পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ২২ মে: এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে কর্মসংস্থান কমেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এই প্রথম এমন পরিসংখ্যান দিল দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস)। দ্য গার্ডিয়ান-এর সংবাদে বলা হয়েছে, এই পরিসংখ্যানে বোঝা যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার প্রভাব দেশটির শ্রমবাজারেও পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটাই বেড়েছে। ফলে অনেক মানুষ কাজ খুঁজতে বাজারে নেমেছেন। সে কারণে দেশটিতে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে।
ওএনএসের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান কমেছে ১ লাখ ৩৬ হাজার। এই হিসাব সাময়িক হলেও তা বাস্তবতার কাছাকাছি। এপ্রিল মাসে কর্মসংস্থান কমলেও তা ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের তুলনায় আট লাখ বেশি। এর পরের মাসেই যুক্তরাজ্যে কোভিডজনিত লকডাউন শুরু হয়। যুক্তরাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব উভয়ই বেড়েছে। এ সময় দেশটির কর্মখালির বিজ্ঞাপন কমেছে ৫৫ হাজার। এ নিয়ে টানা ১০ ত্রৈমাসিকে তা কমল। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের অসুস্থতার কারণে নিষ্ক্রিয় মানুষের সংখ্যা ২৫ লাখ ৫০ হাজারে উঠেছে।ওএনএসের পরিচালক ও পরিসংখ্যানবিদ ড্যারেন মরগান বলেন, ‘বছরের প্রথম প্রান্তিকে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব উভয়ই বেড়েছে। এর পেছনে মূলত পুরুষদের ভূমিকাই প্রধান। এর অর্থ হলো, যাঁরা কাজে নেই বা কাজ খুঁজছেন না, এমন মানুষের সংখ্যা কমছে। আবার অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা মানুষের সংখ্যাও রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে।’ গত বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হয়। কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে মূল্যস্ফীতির সূচক। এই বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যের সরকারি খাতের মজুরি গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে বৃদ্ধি পায়।
তা সত্ত্বেও ওএনএস বলছে, মজুরির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকার কারণে সে দেশের সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের শ্রমিকদের অবস্থার অবনতি হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাজ্যের সরকারি খাতের মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬ ও বেসরকারি খাতের মজুরি বেড়েছে ৭ শতাংশ হারে, কিন্তু এ সময়ের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ হারে। অর্থনীতির নীতি অনুসারে, সরকার যদি কর্মসংস্থান বাড়াতে চায়, তাহলে এমন প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে। যাতে ব্যবসার জন্য ঋণ পাওয়ার সুবিধা হয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ দিতে পারে। পরিণামে বেকারত্ব কমবে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার যদি সরকারের মনে হয়, মূল্যস্ফীতি লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে, ঋণের প্রবাহ কমানো দরকার, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াবে। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদে যে হারে ঋণ দেয়, তা বাড়বে। এতে সব ব্যাংকের হাতেই নগদের প্রবাহ কমবে। ঋণের জোগান কমে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি কমবে, কিন্তু একই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে, অন্তত অদূর ভবিষ্যতে। যুক্তরাজ্যে ঠিক তা-ই হয়েছে। মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে গিয়ে তারা যেভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, তাতে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমে গেছে। টান পড়ছে কর্মসংস্থানে। যুক্তরাজ্যের এই দুর্গতি শুরু হয়েছে ব্রেক্সিটের পর থেকেই। করোনার সময়ও উন্নত দেশগুলোর মধ্যে তারা সবচেয়ে ভুক্তভোগী হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সে দেশে মূল্যস্ফীতির হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত রেজল্যুশন ফাউণ্ডেশনের এক জরিপে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে পারিবারিক বার্ষিক গড় আয় ২ হাজার পাউণ্ডের বেশি কমবে। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সে দেশের মানুষের গড় আয় ৩ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে অর্থাৎ এ বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মানুষের আয় কমবে ৪ শতাংশ। এতে দৈনন্দিন আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাবে সাধারণ মানুষ। তবে দুর্যোগের এ সময়ও অতিধনীদের আয় বাড়বে-রেজল্যুশন ফাউণ্ডেশন এমন কথাই বলছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান-এর।