লণ্ডন, ১৫ জানুয়ারী: দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সহযোগী সম্পাদক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক আশিক মোহাম্মদ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন। গত ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার লণ্ডন সময় ভোর ৪টায় পূর্ব লণ্ডনের বেথনাল গ্রীণ এলাকার হ্যাকনি রোডস্থ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র সন্তান, মা, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসে ও দেশে অবস্থানরত তার সাবেক সহকর্মী, শুভাকাঙ্খী, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন।
মরহুম আশিক মোহাম্মদের নামাজে জানাজা ১৪ জানুয়ারি শনিবার বাদ জোহর পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ফরেস্ট গেইট সিমেট্রিতে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে অনেক পুরনো সহকর্মী ও তাঁর স্বজনরাও বাসায় ছুটে যান। সেসময় তাঁর কিডনী ও লিভার কাজ করছিলো না। তিনি ছিলেন অনেকটা সংজ্ঞাহীন। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে শুক্রবার ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক আশিক মোহাম্মদের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার ইউনিয়নের রাজিবাড়ি ভরাউট গ্রামে। তার পিতা মরহুম মখন মিয়া। তারা ছিলেন ৮ ভাই, ৩ বোন। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেয়ার পর আশিক মোহাম্মদ সাপ্তাহিক জনমত-এ কিছু দিন কাজ করেন। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় জড়িত হন। ছিলেন লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য। সংসার জীবন শুরু করার পর গত কয়েক বছর আগে স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে ৪ বছরের ফারাজকে নিয়ে লণ্ডনে স্থায়ী হয়েছিলেন। শেষবারের মত দেখতে মাস দুয়েক আগে দেশ থেকে তার আম্মা ও এক ছোট ভাইকে আনার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় মা ছেলের দেখা আর হয়নি।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন আশিক। লড়ছিলেন স্পাইন (মেরুদণ্ড) ক্যান্সারের সাথে। পূর্ব লণ্ডনের রয়েল লণ্ডন হাসপাতালে প্রায় ৭/৮ মাস একটানা ভর্তি ছিলেন। অনেকটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে উজ্জীবিত আশিক তার মাকে নিয়ে সৌদিআরবে উমরাহ করার পরিকল্পনা করছিলেন। ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহের জন্য তাকে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু এবার লড়াইয়ে হারতে থাকেন তিনি। জীবনের শেষ সময়টা স্বজন-পরিজনদের সাথে পারিবারিক পরিবেশে কাটানোর জন্য সপ্তাহ কয়েক আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর ৪টায় তিনি পাড়ি জমান অন্যলোকে।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন
আশিক মোহাম্মদ ১৯৮৬ সালে সাপ্তাহিক সিলেট বাণীতে কাজ করার মধ্যদিয়ে সাংবাদিক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এর আগে তিনি তার নিজ এলাকা লালাবাজার এলাকার সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রেরণ করতেন। এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক সিলেট বাণী দৈনিক হিশেবে প্রকাশনা শুরু সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর নব্বই সালের দিকে তিনি সিলেটের বহুল প্রচারিত দৈনিক সিলেটের ডাক-এ যোগ দেন। এ পত্রিকায় দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মূলত কারেন্ট ইভেন্ট কাভার করতেন। তিনি ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবেরও সদস্য। মরহুমের ছোট ভাই নান্নু মিয়া জানান, ছেলের মৃত্যু সংবাদে তার বৃদ্ধা মা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকে কাতর। ভাই-বোনদের মধ্যে এক ভাই সৌদি আরবে ও এক ভাই বাহরাইনে অবস্থান করছেন। মরহুম ভাইয়ের মাগফেরাতের জন্য তিনি সকলের দোয়া কামনা করেছেন।
লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের শোক
লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সদস্য, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক সহযোগী সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক আশিক মোহাম্মদের মৃত্যুতে ক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তাঁর স্বজনদের ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন। এছাড়া তাঁর মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
আশিক মোহাম্মদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর এক সময়ের সহকর্মী দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সাবেক নির্বাহী সম্পাদক ও লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম, এ, সাত্তার এবং সাবেক সহযোগী সম্পাদক ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কমিউনিকেশন্স অফিসার মাহবুব রহমান মরহুমের মাগফেরাতের জন্য মহান আল্লাহতাআলার কাছে বিশেষ দোয়ার জন্য সকলের প্রতি একান্ত অনুরোধ জানিয়েছেন।
এছাড়া ইউএনবির যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম আশিক মোহাম্মদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি সিলেটে তাঁর সংবাদিকতাকালীন স্মৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি এবং আশিক ভাই সিলেটে একই সময়ে সাংবাদিকতা করেছি। সিলেট প্রেস ক্লাবের সদস্য ছিলাম একই সাথে। শফিকুল ইসলাম মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসিব করেন এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দান করেন।