সারওয়ার-ই আলম ♦
ব্রিটেনের অভিবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশীদেরকে নিয়ে লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের ভিডিও ক্লিপটি দেখে শুরুতে বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করিনি। মনে হয়েছে ‘ফেব্রিকেটেড’। বিরোধীদের কেউ হয়তো নির্বাচনের আগে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এরকম নিকৃষ্ট কাজটি করেছেন।
হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপে ভিডিও ক্লিপটি ভাসছে। আমার মত অনেকেই মনে করেছিলেন এটি ‘স্ক্যাম’। কিন্তু আজ এক্সে শেয়ার করা স্টারমারের বক্তব্য শুনে এবং এ বিষয়ে লেবার পার্টির ‘স্টেটমেণ্ট’ পড়ে অনেকের মত আমারও বিশ্বাস না করে আর কোনও উপায় ছিল না। নিজের কানকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, যেই লেবার পার্টির প্রতি বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটির এত দ্ব্যর্থহীন সমর্থন সেই লেবার পার্টির নেতা বাংলাদেশীদেরকে নিয়ে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করলেন। অবিশ্বাস্য! একেবারেই অবিশ্বাস্য! সমগ্র বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটি আজ লেবার নেতার এই মন্তব্যের প্রতিবাদে ফুঁসছে। কোনও আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন বাংলাদেশীর পক্ষে এই বক্তব্য মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কিছুতেই নয়!
প্রায় এক দশকেরও বেশী সময় ধরে লেবার পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আজ নিজেকে বড়ই অপমানিত ও অসহায় মনে হচ্ছে। প্রচণ্ড অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছি এই কারণে যে, এই দলটির জন্য নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে শত শত ঘণ্টা ব্যয় করেছি। দিনের পর দিন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে নক করেছি। প্রচণ্ড বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইস্টহ্যাম অল্টমোর স্কুলের সামনে লেবার মেয়র প্রার্থী স্যার রবিন ওয়েলস, লণ্ডন সিটি মেয়র প্রার্থী সাদিক খান, এমপি প্রার্থী স্টিফেন টিমসের জন্য ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেছি। শুধু কী ইস্টহ্যাম! ছুটে গেছি আশপাশের অন্য অনেক নির্বাচনী এলাকাতেও। একজন বাংলাদেশী হিসেবে যে আমি এত নিবেদিতপ্রাণ ছিলাম পছন্দের এই দলটির প্রতি, চোখের সামনে সে দলটি কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। যেন কিছুতেই চিনতে পারছি না। কিছুতেই মেলাতে পারছি না। নিজেকে বড়ই দলবিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে। যেই বাংলাদেশ আমার আত্মপরিচয়, যেই বাংলাদেশ অস্তিত্ব, যেই বাংলাদেশ আমার অহংকার, সে দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদেরকে নিয়ে আমার দলের শীর্ষ নেতার এরকম মন্তব্য সমগ্র কমিউনিটির গায়ে এক তীব্র চপেটাঘাতের সমান। একটি দেশকে এভাবে ‘সিঙ্গেল আউট’ করা চরম অন্যায়। সমগ্র বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটি আজ অপমানিত, লজ্জিত এবং প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত।
কিন্তু খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এমন গর্হিত বক্তব্য নিয়ে এখন পর্যন্ত লেবার নেতার কোনও দু:খ প্রকাশ নেই, কোনও অনুশোচনা নেই! তাঁর এই দু:খপ্রকাশ না করাটাই আমাকে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার মত অসংখ্য বাংলাদেশীকে দ্বিতীয় দফা আহত করেছে। অর্থাৎ তিনি যা বলেছেন বুঝে শুনেই বলেছেন। ভিডিও ক্লিপটি কোনও ‘ফেইক’ কিছু ছিল না!
দীর্ঘদিনের একজন সক্রিয় লেবার কর্মীর জন্য কমিউনিটিকে অপমানের এই কষ্ট মেনে নেয়া ভীষণ কঠিন। বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই যে বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটি এই অপমান চোখ বুঁজে মেনে নেবে। বাঙালি বীরের জাতি। তাদের কাছে তাদের আত্মমর্যাদা সবকিছুর উর্ধ্বে। আত্মমর্যাদা রক্ষা করার জন্য তারা জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। বাঙালির উনসত্তর, বায়ান্ন, একাত্তর ও নব্বইয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তাই প্রমাণ করে। লেবার নেতা তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে এরূপ অপমানজনক বক্তব্যের জন্য ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির কাছে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করলে বাংলাদেশী-ব্রিটিশ কমিউনিটি ঠিকই এই ন্যাক্কারজনক মন্তব্যের সমুচিত প্রতিবাদ জানাবে। তাদের প্রতিবাদের ভাষা নিশ্চিভাবেই প্রতিফলিত হবে আগামী ৪ঠা জুলাইয়ের নির্বাচনে!