পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ১১ সেপ্টেম্বর: মরক্কোতে শুধু লাশ আর লাশ। ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক লাশ। ক্ষতবিক্ষত লাশ। অঙ্গহানি হওয়া লাশ। কোনোটার হাত নেই। কোনোটার পা নেই। কারো মাথা থেঁতলে বিকৃত হয়ে গেছে। চেনার উপায় নেই। প্রতিক্ষণই এমন সব লাশ বেরিয়ে আসছে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে। নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০০০।
আহতও হয়েছেন প্রায় সমসংখ্যক মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ। ফলে নিহতের সংখ্যা তর তর করে বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মারাত্মক আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৪০০। সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছেন মারাকেশ শহরের ঠিক দক্ষিণে। এ অবস্থায় দেশটির ষষ্ঠ বাদশা মোহাম্মদ দেশজুড়ে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন। এ সময়ে সব সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত। জীবিতদের দ্রুত আশ্রয়, খাদ্য ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি। সেনাবাহিনীকে উদ্ধার তৎপরতায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন। হতাহতদের সহায়তায় রক্ত দান করছেন মরক্কোর জনগণ।
৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে ভয়াবহ শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে দেশটিতে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.৮। এতে দেশটির প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা বিধ্বস্ত হয়। অনেক গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্বজনহারা মানুষের আহাজারিতে সেখানকার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তারপরও জীবনকে বাঁচাতে হয়। এ জন্য তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে দিনরাত পার করছেন।
ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল পর্যটন শহর মারাকেশ থেকে প্রায় ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হাই এটলাস মাউন্টেইনে। মারাকেশ শহরটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এক স্থান। কারণ এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ভূমিকম্পের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, তা রাজধানী রাবাত থেকেও অনুভূত হয়েছে। কম্পন অনুভূত হয়েছে কাসাব্লাঙ্কা, আগাদির এবং ইসোউইরা থেকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন আল হাউজ প্রদেশে। এরপরেই রয়েছে তারৌদান্ত প্রদেশ। তবে কম মানুষ মারা গেছেন মারাকেশ শহরে। ইউনেস্কো ঘোষিত ওল্ড সিটিতেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওই এলাকাটি পাহাড়ি হওয়ায় বেশির ভাগ বাড়িঘর মাটির ইট, পাথর এবং কাঠ দিয়ে তৈরি। ফলে সহজেই তা ধসে পড়ার কথা। কিন্তু যে মাত্রায় ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে কংক্রিটে, লোহায় তৈরি বাড়িও ধসে পড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বিবিসির সংবাদদাতা নিক বিকি। তিনি একটি গ্রামে পৌঁছার পর দেখতে পান এক স্থানে উদ্ধার করে রাখা হয়েছে ১৮টি মৃতদেহ। তার পাশে বসে আহাজারি করছেন প্রবীণ এক নারী। বহু মানুষ আফটার শকের আশঙ্কায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন।
এরই মধ্যে খাদ্য ও পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্গত এলাকা পাহাড়ি হওয়ায় সেখানে পৌঁছানো খুব কঠিন। জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এর আগে ১৯৬০ সালে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত করে আগাদির এলাকায়। তাতে কমপক্ষে ১২,০০০ মানুষ মারা যান। তারপর শুক্রবারের ভূমিকম্পই সবচেয়ে ভয়াবহ। এই ভূমিকম্প কমপক্ষে এক শতাব্দীর মধ্যে মরক্কোতে সবচেয়ে শক্তিশালী।
ওদিকে উদ্ধার তৎপরতায় মরক্কো সরকারকে সহায়তায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। স্পেন, ফ্রান্স ও ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে একই রকম প্রতিশ্রুতি এসেছে।