পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ২৯ মে: বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে রাশিয়া। রাশিয়ার এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর সমালোচনার জবাব দিয়েছে মস্কো।
ওয়াশিংটনকে ভর্ৎসনা করে শনিবার মস্কো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে। তাই, যুক্তরাষ্ট্র যেন পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে রাশিয়াকে ‘লেকচার’ দিতে না আসে।
গত ২৫ মে বৃহস্পতিবার রাশিয়া জানায়, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে দেশের বাইরে প্রথমবার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে যাচ্ছে তারা। এ নিয়ে বেলারুশের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে মস্কো। এ ছাড়া বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো জানান, এই অস্ত্র ইতিমধ্যে স্থানান্তর শুরু হয়েছে।
রাশিয়া এ ঘোষণা দেওয়ার পরদিন শুক্রবার জো বাইডেন বলেন, বেলারুশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে রাশিয়া আরও অগ্রসর হয়েছে। এই বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ‘অত্যন্ত নেতিবাচক’। বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বৃহৎ আকারের হাইব্রিড যুদ্ধ শুরু করেছে ওয়াশিংটন। এ পরিস্থিতির মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের সার্বভৌম অধিকার হলো নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেটা আমরা প্রয়োজনীয় বলে মনে করি।’
দূতাবাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করি, তা আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতার সঙ্গে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মন্তব্যের পরে ১৯৬২ সালে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর সবচেয়ে মারাত্মক পারমাণবিক হুমকির মুখে রয়েছে বিশ্বে। তবে রাশিয়া বলছে, রাশিয়ার অবস্থানকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
আগ্রাসী পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধকে টিকে থাকার লড়াই হিসেবে নিয়েছেন পুতিন। তিনি বারবার সতর্ক করে বলেছেন, নিজেদের রক্ষায় সব ধরনের উপায় অবলম্বন করবে রাশিয়া। তাঁর এ মন্তব্যের জেরেই পারমাণবিক হুমকির কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ার দূতাবাস মস্কোর পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনার মার্কিন সমালোচনাকে ভণ্ডামি বলেও অভিহিত করেছে। দূতাবাস বলেছে, অন্যদের দোষারোপ করার আগে ওয়াশিংটনের কিছুটা আত্মদর্শন করা উচিত।
বিবৃতিতে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্রের বিশাল মজুত বজায় রেখেছে। ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে দেশটি পারমাণবিক অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মাথায় রেখে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’
স্নায়ুযুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডি আইজেনহাওয়ার অনুমোদনের পর থেকে পশ্চিম ইউরোপে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় এসব অস্ত্র মোতায়েন করা হয়। ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের তথ্য কেউ জানে না। যদিও ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট বলছে, ইতালি, জার্মানি, তুরস্ক, বেলজিয়াম ও নেদারল্যাণ্ডসে ১০০টি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জনে কৌশলগত (ট্যাকটিক্যাল) পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি গোটা শহর ধ্বংস করে দিতে ব্যবহার করা হয় স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্র।
যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য অর্জনে কৌশলগত (ট্যাকটিক্যাল) পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে একটি গোটা শহর ধ্বংস করে দিতে ব্যবহার করা হয় স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক অস্ত্র।
সতর্ক করল ইইউ
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলারুশে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে মস্কো ও মিনস্কের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জোটটি বলেছে, এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা আরও মারাত্মক উসকানির দিকে ঠেলে দেবে।
ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বেলারুশের সরকার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবৈধ ও বিনা উসকানিতে চালানো আগ্রাসনের সহযোগী। পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহবান জানিয়ে ইইউ বলছে, এটি কেবলই এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াবে এবং বেলারুশের সার্বভৌমত্বকে খর্ব করবে।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিবৃতিতে ইইউ আরও বলেছে, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করার যেকোনো ধরনের প্রচেষ্টা শক্ত ও সমন্বিত জবাবের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।