে ধরতেই নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করেছে এনএইচএস। এতে এনএইচএস-এর সব শাখায় নার্সিংয়ের সব বিশেষ বিশেষ দিকগুলোর ওপরে আলোকপাত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিবন্ধী, মানসিক স্বাস্থ্য, বয়স্ক ও শিশুদের সেবা।
কীসের জন্য এই বিশেষ উদ্যোগ সে বিষয়ে যারা নিশ্চিত নন, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ‘উই আর দি এনএইচএস’ ক্যাম্পেইন নিয়েছে এক বিশেষ পদক্ষেপ। এর আওতায় আয়োজন করা হয়েছে এক কুইজ প্রতিযোগিতা। সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে বিপুল পরিমাণে যে নার্সিংয়ের চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেই বিষয়টি। একই সঙ্গে মানুষজনকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে নার্সিংয়ের কোন জায়গাটা তাঁদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে। এই লিংকে গিয়ে অংশ নেওয়া যাবে সেই কুইজে।
এই ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হলো ডিগ্রি কোর্স এবং সরাসরি শুরু করা যায় এসব সব চাকরির জন্য আবেদনের সংখ্যা বাড়ানো। এনএইচএসের নার্সিং বিভাগের বিদ্যমান জনবল সংখ্যা ১.২ মিলিয়ন। সেটাকে আরও বাড়াতেই এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে নার্সরা যেসব অবিশ্বাস্য কাজ করে চলেছেন, তার বিজয়গাথা সব সম্প্রদায়ের মধ্যে তুলে ধরতে টিভি, সিনেমা, রেডিও ও বিলবোর্ডের মাধ্যমে নানামুখী বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে তারা।
এনএইচএস-এর প্রধান জনবল কর্মকর্তা হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ডক্টর নাভিনা ইভানস বলেন, ‘নতুন এই নিয়োগ প্রচারাভিযানে সহায়তা করতে পেরে আমি গর্বিত। এনএইচএস-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আমাদের বৈচিত্রেভরা কর্মী বাহিনী। যুক্তরাজ্যজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্প্রদায় থেকে আসা নার্সরাই আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মেরুদণ্ড। তাঁরা প্রতিদিন যেসব অবদান রেখে চলেছেন, সেটাকে অবশ্যই উদযাপন করতে হবে।’
ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান নার্সিং এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার মারিমোত্তু কুমারস্বামী বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে নার্স হিসেবে কাজ করার জন্য আমি ভারত থেকে প্রথম যখন এসেছিলাম, আমি খুবই বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ, এখানে নার্সিং পেশাটাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়জুড়ে আমি বিভিন্নভাবে সহায়তা-সমর্থন পেয়েছি। শেখার জন্য নানা ধরণের সুযোগ পেয়েছি। এটা আমাকে নেতৃত্বের জায়গায় বড় হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এনএইচএস পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। এই পেশায় আসতে আমি অন্যদের উৎসাহ দিচ্ছি। অধিকতর তথ্যের জন্য ইন্টারনেটে ‘ভর্লরধভথ-ডটরণর্ণর’ খুঁজে দেখা যাবে। অথবা এজন্য র্র্দয্র://ষষষ.দণটর্ফদডটরণর্ণর.ভদ্র.লপ/ষণ-টরণর্-দণ-ভদ্র/ভর্লরধভথ-ডটরণর্ণর ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা যেতে পারে।ট