বিশেষ প্রতিনিধি
লন্ডন, ০৯ অক্টোবর: ঢাকায় গুমোট হাওয়া। নানা জল্পনা। গুঞ্জন, গুজব। কী হচ্ছে? অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ ছিল শান্ত। বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি এমন থাকবে না। ১৮ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসছে এ ধরনের আলোচনা কান পাতলেই শোনা যায়। কবে? কেউ বলছেন ১৫ই অক্টোবর। কারও মতে সেটা ২০শে অক্টোবরের আগে-পরে। ঢাকায় নানা জল্পনা, কী হচ্ছে? জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনা নিয়েও পর্দার আড়ালে নানা কথা।
সব ছাপিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের বৈঠক। বৈঠকটি কেন মাঝপথে থেমে যায় তা নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। গত ২৭শে সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র বলছে জ্যাক সুলিভান একা নন, এফবিআই কর্মকর্তাসহ আরও তিনজন ছিলেন বৈঠকে। বৈঠকটি প্রথমে গোপন রাখা হয়। পরে হোয়াইট হাউসের তরফে তা খোলাসা করে দেয়া হয়। নানা সূত্রে বৈঠকটির বিস্তারিত প্রকাশ করেছে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মানবজমিন। বৈঠকের শুরুটা ছিল খুবই আন্তরিক। মাঝখানে একটি বিষয় নিয়ে আলোচনায় ছন্দপতন ঘটে। চারটি বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।
১. বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিরোধীরা বলছে, তারা নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া অংশ নেবে না। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। জ্যাক সুলিভান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব জানতে চান। তখন বলা হয়, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে তার সায় নেই। নির্বাচন হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে গিয়ে তার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়।
২. কারারুদ্ধ বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। তার দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি তোলা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের অভিমত কি? এ ব্যাপারে জানানো হয়, তাকে নিয়ম ভেঙে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতমানের হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা দেয়া হচ্ছে। সাধারণত কোনো সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে এ ধরনের সেবা দেয়া হয় না। তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে বলা হয়, যেহেতু বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে সেজন্য তিনি এটা ভেবে দেখবেন।
৩. নোবেল জয়ী প্রফেসর ইউনূসের প্রসঙ্গ নিয়ে বেশকিছু সময় আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে এত মামলা-মোকদ্দমা কেন। তাকে কেন নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশ্ব নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে এখনো তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জ্যাক সুলিভান এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তখন জানানো হয়, আইনের বাইরে তাকে কিছুই করা হচ্ছে না। নির্যাতন বা হয়রানির প্রশ্ন উঠছে কেন। জ্যাক সুলিভান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। বলেন, প্রফেসর ইউনূস যাতে খালি খালি দমন-পীড়নের শিকার না হন সেটা নিশ্চিত দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
চার নম্বর বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নানা কারণে আলোচনা অন্যদিকে মোড় নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র দাবি করেছে, আলোচনার সময় হঠাৎ করেই দরকষাকষি শব্দটি বেশ গুরুত্ব পায়। মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেই বলেন, তাদের পক্ষে এ নিয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। এখানেই আলোচনা থেমে যায়। বিরোধী বিএনপি আগামী ১৮ই অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দলটি এদিন বড় ধরনের শোডাউন করতে চায়। এ সমাবেশ থেকেই আসবে আল্টিমেটাম। যদিও বিএনপি’র অনেক আল্টিমেটামই পরে মিইয়ে গেছে। দলটির নেতারাও তা মনে রাখেন না।
বিএনপি’র সূত্রগুলো বলছে, অক্টোবরের শেষ দিক থেকে ঢাকা অচলের কর্মসূচি আসবে। চূড়ান্ত ফয়সালা করতে চান তারা। অর্থনীতি ভঙ্গুর। রিজার্ভ কমছে প্রতিদিনই। ডলারের দাম বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিষ্ট মানুষ। রাজনীতিবিদরা যথারীতি অনড়। দেশ বা জনগণ রসাতলে গেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু এ জনগণই যদি সর্বশান্ত হয়ে যায় তবে কাদের নিয়ে তারা রাজনীতি করবেন বলা মুশকিল। এক গভীর অনিশ্চয়তার গর্তে বাংলাদেশ। উদ্ধার কীভাবে সেটাই এখন মুখ্য আলোচ্য।