ভোট ভাগাভাগির পরিণাম কি হতে পারে?
রাজনউদ্দিন জালাল ♦
আজকাল টেলিভিশনের পর্দায় তাকালেই দেখি- ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের লেবার পার্টির শোচনীয় পরাজয়ের জন্য দলটির প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিনকে দোষারোপ করা হয়। বর্তমান সময়ের ‘রেড টরি’ খ্যাত ডানপন্থী লেবার নেতারা এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য দায়ী (কিয়ার স্টারমার গং)। আমি জেরেমি করবিনের নেতৃত্বের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লেবার পার্টির পরাজয়ের পর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে আমার বিশ্লেষণ তুলে ধরেছিলাম।
মূলত সেই নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-
১. ব্রেক্সিট ভোটের কারণে বর্ণবাদীদের কাছে পরাজিত হন জেরেমি করবিন।
২. ব্রিটিশ পলিটিক্যাল এস্টাবলিস্টমেন্ট ও তাদের ‘জায়োনিস্ট’ লবি সরাসরি লিপ্ত ছিলো জেরেমি করবিনকে ধ্বংস করার জন্য।
৩. লেবার পার্টির ‘ব্লেয়ারাইট’ এবং ‘রেড টরি’ ডানপন্থিরা চাননি জেরেমি করবিন ও তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক দর্শনের বিজয়। টনি ব্লেয়ারের ১৯৮৭ সালের নিবার্চনে প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে বেশী ভোট পেয়েও জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি জিততে পারেনি। কেন?
কিয়ার স্টারমার নেতৃত্বে এসেছেন তাঁর ডান ডানপন্থি সহযোগী এবং দর্শনকে নিয়ে। এর সাথে যোগ দিয়েছে তাঁর সমর্থক ‘জায়োনিস্ট’ লবি। বর্তমান সময়ে লেবার পার্টিতে এমন অবস্থা বিরাজমান যে, আপনি যদি ‘জায়োনিস্ট’দের কিংবা ইসরায়েলী রাষ্ট্রের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেন এবং ফিলিস্তিনীদের পক্ষে কথা বলেন, তাহলে আপনি লেবার পার্টির সদস্যপদ হারাতে পারেন। কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি এতো ডানপন্থী এবং গণবিরোধী হয়েছে যে, নেতানিয়াহুর মত যুদ্ধাপরাধী ইসরায়েলী নেতা এবং ‘জেনোসাইডের জন্য দায়ী’ ইসরায়েলী ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)-এর বিরোধিতা করার তো দূরের কথা- যুদ্ধ বন্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আনীত ‘সিজফায়ার’ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতেও অক্ষম বর্তমান লেবার নেতৃবৃন্দ। দুঃখজনক হলেও এটি সত্য যে, অস্ত্রহীন এবং আশ্রয়হীন সাধারণ ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াতে রাজি নন লেবার পার্টির নেতৃবৃন্দ। কিয়ার স্টারমার এবং ঋষি সুনাকের মধ্যে- কে বেশি ‘জায়োনিস্ট’ এবং মুসলিম বিরোধী হবেন তা নিয়ে এখন প্রতিযোগিতা চলছে। গাজা এবং রাফার নিরস্ত্র, বিপন্ন এবং অসহায় মানুষকে হত্যা করার জন্য অস্ত্র দেয়া হচ্ছে ব্রিটেন, ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে। অথচ আমার বিশ্বাস- এই দেশগুলোর আনুমানিক ৭৫% ভাগ মানুষই যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং নিরীহ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে। আমরা কি লেবার পার্টির বর্তমান জায়োনবাদী নীতি সমর্থন করতে পারি? অন্যদিকে, আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর দোসর আরব কিংডমের দেশগুলোর নেতারা নীরব থেকে তাদের রাজতন্ত্র এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষায় পশ্চিমা ডানপন্থিদের দালালিতে ব্যস্ত। এই বিশ্বের গরিব-দুঃখী এবং সর্বহারা মানুষদেরকে সহায়তা করবে কে? এবার আমার গত পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস, পূর্ব লণ্ডন এবং অন্যান্য বাঙালী/মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
১৯৭৮ সালে ‘দ্যা ব্যাটল অব ব্রিকলেন’ আন্দোলনের সফলতার পূর্বে আমাদের মানুষজন লেবার পার্টির সদস্যপদের জন্য দরখাস্ত করলে সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হতো। এক পর্যায়ে এর প্রতিবাদে আমাদের কমিউনিটির জনগোষ্ঠী গঠন করেন ‘দি পিপলস এ্যালায়েন্স ইন ইস্ট লণ্ডন’। আর ১৯৮২ সালে এই ‘দি পিপলস এ্যালায়েন্স ইন ইস্ট লণ্ডন’-এর ব্যানারে প্রয়াত নুরুল হক মাস্টার সাহেবকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করিয়ে লেবার পার্টির বিরুদ্ধে বর্তমানের বাংলাটাউন ও স্পিটালফিল্ডস ওয়ার্ডে নির্বাচনে কাউন্সিলার হিশেবে বিজয়ী করতে সক্ষম হন। এটা ছিল আমাদের কমিউনিটির ঐক্যের ফসল। এর পরে পর্যায়ক্রমে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা বাড়তে থাকে এবং ১৯৯০ দশকে টাওয়ার হ্যামলেটস বারাতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কাউন্সিলারদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়ে। বাঙালী কাউন্সিলাররা বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান, ডেপুটি লিডার, পরবর্তীতে লিডারশীপের দায়িত্বও লাভ করেন।
ঠিক এই পর্যায়ে বাঙালীদের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে কতিপয় ব্লেয়ারাইট নেতা এবং লেবারের লণ্ডন রিজিওনের অফিসার (পার্টি পুলিশ) মরিয়া হয়ে উঠেন। এদের কুকর্মের কারণে পিটার শোর এমপি এবং মিলড্রেড গর্ডন এমপি বিদায় নেয়ার পরে এই দুই আসনে কোনো বাঙালী/মুসলিম প্রার্থী তাদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেননি। এ পর্যায়ে তখন নিবেদিত বাঙালী নেতাদের রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেয় একটি কুচক্রী মহল এবং এদের নেতা ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসে জন বিগস এবং জিম ফিটজপ্যাট্রিক এবং নিউহাম থেকে রবিন ওয়েলস। এরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, বাঙালীদের কাউন্সিলারশীপের উর্ধে স্থান দেয়া হবে না। অবশ্য সময়ের সাথে এদের সবাইকে বিদায় দিয়েছে এলাকার জনসাধারণ।
ইরাকের বিরুদ্ধে বেআইনি যুদ্ধ করার পরে পতন হয় টনি ব্লেয়ারের। টাওয়ার হ্যামলেটস বারাতে আগমন ঘটে জর্জ গ্যালোওয়ে এবং রেসপ্যাক্ট পার্টির। লেবারের এমপি ওনা কিং এই বেআইনি যুদ্ধ সমর্থন করার চড়া খেসারত দিয়ে ২০০৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে পরাজিত হন। বিজয়ী হন জর্জ গ্যালোওয়ে। নির্বাচনের আগেই গ্যালোওয়ে ঘোষণা দেন তিনি পরের বার এই আসন থেকে এমপি পদে দাঁড়াবেন না বরং তাঁর দল এই আসনে একজন বাঙালী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে লেবার পার্টি ২০১০ সালের নির্বাচনের জন্য?আগেভাগেই মনোনয়ন দেয় রুশনারা আলীকে (ওনা কিং-এর এক সময়ের সহকারী)। তখন আমাদের নেতারা আবার রুশনারা আলীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হন। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমাদের চাওয়া ছিলো- আমরা যেনো অন্তত একজন বাঙালীকে নির্বাচিত করে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে যাত্রা শুরু করতে পারি।
ইতোমধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটসে শুরু হয়ে যায় নির্বাহী মেয়র সিস্টেম প্রবর্তনের জন্য তৎপরতা। লেবার পার্টির অনেকেও তলে তলে এই নতুন পদ্ধতি সমর্থন করতেন। এদের একজন ছিলেন জন বিগস। তিনি নিজেকে এতো সুযোগ্য মনে করতেন যে, সব পদের জন্যই নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতেন। নির্বাহী মেয়রের পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লুতফুর রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সেই চেনা চক্র ও জন বিগস। এদের সাথে যোগসাজশ ছিলো লণ্ডন রিজিওন লেবার পার্টির কতিপয় কর্মকর্তার। নেপথ্যে ছিলেন কিছু বাঙালীও। নানা ঘটন-অঘটনের পর সকল পলিটিক্যাল এ্যাস্টাবলিশমেন্ট, ডানপন্থী মিডিয়ার মিথ্যাচার আর নেতিবাচক প্রচারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে লুতফুর রহমান বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে বারার প্রথম নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন। এরপরের কাহিনী সবার জানা। তবে তথাকথিত নির্বাচনী আদালতের সিদ্ধান্তকে পাল্টে দিয়ে পূর্ব লণ্ডনের জনতার রায়ে জনাব লুতফুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তৃতীয়বারের মত টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সরকার, ডানপন্থী মিডিয়ার অপপ্রচার এবং জুডিশিয়ারির রায়কে ভুল প্রমাণ করে উল্লিখিত কুচক্রিদের বিদায় দিয়েছেন লুতফুর রহমান ও বারার জনগণ। এর মধ্যদিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসে জনতার বিজয় হয়েছে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘জায়োনস্ট’ ইসরাইলী নেতৃবৃন্দের যুদ্ধাপরাধ এবং ‘জেনোসাইড’ বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের এমন কোনো স্থান নেই যেখানে এই জঘন্য ‘জেনোসাইডের’ প্রতিবাদ হয়নি। সাউথ আফ্রিকা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্রিটেনের ন্যায়পরায়ণ মানুষ চেয়েছিলেন অন্তত লেবার পার্টি ‘সিজফায়ার’ এর পক্ষে অবস্থান নিক। কিন্তু আমরা দেখলাম লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার উল্টো ‘জায়োনিস্টদের’ পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। লেবার পার্টি থেকে অপসারণ করেছেন সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো, ন্যায়পরায়ণ ও জনপ্রিয় জেরেমি করবিনের মতো লেবার নেতাকে। অবশ্য তীব্র সমালোচনার মুখে ব্রিটেনের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী এমপি ডায়ান এবোটকে দলছাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছেন কিয়ার স্টারমার। এখানে দুঃখের সাথে উল্লেখ করতে হয়, একমাত্র আপসানা বেগম ছাড়া বাকী তিন বাঙালী মুসলিম এমপি ইসরায়েলী গণহত্যা বন্ধের প্রস্তাবে পার্লামেন্টে ভোট দেননি কিংবা অসহায় ফিলিস্তিনীদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সক্ষম হননি। প্রশ্ন হলো কেন?
টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রীন এণ্ড স্টেপনী আসনের বর্তমান এমপি রুশনারা আলীকে নির্বাচনে মোকাবেলা করতে নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাঁর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ হচ্ছে- রুশনারা আলী এমপি ডানপন্থী শিবিরে অবস্থান করেন। তিনি সব সময়ই ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং নিজের প্রমোশন নিয়ে ব্যস্ত। তিনি তাঁর ভোটারদের কল্যাণে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেননি। এলাকার ভোটারদের আশা-আকাঙক্ষার মূল্যায়ন তাঁর কাছে নেই। এর প্রমাণ- গত নভেম্বরে গাজা এবং রাফায় মানবতা লংঘনকারি ইসরায়েলের ‘জেনোসাইড’র বিরুদ্ধে এবং ‘সিজফায়ার’-এর পক্ষে পার্লামেন্টে ভোট দেননি। এনিয়ে কমিউনিটিতে তীব্র এবং নজীরবিহীন প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। দুই দুইবার তাঁর কার্যালয় ঘেরাও করে জনগণ এর জবাবদিহিতা চেয়েছেন। কিন্তু তিনি তাতে ভ্রক্ষেপ করেননি। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার ইস্যুকে কেন্দ্র করে একাধিক বাঙালী প্রার্থী এই আসনে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। তবে আমার ধারণা- তাদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির ফলে কোনো সুফল মিলবে না। লিবারেল ডেমোক্রেটদের যোগ্য প্রার্থী রাবিনা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমাল মসরুর নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে তাদের পক্ষে জয়লাভে হিসাব মেলানো কঠিনই বটে।
এখানে বলা প্রয়োজন যে, যারা ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে ‘আইডেন্টিটি’ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তাদের বুঝতে হবে টাওয়ার হ্যামলেটস এবং লণ্ডন বহুজাতিক ও বহুভাষিক মানুষের আবাস এবং এখানে নির্বাচনে সফল হতে হলে অন্যান্যদের সাথে নিয়েই এগুতে হবে। আপসানা বেগমের আসনে তিনি যদি একমাত্র বাঙালী/মুসলিম প্রার্থী হন তাহলে তাঁর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ত্যাগী তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিকে সমর্থনে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে বাউণ্ডারী বদলে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট নতুন আসন স্ট্রার্টফোর্ড এবং বো নির্বাচনী এলাকার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাঙালী ওমর ফারুক (আমার পুরোনো নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা), ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে দাঁড়িয়েছেন হালিমা খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিওনা লালি ও নিজাম আলী। এই চার প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়ে গেলে কিয়ার স্টারমারের মনোনীত লেবার প্রার্থীর বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। নিউহাম এবং টাওয়ার হ্যামলেটসে লেবার পার্টি এবং লুতফুর রহমান সাহেবের ভোটাররা যাদের সমর্থন করবেন তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা বেশি।
চিংফোর্ড এবং উডফোর্ডগ্রীন আসনে কিয়ার স্টারমার ফাইজা শাহিনের সাথে অন্যায় এবং অমানবিক আচরণ করেছেন। তিনি ‘জায়োনিস্ট’দের কবলে পড়ে এই যোগ্য নারী লেবার প্রার্থীকে বাদ দিয়ে শ্যামা ট্যাটলারকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তবে ফাইজা শাহীন এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিশেবে দাঁড়িয়েছেন। তাহলে কি কিয়ার স্টারমার এই আসনে ইয়ান ডানকান স্মিথকে পরাজিত করতে চান না? কে জানে, হবে হয়তোবা। অবশ্য রেডব্রিজ বারাতে কিছুটা আশার আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। ইলফোর্ড নর্থে ডানপন্থী এবং ‘রেড টরি’ লেবার প্রার্থী ওয়েস স্ট্রিটিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন প্যালেস্টাইনি বংশোদ্ভূত লিয়ান মোহাম্মদ। তিনি তরুণ হলেও অনেক দক্ষ এবং ইদানিং তার পক্ষে কমিউনিটির গণ্যমান্য মানুষজন সোচ্চার হয়েছেন। ইলফোর্ড সাউথে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন নুরজাহান বেগম। তিনি পেশায় ম্যাজিস্ট্রেট। গত শনিবার ১লা মার্চ ইলফোর্ড টাউন হল থেকে বার্কিং টাউন হল পর্যন্ত আয়োজিত মিছিলের পর প্রায় হাজার মানুষের সমাবেশে এই দুই প্রার্থী চমৎকার বক্তৃতা দিয়েছেন। তাদের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থনও দৃশ্যমান ছিল।
অন্যদিকে, কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে হলবর্ন ও সেন্ট প্যানক্রাস আসনে দাঁড়িয়েছেন এ্যাণ্ড্রু ফেইনস্টাইন। তিনি লেবারের নেতাকে চ্যালেঞ্জ করার যোগ্যতা রাখেন। সেখানে আবার দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন রেসপেক্ট কাউন্সিলার বাঙালী ওয়েস ইসলাম। এই দুজনের মধ্যে ভোট ভাগাভাগির ফল হবে কিয়ার স্টারমারের নিশ্চিত বিজয়। গাজার গণহত্যা সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিশেবে যারা এবারের ভোটে দাঁড়াচ্ছেন তাদের সংখ্যা একটি আসনে একাধিক হলে তো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা সমর্থনকারী প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের বিজয়ই এক ধরনের নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। ভোট ভাগাভাগি করে রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টকে অন্যায়ের জবাব দেয়া যাবে না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- গাজার হত্যাযজ্ঞ আর আগ্রাসনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যালটযুদ্ধে জিতে যুদ্ধ-বিরোধী কঠোর বার্তা দেয়াই যদি সকল স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রকৃত লক্ষ্য হয় তাহলে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করে অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন না? ইয়ার্ডলী আসনে সেই আন্তরিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে ইতোমধ্যে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে অন্য সবাই তাদের প্রার্থীতা তুলে নিয়েছেন। ইতিহাস বলে, ভোটাররা বেশিরভাগ সময় হবু নেতাদের চেয়ে সচেতন এবং তারা বিবেচনা করেই ভোট প্রদান করেন। এবার জনগণের সেই বিবেচনা কার্যকর হয় কিনা তা দেখার জন্য আমাদের ৫ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
লণ্ডন, ৩ জুন ২০২৪।
লেখক: টাওয়ার হ্যামলেটস বারার প্রাক্তন কাউন্সিলার ও সাবেক ডেপুটি লিডার লেবার পার্টি।