তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় অভিভাবকদের এখনই সচেতন হতে হবে
হালের তরুণ প্রজন্মের কাছে নেশাদ্রব্য ‘নাইট্রাস অক্সাইড’ যা ‘লাফিং গ্যাস’ নামে পরিচিত বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি এর সর্বনাশা পরিণতির নানা দিক বেরিয়ে এসেছে কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়।
বহুদিন থেকেই তরুণদের মধ্যে এই নেশাদ্রব্য সেবনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও এর পরিণাম সম্পর্কে অনেকেই অবগত ছিলেন না। গবেষণা বলছে, নাইট্রাস অক্সাইড (এন২০) ব্যবহারকারীরা সব পটভূমির হলেও মূলত তরুণ ও এশিয়ান পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আর ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বসবাসকারী এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটসে এর আশঙ্কাজনক মাত্রার ব্যবহার যেকারোরই চোখে পড়বে।
অথচ কুইনমেরি গবেষণা বলছে, নাইট্রাস অক্সাইড সেবনে মেরুদণ্ডের গুরুতর ও স্থায়ী ক্ষতি, যৌন সক্ষমতা হারানো এবং স্নায়ু বিকল হওয়ার মতো স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহারের ফলে ভিটামিন বি-১২ কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পক্ষাঘাত ও স্নায়ুর ক্ষতি হওয়ার মত গুরুতর ঝুঁকি তৈরী হতে পারে।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা যেসব তথ্য তুলে ধরেছেন তা যেকোন অভিভাবকের জন্যই উদ্বেগ-আতঙ্কজনক। লণ্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রিভেন্টিভ নিউরোলজির প্রফেসর এবং বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট অ্যালিস্টার নয়েস জানিয়েছেন, আগে রয়্যাল লণ্ডন হাসপাতালে যেখানে প্রতি ৯ দিনে নাইট্রাস অক্সাইড সম্পর্কিত স্নায়ুবিক ক্ষতির শিকার হওয়া মাত্র একজন ব্যক্তিকে তারা চিকিৎসা দিতেন সেখানে এখন প্রতি সপ্তাহে এধরণের ৫ ব্যক্তির ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই মাদক শুধু শারিরীক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতির কারণই হবে না। এটি কিছুদিনের মধ্যেই ক্লাস সি ড্রাগ হিশেবে তালিকাভূক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। তখন এই মাদক কারো কাছে পাওয়া গেলে তাকে কঠোর আইনী শাস্তিমূলক পরিণামও ভোগ করতে হবে।
এই মাদক সেবনের ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে?টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি সম্মিলিত উদ্যোগে কর্মশালার পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের টাউন হলে আয়োজিত এক কর্মশালায় বলা হয়েছে, প্রতিরোধমূলক এই কর্মশালা নাইট্রাস অক্সাইডের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবে।
এসব কর্মসূচীর আওতায় বারার স্কুলসমূহ, তরুণদের গ্রুপসমূহ এবং কমিউনিটির বিভিন্ন ভবনে কম বয়সীদের জন্য নাইট্রাস অক্সাইড সেবনের ঝুঁকির উপর প্রতিরোধমূলক কর্মশালার আয়োজন করা হবে যাতে টাওয়ার হ্যামলেটসের কিশোর-তরুণদের কাছে নাইট্রাস অক্সাইড (এনওএক্স/এন২০) যে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে এবং গুরুতর ও স্থায়ী অক্ষমতার কারণ হতে পারে- এই বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়।
তবে আমরা মনে করি, ‘লাফিং গ্যাস’ সেবনের সর্বনাশা পরিণতি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি না হলে শুধু আইনী ব্যবস্থা আর চিকিৎসা দিয়ে কাজ হবে না।
একবার অপরাধীর খাতায় নাম উঠে গেলে কিংবা এই নেশার ছোবলে পড়ে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসা খুবই মুশকিল হবে। তাই এই সমস্যা মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি পালন করতে হবে পিতামাতা এবং অভিভাবকদের। আর এজন্য নিজের উঠতি বয়েসী সন্তানের চলাফেরা এবং আচরণে পরিবর্তন খেয়াল রাখার পাশাপাশি নেশাদ্রব্য ‘নাইট্রাস অক্সাইড’ অর্থাৎ ‘লাফিং গ্যাস’-এর ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকেগুলো সম্পর্কে অভিভাবকদের জানা এবং সে অনুযায়ী সন্তানদের সাথে আলাপ করে বাড়িতেও সচেতনতা সৃষ্টির কাজটি এখনই শুরু করতে হবে।