গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের বাড়ি দেশজুড়ে ধরপাকড়
লণ্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রতিবাদ
পত্রিকা ডেস্ক লণ্ডন, ১৩ জুন: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ‘জড়িত’ থাকার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েক জন মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আগে উত্তর প্রদেশের এসব বাড়ির মালিককে বিষয়টি জানানো হয় বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। খবর বিবিসি। সম্প্রতি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দুই শীর্ষস্থানীয় নেতার অবমাননকর মন্তব্যের পর মুসলিমরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে সংঘর্ষ, সহিংসতা হয়েছে। দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তর প্রদেশের পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে তিন শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। গত মে মাসে টেলিভিশনে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। তিনি তখন বিজেপির মুখপাত্র ছিলেন। তাঁর ওই মন্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় তা প্রকাশ করেনি বিবিসি। নূপুর শর্মার ওই মন্তব্যের পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠলে দল থেকে সাময়িকভাবে তাঁকে বরখাস্ত করে বিজেপি। নূপুর শর্মার ওই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয় ভারতের মুসলিমরা। এ নিয়ে নিন্দা জানায় মুসলিম বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশ। এ ঘটনায় বিজেপির দিল্লি মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নবীন কুমার জিন্দালকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের একটি স্ক্রিনশট টুইট করার কারণে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিজেপি। বিজেপির এই দুই নেতা, বিশেষ করে নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অবৈধ স্থাপনা এবং বিক্ষোভে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র। হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, উত্তর প্রদেশে যাঁদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের একজন জাভেদ আহমেদ। তিনি একজন রাজনীতিক। তাঁর মেয়ে আফরিন ফাতিমা মুসলিম অধিকার নিয়ে কাজ করা একজন অধিকারকর্মী। গত শুক্রবার বিক্ষোভ পাথর ছোড়ার অভিযোগ ওঠা আরও দুজনের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গণমাধ্যমবিষয়ক উপদেষ্টা একটি ছবি টুইট করেছেন। তাতে দেখা যায়, একটি বুলডোজারএকটি বুলডোজারএকটি বুলডোজারএকটি বুলডোজার দিয়ে একটি বাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘বিশৃঙ্খলকারীরা মনে রাখবেন, শুক্রবারের পরই আসে শনিবার।’ বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার এ ঘটনায় অনেকে নিন্দা জানাচ্ছেন।
লণ্ডনের আলতাব আলী পার্কে প্রতিবাদ
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও নাবিন কুমার জিন্দাল কর্তৃক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে শুক্রবার (১০ জুন) ইসলামিক রাইটস এণ্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকের উদ্যোগে ও বিভিন্ন সংগঠনের সমর্থনে পূর্ব লণ্ডনের আলতাব আলী পার্কে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জু’মার নামাজের পর অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে পূর্ব লণ্ডনের বিভিন্ন মসজিদ থেকে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে যোগ দেয়। এতে বক্তারা অবিলম্বে নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানান। একই সঙ্গে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র সন্ত্রাসীদের দ্বারা মুসলমানদের আক্রমণের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহবান জানিয়েছেন বক্তারা। বক্তারা বলেন, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারতে বিভিন্ন মসজিদে আক্রমণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রাদায়িক উস্কানি দিয়ে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। সর্বশেষ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও আয়েশাকে (রা.) নিয়ে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ কটূক্তি করা হয়েছে। যা ক্ষমতার অযোগ্য অপরাধ। প্রবীণ কমিউনিটি নেতা ও সাংবাদিক কে এম আবুতাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও রাইটস কনসার্নের সভাপতি অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, প্রফেসর মাওলানা আব্দুল কাদের সালেহ , প্রফেসর ড: হাসনাত এম হোসেন এমবিই, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার নাজির আহমদ, মাওলানা ছাদিকুর রহমান, মাওলানা এমদাদুর রহমান মাদানী, মাওলানা আব্দুল মালিক, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান, কাউন্সিলর আ ম ওহিদ আহমদ, মাওলানা রফিক আহমদ, মাওলানা নাজির উদ্দিন বরুনী, সাপ্তাহিক সুরমার সম্পাদক শামসুল আলম লিটন, বায়তুল আমান মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল মালিক, কমিউনিটি নেতা হাজী হাবিব, আলহাজ্ব নুর বকশ, আব্দুল্লাহ আল মুনিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন রাইটস কনসার্নের সভাপতি শফিক খান। সভায় বক্তারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) ও উম্মুল মু’মিনুন হযরত আয়েশা সিদ্দিক (রা:) সম্পর্কে ভারতের মোদী সরকারের মুখপাত্রদের ধৃষ্টতামূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অনতিবিলম্বে নূপুর শর্মা ও নাবিন কুমার জিন্দালকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাচ্চির দাবি করেন। সভায় পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত সহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবাদ করায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং বাংলাদেশ সরকারকে মহানবী (সা) কে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের নিন্দা জানানোর আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ভারতে মুসলমানদের জান মালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং ঐতিহাসিক মসজিদ ও স্থাপনার সংরক্ষণ করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে কুখ্যাত নুপুর শর্মা, জিন্দালসহ সকল অভিযুক্তদের গ্রেফতার ও বিচার না করলে ভারতের সকল পণ্য বয়কটের জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহবান জানানো হয়।