আরএসভি সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনকে সুরক্ষিত করুন

“আরএসভি সংক্রমণের গুরুতর উপসর্গ থেকে সুরক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে টিকা নেওয়া এবং এটি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে।”

ডাঃ মোহিত মন্দিরাদত্তা
জিপি, ওয়েস্ট মিডল্যাণ্ডস

আরএসভি সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনকে সুরক্ষিত করুন

“আরএসভি আক্রান্ত হলে তা থেকে সব শিশু গুরুতর ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ে। গর্ভাবস্থায় আপনি আরএসভি টিকা নিলে তা আপনার শিশুকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করে।”

ডাঃ ওজি ইলোজু
জিপি, লণ্ডন

আরএসভি সংক্রমণ থেকে নিজেকে ও প্রিয়জনকে সুরক্ষিত করুন

“বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই তাদের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। তারা সহজেই এটিতে আক্রান্ত হতে পারেন এবং এক্ষেত্রে গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টির আশঙ্কাও বেশি থাকে।”

উত্তাল মার্চ

মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল ২০২৫

অন্যমত

স্মৃতিতে নুরুল হক মাস্টার সাহেব

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | অন্যমত

রাজনউদ্দিন জালাল

আমাদের ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনের মাসেই চিরবিদায় নিলেন শিক্ষক, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদ নুরুল হক (মাস্টার সাহেব)। আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করছি। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বাংলা ভাষার এই শিক্ষক, ঢাকার গাজীপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

নুরুল হক সাহেবের সাথে আমার পরিচয় ৭০ দশকের মাঝামাঝি। তখন আমি এক তরুণ যুবকর্মী এবং বাংলাদেশী ইয়থ মুভমেন্ট সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। আমরা বাংলা টাউনের অর্ন্তভুক্ত একই এলাকায় বাস করতাম। আমরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সভা সমিতিতে একই সাথে যোগ দিতাম। মাস্টার নুরুল হক সাহেব বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সস্ত্রীক (সহধর্মিনী আনোয়ারা হক) ব্রিটেনে পাড়ি জমান। 

স্কুল সফরে এসে নুরুল হকের সাথে তৎকালীন ইনার লণ্ডন এডুকেশন অথোরিটির ডিরেক্টর মি. কোলম্যান ও উইলিয়াম স্টাবস

তিনি সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় বসবাস শুরু করেন। তিনি বেঙ্গলি হাউজিং এ্যাকশন গ্রুপের এক সদস্য হিসাবে গৃহহীনদের আন্দোলনের অংশীদার এবং নিজে বাংলা টাউনের অন্তর্ভূক্ত জেলহ্যাম বিল্ডিংয়ে (হ্যানবারি স্ট্রিটে) একজন সক্রিয় ‘স্কোয়ার্টার’ হিশেবে হিসাবে বাস করতেন। পরে এক সময় এই এলাকায় নিজে বাড়ি কিনে নেন।  বিগত পঞ্চাশ বছর তিনি পূর্ব লণ্ডনের বাংলা টাউন নামক জনপদের স্থায়ী বাসিন্দা। এছাড়াও তিনি একজন সমাজকর্মী ছিলেন। এবং বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। 

নুরুল হক সাহেব কথা কম এবং কাজ বেশিতে বিশ্বাস করতেন। তাঁর নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন মর্যাদাশীল সামাজিক এবং শিক্ষা সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নুরুল হক সাহেবের বাংলাদেশে অর্জিত শিক্ষার গুণের পূর্ণ মূল্যায়ন হয়নি ব্রিটেনে। তাঁর ভাগ্য ছিল কিছুটা আমাদের অন্যান্য শিক্ষিত মানুষের মত। ব্রিটিশ এ্যাসটাবলিশমেন্ট বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্জনকে স্বীকৃতি দিত না তখনকার দিনে। তাই তিনি অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এদেশের মূলধারার অফিস-আদালতে কোন ধরণের চাকুরি আদায় করতে পারেননি।

আসলে নুরুল হক সাহেবের স্মৃতিচারণ করতে হলে তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা হক সম্বন্ধেও উল্লেখ করতে হয়। তারা দুজনের এমন যুগলবন্দী ছিল যে সব সময় একই সাথে চলাফেরা করতেন। তখনকার দিনে বাঙালি নারীদের সভা-সমিতিতে দেখা পাওয়া যেত না। এক্ষেত্রে অন্যতম ব্যতিক্রম ছিলেন আনোয়ারা হক। তিনি নিজে গড়ে তুলেছিলেন ‘বাঙালি নারী সমিতি’ এবং আমি মনে করি নুরুল হক সাহেবের সহযোগিতাও এই উদ্যোগে বিশেষ অবদান রাখে। এক পর্যায়ে নির্যাতিত বাঙালি মহিলাদের জন্য বাংলা টাউনের একটি ভবনে গড়ে তুলেছিলেন একটি আবাসিক আশ্রয় কেন্দ্র। আমি টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলার থাকাকালীন এই আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করি। বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসাবে বাংলা টাউনের হ্যানবারি স্ট্রিটস্থ মন্টিফিউরি সেন্টার আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক আড্ডাখানায় পরিণত হয়। এই ভবনে ছিল আমাদের শক্তিশালী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস (এফবিওয়াইও) আনএমপ্লয়মেন্ট আউটরিচ সংস্থা, পিওয়াইও ইয়ূথ ক্লাব ও সভা-সমিতির হল। নুরুল হক সাহেবও নিজে একটি ছোট্ট অফিস নিয়ে বসতেন এবং সেখান থেকেই তাঁর কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখেছিলেন। প্রায় প্রতিদিনই নিঃসন্তান নুরুল হক সাহেব ও আনোয়ারা হকের সাথে এই মন্টিফিউরি সেন্টারের কেন্টিনে দেখা হত।

সত্তরের দশকে আমাদের সমাজের কিছু সংখ্যক তথাকথিত শিক্ষিত পূর্ব লণ্ডনের বাঙালি বাসিন্দাদের অবহেলা করতেন এবং কোন ক্ষেত্রে তাদের ঘৃণাও প্রকাশ পেতো। এরা যারা ‘বাবু মেন্টালিটি-তে’ বিশ্বাসী ছিলেন- তারা মনে করতেন যে শ্রমজীবী মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখলে তাদের মানহানি হবে। তবে এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন যে, মাস্টার নুরুল হক সাহেব সাধারণ মানুষের সাথে থাকতে ভালোবাসতেন। তিনি কাউকে ছোট মনে করতেন না এবং শ্রমজীবী মানুষকে তিনি মর্যাদা দিতেন, তাদের শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর যখন নিজস্ব ঘর কেনার আর্থিক অবস্থান হয় তখন চাইলে তিনি ধনী কোন এলাকায় বাস করার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের সাধারণ মানুষের সাথেই তাঁর বসবাস অব্যাহত রাখেন। এর জন্য বাংলা টাউন এলাকার মানুষও তাকে উপযুক্ত মর্যাদা এবং সম্মান স্বীকৃতি দিয়েছেন।

বিগত পঞ্চাশ বছর তিনি পূর্ব লণ্ডনের বাংলা টাউন নামক জনপদের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি একজন নিবেদিত সমাজকর্মী ছিলেন। ছিলেন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। পূর্ব লণ্ডনের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- স্থানীয় লেবার পার্টি যখন বাঙালিদের সদস্যপদ দিত না, তখন সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ‘পিপলস এলায়েন্স অব ইস্ট লণ্ডন’ নামে একটি স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠন স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থিতা মনোনয়ন দেন এবং এদের অন্যতম নুরুল হক। মাস্টার সাহেব সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয়ী হন, সম্ভবত আশির দশকের গোড়ার দিকে। তিনিই সম্ভবত টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রথম নির্বাচিত স্বতন্ত্র বাঙালী কাউন্সিলার।

নুরুল হক সাহেবের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে তাঁর নিজের উদ্যোগে এবং বাংলা টাউনে অবস্থিত ইস্ট এ্যাণ্ড কমিউনিটি স্কুল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শত শত ছেলেমেয়ে বাংলা, আরবী এবং সাপ্লিমেন্টারি শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে। শিক্ষানুরাগী নুরুল হক সাহেব জীবনের শেষ পর্যায়ে তাঁর বাসস্থান গাজিপুরে (ঢাকা) তার স্ত্রীর নামে আনোয়ারা প্রাইমারি ও হাইস্কুল স্থাপন করেন। তাছাড়া তাঁর জন্মভূমি নোয়াখালীর সোনাগাজি গ্রামেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন।

ব্যক্তিগতভাবে নুরুল হক সাহেব একজন খাঁটি ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি ছিলেন সজ্জন ব্যক্তিত্ব এবং সদালাপী মানুষ। সব মিলিয়ে বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে পূর্ব লণ্ডনবাসী মানুষ তাদের একজন আপনজনকে হারাল। আমাদের সমাজে নুরুল হক সাহেবের অবদানের মূল্যায়ন প্রয়োজন।

লণ্ডন, ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
লেখক: টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি লীডার ও টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজের সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল

আরও পড়ুন

ড. ইউনূসের আরো স্থায়িত্বের প্রশ্নে কিছু কথা

ড. ইউনূসের আরো স্থায়িত্বের প্রশ্নে কিছু কথা

গাজীউল হাসান খান ♦ আজকাল কোনো রাজনৈতিক কথা বলা কিংবা লেখার ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়। কোনো ব্যাপারে বক্তা কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই একটি পক্ষ নির্ধারণের প্রবৃত্তি দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ বক্তা বা লেখক রাজনীতিগতভাবে কোন পক্ষের...

দেশ কারো একার নয়, দেশ সবার

গাজীউল হাসান খান ♦ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমাদের পূর্বপুরুষদের অর্থাৎ এই অঞ্চলের মানুষের হাজার বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে অবিভক্ত বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম হিসেবে আবির্ভূত হলেও এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে...

বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় বন্ধনে জড়ানো আবশ্যক

গাজীউল হাসান খান ♦ চীনের একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত তার নিজ জাতীয় স্বার্থে কাজ করা, কোনো তৃতীয় পক্ষের জন্য নয়। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কাজ দেশের স্বার্থে করেননি,...

নতুন দল গণজাগরণের নয়া অধ্যায় রচনা করুক

গাজীউল হাসান খান ♦ ছাত্র-জনতার বিপ্লব বা অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভে যাদের জন্ম, তাদের কাছে রাজনীতিগতভাবে নির্যাতিত কিংবা শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রত্যাশাটা একটু বেশি থাকাই স্বাভাবিক। গণ-আন্দোলন কিংবা বৃহত্তর অর্থে গণ-অভ্যুত্থানের আপসহীন প্রক্রিয়ায়, চরম আত্মত্যাগের মধ্য...

গাজা বিক্রির জন্য নয়

গাজা বিক্রির জন্য নয়

গাজীউল হাসান খান ♦ ‘শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই, আর সবই গেছে ঋণেবাবু বলিলেন, বুঝেছ উপেন, এ জমি লইব কিনে।’ আমার চেতনার ফেলে আসা অলিন্দে রবীন্দ্রনাথ বারবার ফিরে আসেন। জাগরূক হয়ে ওঠেন, যখন শুনি বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড...

আরও পড়ুন »

 

ড. ইউনূসের আরো স্থায়িত্বের প্রশ্নে কিছু কথা

ড. ইউনূসের আরো স্থায়িত্বের প্রশ্নে কিছু কথা

গাজীউল হাসান খান ♦ আজকাল কোনো রাজনৈতিক কথা বলা কিংবা লেখার ক্ষেত্রে বেশ কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে বলে মনে হয়। কোনো ব্যাপারে বক্তা কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই একটি পক্ষ নির্ধারণের প্রবৃত্তি দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ বক্তা বা লেখক রাজনীতিগতভাবে কোন পক্ষের...