পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ১৯ জুন: গ্রিসের উপকূলের কাছে ভূমধ্যসাগরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় এখনো ৫০০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে। তিনি বলেন, এটা ভয়ংকর ঘটনা। এই প্রাণহানি মানব পাচারকারীদের বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
জেরেমি লরেন্সের মতে, সাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানোর ‘আইনি ও মানবিক বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় আরও বলেছে, প্রাণহানি ঠেকানোর জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
১৩ জুন গভীর রাতে দক্ষিণ গ্রিসের উপকূলীয় শহর পাইলোস থেকে প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-
পশ্চিমে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকাটি ডুবে যায়। খবর পেয়ে গ্রিসের কোস্টগার্ড উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এ ঘটনায় ৭৯ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানায় গ্রিসের কোস্টগার্ড।
ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে নৌকাটি লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীদের বেশির ভাগের বয়সই ২০-এর কোঠায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নৌকাটিতে ৫০০ থেকে ৭০০ জন যাত্রী ছিলেন।
গ্রিসের তত্ত¡াবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আইওনিস সারমাস বলেছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাটি কী কারণে ডুবে গেছে, তা নির্ধারণ করতে বাস্তব তথ্য ও প্রযুক্তির ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখা হবে।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে শরণার্থী অভিবাসীদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ গ্রিস। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৭২ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী এ বছর ইতালি, স্পেন, গ্রিস, মাল্টা ও সাইপ্রাসে গিয়েছেন।
এদিকে আইওএমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের সমুদ্র ও স্থল রুটে ৩ হাজার ৭৮৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মারা যাওয়ার তথ্য তারা নথিভুক্ত করেছে। এই রুটের মধ্যে সাহারা মরুভূমি ও ভূমধ্যসাগর অতিক্রমের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কী ঘটেছিল
নৌযানডুবির ঘটনাটি নিয়ে এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি, যার সঙ্গে গ্রিসের কোস্টগার্ডের ভাষ্য মেলে না।
ভূমধ্যসাগরের যে এলাকাটিতে নৌযানটি ডুবে, সেখানকার অন্যান্য জাহাজের গতিবিধি বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্রাতিরিক্ত অভিবাসনপ্রত্যাশীবোঝাই মাছ ধরার নৌযানটি ডুবে যাওয়ার আগে অন্তত সাত ঘণ্টা সাগরে ভাসছিল। নৌযানটি চলছিল না।
তবে গ্রিসের কোস্টগার্ড এখনো দাবি করছে, এই সময়কালে নৌযানটি চলছিল। নৌযানটি ইতালির পথে যাচ্ছিল। নৌযানটিকে উদ্ধারের কোনো প্রয়োজন সে সময় ছিল না।
নৌযানডুবি নিয়ে বিবিসির অনুসন্ধানের বিষয়ে গ্রিসের কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
নৌযানটি ডুবে যাওয়ার আগেই পূর্ণমাত্রায় উদ্ধার প্রচেষ্টা শুরু করা দরকার ছিল বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এ দুর্ঘটনা মোকাবিলায় গ্রিসের ভূমিকা তদন্তের আহŸান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গ্রিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নৌযানটিতে থাকা ব্যক্তিরা (অভিবাসনপ্রত্যাশী) বলেছিলেন, তাঁরা সাহায্য চান না। এমনকি নৌযানটি ডুবে যাওয়ার আগপর্যন্ত তাঁরা বিপদের মধ্যে ছিলেন না।
মেরিটাইম অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম মেরিন ট্রাফিকের কাছ থেকে ট্র্যাকিং ডেটার একটি কম্পিউটার অ্যানিমেশন হাতে পেয়েছে বিবিসি।
মেরিন ট্রাফিকের এই ডেটায় দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের একটি ছোট, নির্দিষ্ট এলাকায় নৌযানটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাসছিল। একই এলাকায় পরে নৌযানটি ডুবে যায়। এই তথ্য গ্রিসের কর্তৃপক্ষের ভাষ্যের ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি করে।