পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ১০ এপ্রিল: করোনাকালীন সময়ে ঘোষিত সরকারের ইট আউট টু হেল্প আউট স্কিমে প্রতারণার মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার পাউণ্ডের বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করায় একজন সাবেক সিটি কাউন্সিলারকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ ইকরাম নামের এই কাউন্সিলার ২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর জুড়ে চার সপ্তাহে তৎকালীন চ্যান্সেলর ঋষি সুনাকের ঘোষিত স্কীমের আওতায় অর্থ চেয়ে প্রতারণামূলকভাবে ১৯টি দাবী করেছিলেন।
এইচএম রেভিনিউ অ্যান্ড কাস্টম (এইচএমআরসি) কর্তৃক কোভিড স্কিম জালিয়াতির জন্য তিনি হচ্ছেন দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি। ট্রেজারি-সমর্থিত এই স্কিমটি কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে সংকটাপন্ন রেস্টুরেন্ট খাতকে ব্যবসায় ফিরে আসতে উতসাহিত করার জন্য চালু করা হয়েছিলো। এই স্কীমের আওতায় রেস্টুরেন্টগুলো খাবারের দামে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়েছিলো। ছাড় দেয়া সেই ৫০ শতাংশ অর্থ পরে সরকারের কাছ থেকে দাবি করার নিয়ম ছিলো। ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট জানায়, ৩৬ বছর বয়সী ইকরাম আটটি ভিন্ন ভিন্ন ফুড আউটলেটের জন্য মোট ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭৩ পাউন্ডের ১৯টি ভুয়া দাবি করেছেন। প্রসিকিউটর টিমোথি জ্যাকবস বলেন, ছয়টি ব্যবসা হয় ‘পুরোপুরি কাল্পনিক’ অথবা বৈধ কোম্পানি, যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আদালত বলেছে, দুটি খাবারের দোকানের সঙ্গে তার কিছু সম্পর্ক ছিল, কিন্তু সেগুলো বর্তমানে চালু নেই। এইচএমআরসি জানিয়েছে, ২০২২ সালে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ইকরাম কেইগলি টাউন কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। জ্যাকবস আদালতকে বলেন, ১৯টি দাবির মধ্যে আটটি সরকার পরিশোধ করেছে এবং ইকরামের স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৮৯ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ১১টি দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আদালতকে বলা হয় যে, এইচএমআরসি কর্তৃক প্রদত্ত অর্থের অর্ধেকেরও বেশি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, তবে মাত্র ৯৩ হাজার পাউন্ড বকেয়া রয়েছে। জ্যাকবস বলেন, ইকরাম এই প্রকল্পে নিবন্ধন করেছিলেন এবং তার প্রতিটি দাবির জন্য তার নিজের নাম এবং টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করেছিলেন। আইপি ঠিকানাটি পরে পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের কেইগলির প্রিংফিল্ড কোর্টে তার বাড়িতে পাওয়া যায়। আদালতকে জানানো হয়, নকল খাবারের দোকান বা আসল খাবারের কানের সঙ্গে ইকরামের কোনও সম্পর্ক নেই, যার মধ্যে একটি ঠিকানা ছিল নাপিতের দোকান, একটি হোটেল যা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং একটি কমিউনিটি ক্যাফে যা প্রতি তৃতীয় রবিবার খোলা হত। জ্যাকবস বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত খান ক্যাফে নামে দোকানটির আওতায় পাঁচটি দাবি করা হয়েছিল, কিন্তু দাবি করার আগেই ক্যাফের সাথে তার সম্পৃক্ততা বন্ধ হয়ে গিয়ছিলো। এইচএমআরসির করদাতা সুরক্ষা টাস্কফোর্সের তদন্তের পর ২০২১ সালের ১৬ জুন অভিযুক্ত ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। নিক ওয়ারসলি বলেন, ম্যানচেস্টারে কেয়ার হোম চালানোর জন্য ইকরাম ৭৫ হাজার পাউন্ডেরও বেশি ঋণ নিয়েছিলেন এবং বোকার মতো ইট আউট টু হেল্প আউট স্কিমকে ‘তার তাৎক্ষণিক আর্থিক সমস্যা সমাধানের উপায়’ হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি আদালতকে বলেন যে, ইকরাম ‘ভাল চরিত্রের একজন ব্যক্তি। তিনি সমাজের জন্য ইতিবাচক অনেক অবদান রেখেছেন, এবং এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক ‘একটি বিচ্যুতি’। ইকরাম গত জুনে এক শুনানিতে জনগণের রাজস্ব ফাঁকি, ভুয়া দাবীর মাধ্যমে জালিয়াতি এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ পাচারের কথা স্বীকার করেন এবং শুক্রবার তাকে দুই বছর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ডেপুটি সার্কিট বিচারক টিমোথি ক্লেসন তাকে বলেন, যদিও আমি আপনার এই দাবি মেনে নিই যে এই অর্থের কিছু অংশ আর্থিক বাধ্যবাধকতা পূরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল, তবে এর সাথে জড়িত পরিমাণের পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট যে এর বেশিরভাগই লোভ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এইচএমআরসির জালিয়াতি তদন্ত বিভাগের পরিচালক সাইমন ইয়র্ক বলেন, বিশ্বাস ও দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত একজনের কাছ থেকে এটি একটি স্পষ্ট জালিয়াতি। এইচএমআরসি কর্তৃক কোভিড স্কিম জালিয়াতির আওতায় এটি প্রথম দোষী সাব্যস্তের ঘটনা। তবে আরও ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলাও চলছে। এইচএমআরসি এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থ প্রদান বন্ধ বা পুনরুদ্ধার করেছে। তবে উদ্ধার কার্যক্রম এখনও।