গাজীউল হাসান খান ♦
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রাক-নির্বাচনকালীন জনমত জরিপকারী গণমাধ্যম কিংবা সংস্থার হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী এবার ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে রিপাবলিকানদলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা নির্বাচনী লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের মধ্যে ৪৩টিতে প্রাক-নির্বাচনকালীন জরিপে উভয়েই পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ করে জনপ্রিয় ভোট। আর বাদবাকি সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের (সুইং স্টেটস) কমবেশি ৭ শতাংশ ভোটই নির্ধারণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন। নিজেদের ভোট প্রদানের বেলায় যারা আগে থেকেই কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে, তারা সাধারণত দেখেশুনে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। সে কারণে আগে থেকেই চূড়ান্তভাবে ফলাফলের ব্যাপারে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
এটা গেল নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলের এক দিক। অন্যদিকে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো, বিরোধীদের ভাষায়, একগুঁয়ে মনোভাবাপন্ন প্রার্থী, যিনি নির্বাচনে যেকোনো ব্যবধানে হেরে গেলে ফলাফল মেনে নেবেন কি না? তা ছাড়া মিশিগান, জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া, আরিজোনা কিংবা নাভাডার মতো অঙ্গরাজ্যে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখলে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে পারেন। সেসব অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের সহায়ক বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে বলে বহুদিন যাবৎ বিরোধী ডেমোক্র্যাটসরা অভিযোগ করে আসছে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচন কেন্দ্র করে ফিলিস্তিন, ইউক্রেন এবং এমনকি গর্ভনিরোধ ইস্যুতেও বিভিন্ন রাজ্যের বিপুলসংখ্যক ভোটার স্পষ্টতই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে কূটনীতিসহ দু-একটি মানবাধিকার আন্দোলনসংক্রান্ত পেশায় দীর্ঘদিন কাজ করা এবং সরেজমিনে বেশ কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাছে থেকে দেখার ফলে আমার এ অভিজ্ঞতা জন্মেছে যে এখন আর যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবোধগতভাবে আগের অবস্থানে নেই।
অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদী বা কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সর্বজনীন নীতিমালা হারিয়ে যেতে বসেছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের কর্তৃত্ব কিংবা আধিপত্য ধরে রাখার জন্য নির্দ্বিধায় সব কিছু অগ্রাহ্য করে চলেছে। এর প্রমাণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনের গণহত্যামূলক সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা। দ্বিচারিতা এবং দ্বৈত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিসহ সর্বত্র দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অপকৌশলের সূচনা সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের (জুনিয়র) সময় হলেও পরিপূর্ণতা পেয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে, যা থেকে ডেমোক্র্যাটদলীয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও মুক্ত হতে পারেননি। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও কূটনীতিকে ষোলোকলায় পরিপূর্ণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অভিযোগ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক দলীয় রাজনীতিক কিংবা সমর্থকদের নয়, এ অভিযোগ এখন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রমনা সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষেরও। ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো প্রথাগত রাজনীতি থেকে আসেননি। তাঁর যেমন নেই কোনো প্রশাসনিক পূর্ব অভিজ্ঞতা, তেমনি নেই কোনো উচ্চশিক্ষা কিংবা উন্নত দর্শন। বলা হয়েছে, ট্রাম্পের আর কিছু না থাকুক, আছে সব কিছু অগ্রাহ্য করার এক দারুণ স্পর্ধা। সব কিছু নিজের ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী বদলে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ‘আমেরিকাই প্রথম এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদে’ বিশ্বাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে তাঁর কর্তৃত্ব কিংবা আধিপত্যবাদী ধ্যান-ধারণা বাস্তবায়িত করতে চান। তাঁর একগুঁয়েমি, গোঁয়ার্তুমি কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন নীতি-নৈতিকতা বিশ্বশান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুধু আমেরিকায়ই নয়, বিশ্বব্যাপী এক বিপর্যয়মূলক পরিস্থিতি ডেকে আনবে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। সে কারণেই প্রথাগত রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সিনেটর কমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত এবং অস্বস্তিবোধ করছেন। পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সমগ্র গণতন্ত্রমনা যুক্তরাষ্ট্রবাসী।
যুক্তরাষ্ট্র্যের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার ভোট দেবে ৬২ মিলিয়ন ভোটার। তাদের মধ্যে নারী এবং অপেক্ষাকৃতভাবে শিক্ষিত তরুণরা রয়েছে কমলা হ্যারিসের পক্ষে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নারীদের গর্ভনিরোধ, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমিয়ে আনা, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান উত্তেজনা কমিয়ে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করাই হ্যারিসের মূল উদ্দেশ্য। তার পাশাপাশি রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি অভিবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ করা, গর্ভনিরোধের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা, যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার মাধ্যমে নিজ দেশের মানুষের অবস্থার আমূল পরিবর্তন করাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্য। সব কিছুতেই তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ব’ নীতি অব্যাহত রয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অল্পশিক্ষিত, বেকার ও প্রকারান্তরে বর্ণবাদ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী নয় এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ আমেরিকানই এখন ট্রাম্পের শিবিরে ভিড় জমিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের ধারণা (ট্রাম্প সমর্থক), ট্রাম্প আবার ক্ষমতাসীন হলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আবার শীর্ষ অবস্থানে চলে যাবে। এবং অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ ঘটাতে পারবে না। ফলে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গসহ হিসপানিক কিংবা লাতিনোদের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। ট্রাম্প সমর্থকদের নির্বাচনকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে, তারা অভুক্ত ও কর্মহীন থেকে কেন অবৈধ অভিবাসীদের ভরণপোষণ করবে? কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রচুর নির্মাণকর্মীসহ পেশাজীবী মানুষ প্রয়োজন, যাদের অভাবে নির্মাণ, প্রকৌশল কিংবা সেবা খাতে প্রচণ্ড সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা আইন-শৃঙ্খলার ধার ধারে না। ফলে কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা এশীয়দের ওপর সশস্ত্র হামলা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে শক্তিশালী করার কোনো জোর দাবি তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে না। তাতে প্রাথমিক স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে অবৈধ অস্ত্রধারীরা গোলাবর্ষণ করে অসহায় ও নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করে চলে যায়। তার পাশাপাশি পাশবিক অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় নাগরিকদের ওপর। এর তেমন বিশেষ কোনো প্রতিকার নেই।
ট্রাম্প সমর্থকদের ভাষ্য হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, অবৈধ অভিবাসন বন্ধ হবে, গর্ভনিরোধের প্রতিকার হবে এবং রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশীয় অর্থনীতি ও বহির্বাণিজ্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে অবৈধ ও বেআইনি পন্থায় রিপাবলিকানরা এবং তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি আনতে চান, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে নীতি-আদর্শ কিংবা মূল্যবোধ বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি অনৈতিক, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও কর্তৃত্ববাদী অমানবিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাতে গণতন্ত্র, মানবিক মূল্যবোধ এবং আইনের শাসন বলতে কিছুই থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র পরিণত হয়ে উঠবে একটি আধিপত্যবাদী ও যুদ্ধবাজ জাতিতে, যারা মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ ও তাইওয়ানসহ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে প্রতিহিংসার বিষবাষ্প। অনেকের ধারণা, এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসের শেষ পর্যন্ত পরাজয় হলে সমগ্র বিশ্ব ক্রমে ক্রমে শোষণ, অপশাসন, সংঘাত-সংঘর্ষ এবং বৃহত্তর যুদ্ধ-বিগ্রহের দিকে এগোবে, যা বিশ্বকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করবে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলসহ বিশ্বে আরো দু-একটি দেশ সে অবস্থার জন্য অপেক্ষা করে বসে রয়েছে। তাদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি অলিখিত সখ্য ও মৈত্রীর সম্পর্ক রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না। বয়োবৃদ্ধ দুর্বল বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিরাট পরিবর্তনের সূচনা করতে সমর্থ হননি, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনসহ বিশ্বের দিকে দিকে। চীন-রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিরাজমান উত্তেজনা কিংবা সংকটের নিরসন ঘটাতে পারেননি বাইডেন। যার ফলে উদ্ভব ঘটেছে বৈশ্বিক দক্ষিণে ‘ব্রিকস’ নামক উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থাটির। এ অবস্থায় কোনোমতে ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে বাড়াবাড়ি করলে যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তিগত আধিপত্য কিংবা বাণিজ্যগতভাবে ডলারের প্রভাব প্রতিপত্তি অতিদ্রুত হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল কৃষ্ণগহ্বরে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো তাদের কার্যকারিতা হারাবে অতি দ্রুত।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পরিক্রমায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তার ব্যবধান কমে এসেছে মৃদু মন্থরগতিতে। বাস্তব অবস্থায় নির্বাচন করার কথা ছিল ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। কিন্তু বয়সজনিত বিভিন্ন জটিলতা এবং বিশেষ করে দুর্বলতার কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর দ্বিতীয় টার্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের হাতে ছেড়ে দেন। ফলে শেষের দিকে কমলা হ্যারিস তাঁর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থিতার প্রচার-প্রপাগান্ডার জন্য সময় পেয়েছেন মাত্র দুই মাস। অথচ তাঁর প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই সোচ্চার এবং সক্রিয় রয়েছেন। এ অবস্থায় কমলা হ্যারিসের বিশেষ ভরসাস্থল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নারীকুল এবং অপেক্ষাকৃত তরুণদের ভোট। ফিলিস্তিন ও ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের কারণে ডেমোক্রেটিকদলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষ করে আরব ও এশীয়দের সমর্থন হারিয়েছেন ব্যাপকভাবে। তা ছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক কিংবা লাতিনো ভোটারদের মধ্যেও বিশাল ফাটল ধরিয়েছেন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষশাসিত সমাজে কমলা হ্যারিস একজন দক্ষিণ এশীয় অশ্বেতাঙ্গ। তদুপরি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রবাসী আগে কখনো নির্বাচিত করেনি। সাবেক নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন তাঁর দলের একজন নারী প্রার্থীর জন্য সর্বান্তঃকরণে মাঠে নামবেন বলে ঘোষণা দিলেও সেভাবে কখনো নামতে পারেননি ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে। তবে শেষ পর্যন্ত মাঠে নেমেছিলেন এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন স্ত্রী মিশেল ওবামা। এ জনপ্রিয় দম্পতি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে জনমত গঠন করতে সমর্থ হয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমের বিভিন্ন সংবাদ বিশ্লেষকদের ধারণা। তাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কমলা হ্যারিসের স্বচ্ছ রাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ভোটাররা তাদের সব মানসিক বাধাবিপত্তি এবং সংস্কার কাটিয়ে কমলা হ্যারিসের মতো একজন শিক্ষিত, প্রাজ্ঞ, স্মার্ট ও কৌশলী নারী রাজনীতিককে ভোট দেওয়ার মতো সৎ সাহস ও অগ্রসরতার প্রমাণ দেবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। তদুপরি পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, মিশিগান, আরিজোনা কিংবা নেভাডার মতো দোদুল্যমান রাজ্যে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখলে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়ে দিতে পারেন। তা ছাড়া নির্বাচনে হেরে গেলে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিপ্রিয় নাগরিক ও বিশ্ববাসী যথেষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, সামরিক ও অসামরিক প্রযুক্তি ও প্রকৌশলগত কারণে বিশ্ববাসীর কাছে যেন একটি সর্বজনীন নির্বাচন। তাই সবাই চায় একটি শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা কিংবা অশান্তি চায় না। এখন সার্বিক পরিস্থিতি এবং ফলাফল কোন দিকে যায় সেটিই দেখার বিষয়।
ঢাকা, ০৪ নভেম্বর, ২০২৪
লেখক: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়াশিংটন দূতাবাসে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক মিনিস্টার (প্রেস ও তথ্য)