লণ্ডন এসেও দুইদিনের মধ্যে ফিরতে হলো সিলেটের লিমনকে
লণ্ডন, ১৪ নভেম্বর: বাংলাদেশের এক শীর্ষ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সহযোগিতায় পাসপোর্ট থেকে অফলোড তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন সিলেটের ইয়াহদি সারওয়ার লিমন। শাহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে বিমানযোগে হিথ্রো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু মাত্র দুইদিনের মধ্যে আবার দেশে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। কারণ হিথ্রো এয়ারপোর্টে আসার পর জানতে পারেন, তাঁর ভিজিট ভিসাটি সিলেটের ওই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ‘অনলাইন সিস্টেম’ থেকে বাতিল করে দিয়েছেন। লণ্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশকে লিমন ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, ২৩ অক্টোবর সিলেট ওসমানী এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসান তাঁর কাছে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে তিনি তা প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ফলে তাকে অফলোড করে দেয়া হয়। তিনি আর ওই ফ্লাইটে লণ্ডন আসতে পারেননি। এর দুই একদিন পর তিনি ঢাকায় চলে যান এবং একজন শীর্ষস্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। ওই কর্মকর্তা তাঁর বিস্তারিত বক্তব্য শুনে সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং তাঁর পাসপোর্ট থেকে ‘অফলোড’ তুলে দিয়ে?তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এখন আর কোনো সমস্যা নেই। আপনি বাংলাদেশের যেকোনো এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করতে পারবেন।
এরপর ২ নভেম্বর বুধবার সকালে ঢাকা হযরত শহজালাল এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাইট করেন তিনি। কিন্তু বিকেল ৪টায় হিথ্রো এয়ারপোর্টে পৌছার পর ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলেন, তাঁর ভিসাটি সিলেটের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বাতিল করে দিয়েছেন। তাই তাঁকে হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। তাকে দুইদিন ও একরাত হিথ্রোতে আটকে রেখে পরে ৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাঁর স্পনসরের (আত্ময়ের) জিম্মায় শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেয়া হয়। বলা হয়, ৬ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যার ফ্লাইটে তাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে। সেখান থেকে তিনি বাকিংহ্যামশায়ারের হাইউইকামে যান এবং শুক্র ও শনিবার আত্ময়-স্বজনদের সাথে কাটিয়ে রোববারের মধ্যে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
বুধবার (৯ নভেম্বর) তাঁর বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি সিলেটে অবস্থান করছেন। ইমিগ্রেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করবেন। ঘুষ না দেওয়ার কারণে তাঁর ভিসা বাতিলের বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরবেন। তিনি দেখবেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরপর তিনি পরবর্তী পদেক্ষপ গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, ইয়াহদি সারওয়ার লিমনকে ভিজিট ভিসার জন্য স্পনসর পাঠান যুক্তরাজ্যের বাকিংহ্যামশায়ারের হাই-উইকামের বাসিন্দা তাঁর ভাতিজি তানিয়া সীমা মিয়া। তিনি (লিমন) সিলেট ভিএফএস অফিসে (ভিসা সেন্টার) স্পনসরশীপের কাগজপত্র জমা দিয়ে যথা-নিয়মে ৬ মাসের মাল্টিপল ভিসা পান। এরপর লিমন যথারীতি গত ২৩ অক্টোবর রোববার লণ্ডনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে পাসপোর্ট, বিমান-টিকিট ও লাগেজসহ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। বিমানের বোর্ডিং কার্ড নিয়ে ইমিগ্রেশন সেকশনে গেলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসান তাঁর পাসপোর্টটি হাতে নিয়েই বলেন, এই ভিসা জাল। তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি কি কন্ট্রাক্টে (দালালের সাথে চুক্তি করে) লণ্ডন যাচ্ছেন? তখন লিমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বুঝাতে চান তিনি কারো সাথে চুক্তি করে ভিসা পাননি। তাঁর ভিসা তিনি স্পনসরশীপ জমা দিয়ে ভিসা সেন্টার থেকে নিয়েছেন। তিনি তার দাবীর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও প্রদর্শন করেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিছুতেই তা মানতে রাজি হননি। তিনি তাকে একপাশে বসিয়ে রাখেন। এরপর তার মোবাইল ফোনে অন্য একজন কর্মকর্তা কল করেন, যিনি ব্রিটিশ হাইকমিশন থেকে কথা বলছেন বলে জানান। তিনি তার ভিসার সত্যতা নিরূপন করতে অনেক প্রশ্ন করেন। তাঁর স্পনসরের নাম, যুক্তরাজ্যের ঠিকানাসহ নানা তথ্য জানতে চান। এরপর তার (লিমনের) বাড়ির ঠিকানা, দাদা ও দাদার বাবার নাম জানতে চান। তিনি সবগুলো প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তা বলেন, আপনি যেতে পারবেন না। এরপর তিনি হতাশ হয়ে যখন সেখানে বসে আছেন; তখন ইমিগ্রেশন বিভাগেরই একজন লোক তার কাছে এসে কানে কানে বলেন, আপনি বসে আছেন কেন? ১৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আপনাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি ১৫ হাজার টাকা কোথা থেকে ব্যবস্থা করবো।
এদিকে ফ্লাইট ছেড়ে দেয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসানকে বারবার অনুরোধ করেন তাঁকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু হাসান কিছুতেই তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হননি। এসময় অন্য একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার ভিসা ঠিক আছে। তাকে আপনি ছেড়ে দিন। তখন হাসান রেগে গিয়ে ওই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে বলেন, আপনি কথা বলবেন না। আমি ভালো জানি। এদিকে নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট ছেড়ে যায়। কিন্তু লিমনকে আর যেতে দেওয়া হয়নি। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা হাসান তার পাসপোর্টের শেষ পেইজে একটি সাংকেতিক নাম্বার বসিয়ে দেন যাতে এই পাসপোর্ট দিয়ে তিনি আর ভ্রমণ করতে না পারেন। এরপর বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।