লণ্ডন, ২০ ডিসেম্বর: বাংলাদেশের উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক শিল্পের কাজকে বিলেতে বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের বিয়ে-সাদীতে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির ‘ক্যাম্পেইন’ শুরু করেছেন অন্যতম উদ্যোক্তা সাঈদা চৌধুরী।
এ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার ১৩ ডিসেম্বর লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল মিলন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন অন্যতম উদ্যোক্তা সৈয়দা সি ফ্যাশন ব্র্যাণ্ডের পরিচালক কাউন্সিলার সাঈদা চৌধুরী, লণ্ডন বেঙ্গলী ওয়েডিং ফেয়ারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আহাদ আহমদ, আরিয়ানা ব্যানকুয়েটিং হলের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর তোফায়েল আহমেদ, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা, ব্রিটিশ বাংলাদেশী উদ্যোক্তা আতিক চৌধুরী এবং প্রাইড অব এশিয়ার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ওয়াজেদ হাসান সেলিম বিইম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ দেশে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রতিটি বিয়েতে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার পাউণ্ড খরচ হয়ে থাকে। বর-কনেসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী অভ্যর্থনা অর্থাৎ রিসেপশন অনুষ্ঠানে গড়ে ২০%, যা প্রায় ১০ হাজার পাউণ্ডের মত পোশাক খাতে ব্যয় করা হয়। এই ১০ হাজার পাউণ্ডের একটি পাউণ্ডও বাংলাদেশের পোশাক-শিল্প পায় না। কারণ, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পরে সাধারণত বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের বিয়ে হয় না। ভিন দেশের তৈরি পোশাক পরিধান করেই বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের বিয়ে হয়। অথচ বাংলাদেশের অনেক প্রসিদ্ধ পোশাক শিল্প যেমন: মোগা সিল্ক, তসর সিল্ক, ইরি সিল্ক, মালবেরি সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই জামদানি, মসলিন, মিরপুরী কাতান/বানারসীসহ তাঁত এবং খাদি থাকা সত্ত্বেও এদেশে অর্থাৎ ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের বিয়েতে এসবের কোন স্থানই নেই। সংবাদ সম্মেলনে সাঈদা চৌধুরী বলেন, “বিলেতে বাংলাদেশীদের বিয়েতে বাংলাদেশের দক্ষ ও নিপুণ পোশাক কারিগরের কারুকার্য, সৌন্দর্যবোধ, কাজের মানের প্রচার ও প্রসারে এবং প্রসিদ্ধ এই পোষাক শিল্পের অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা কি চেষ্টা করে দেখতে পারি না? ” বাংলাদেশের কয়েকজন ফ্যাশন ডিজাইনারসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। “বাঙালীর বিয়েতে বাংলাদেশের পোশাক” একটি ক্যাম্পেইনের নাম। এ ক্যাম্পেইনের সাথে অনেকেই যুক্ত হয়ে কাজ করবেন বলে আশা পোষণ করা হয়। বিশেষ করে বিবিসিসিআই, লণ্ডন বেঙ্গলী ওয়েডিং ফেয়ার, সাইদা-সি, দ্যা আরিয়ানা গ্রুপ, প্রাইড অব এশিয়া এবং মে-ফেয়ার ভেন্যুসহ আরো বিয়ের আয়োজকদের বিভিন্ন সংগঠন এবিষয়ে কাজ করবে বলে উদ্যোক্তারা অত্যন্ত আশাবাদী। সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন যার মধ্যে রয়েছে- বিলেতের মাটিতে বাংলাদেশী এক্সক্লুসিভ (অনন্য) বিয়ের পোশাক-শিল্পের প্রদর্শনী, ফ্যাশন ডিজাইনার, পোশাক-শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজক এবং ওয়েডিং সার্ভিস ব্যবসার সমন্বয়কারীদের নিয়ে সেমিনার এবং বাংলাদেশের বিয়ের পোশাকে বিনিয়োগের বিষয়ে নিয়মিত কনফারেন্সের আয়োজন। বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের ৪র্থ প্রজন্ম এখন বিলেতে বাস করছে। বিয়ের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। হিসেব করলে দেখা যাবে, বছরে প্রায় ২ হাজার বিয়েতে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড বিয়ের পোশাক খাতে ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক-শিল্প বাংলাদেশী-ব্রিটিশদের বিয়েতে যথেষ্ট মানসম্মত ও এক্সক্লুসিভ (অনন্য) বিয়ের কাপড়ের যোগান দিতে পারবে। সাঈদা চৌধুরী বলেন, এই ক্যাম্পেইনটির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
অনুষ্ঠানে সৈয়দা সি, কোরাল ক্লাউসেট এবং আনান আজম নামে তিন জন ভিন্ন ফ্যাশন ডিজাইনারের পোশাকের ছবি প্রদর্শিত হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি