আসছে ১৬ জুন রোববার ব্রিটেনের মুসলমানরা পালন করবেন এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করবেন মহান এ দিনটি। ইসলামের অনুসারীদের জন্য বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর একটি হচ্ছে এই ঈদুল আজহা। একে কোরবানীর ঈদ নামেও অভিহিত করা হয়। কোরবানীর ঈদের সাথে জড়িয়ে আছে ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের চতুর্থ পবিত্র হজ।
দৈহিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য হজ ফরজ করা হয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে অথচ হজ আদায় করেন না, তার জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। ঈদুল আযহা আনন্দের উদযাপনের পাশাপাশি ত্যাগের পরীক্ষাও বটে। বিশ্বভ্রাতৃত্ব উদযাপন মুসলিম বিশ্বে এক অবিস্মরণীয় মাত্রা যোগ করে এদিনটি। হজের অনেকগুলো আনুষ্ঠানিকতার একটি হচ্ছে কোরবানী। ইসলামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ত্যাগের উজ্জল নিদর্শন এর সাথে জড়িয়ে আছে। মহান আল্লাহর আদেশে তাঁরই সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানী দিতে তৈরি হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে প্রাণে রক্ষা করেও মহান আল্লাহ পিতাপুত্রের প্রশ্নাতীত আনুগত্য আর সমর্পণকে কবুল করেছিলেন। এটি ছিলো হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের জন্য যেমন তেমনই হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর জন্য তাকওয়ার পরীক্ষা। ত্যাগের সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন।
ঈদুল আজহার ত্যাগের আদর্শ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করাই আসল শিক্ষা। কিন্তু বাংলাদেশসহ নানা সমাজে এর বিপরীতটিই প্রবলভাবে জেঁকে বসেছে। ভোগ এবং অন্যের গ্রাস কেড়ে নেবার জন্য এহেন নিকৃষ্ট কাজ নেই যা ঘটছে না। সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারি সংস্থার কর্মকতাদের সীমাহীন দুর্নীতি, অপকর্ম এবং আচার-আচরণ সম্পর্কিত গণমাধ্যমে উঠে-আসা চিত্র বিচলিত করেছে সর্বমহলকে। সমাজের দরিদ্র মানুষেরা যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে পিষ্ট, উপার্জনহীন জীবনের ভারে দিশেহারা- সেই সময়টিতে চলছে একটি শ্রেণীর মানুষের এমন লোভ লালসাজাত কর্মকাণ্ড।
অথচ ঈদ শুধু আনন্দ উদযাপনের নয়, এটি আমাদের জন্য ত্যাগেরও পরীক্ষা। এবারও এমন এক সময়ে আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি যখন পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ বিশেষ করে ফিলিস্তিনিরা ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ফিলিস্তিনি স্বজনহারা, গৃহহারা। উদ্বাস্তু শিবিরে কাটছে তাদের মানবেতর জীবন। স্বজন হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে তাদের জীবনে ঈদের খুশি কেমন হবে আমরা জানি না। তবে আমরা নিশ্চিত জানি সেখানে প্রতিদিন হানা দেয় মানবতার বিপর্যয়। তাই শুধু কোরবানী দেওয়া আর হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। এখানেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের ইবাদতের শেষ নয়। খোদার কাছে এই আত্মসমর্পণ আর ত্যাগের চর্চা জীবনের বাকীদিনগুলোতেও অব্যাহত রাখতে হবে। মহান আল্লাহতায়লা সবাইকে সেই তাক্বওয়া অর্জনের তওফিক দিন।
গত আট মাসে এটি স্পষ্ট যে, ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এই ইসরায়েলী মিশনে দুনিয়ার ক্ষমতাশালীরা শরীক। তাই সাধারণ মানুষই পারেন বিপন্ন সময়ে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে। এই দুঃসময়ে আমাদের একটু বেশি করেই ফিলিস্তিনিদের পাশে সাধ্যানুযায়ী দাঁড়ানো উচিৎ।
আমাদের বিশ্বাস, ঈদুল আযহার দিনে পশু কুরবানির মাধ্যমে মনের পশুকে কুরবানিদানের সদিচ্ছা মানুষের সমাজে প্রতিফলিত হবে, ত্যাগের মহিমা বন্দিত হবে সর্বত্র। যদি ত্যাগের শিক্ষায় নিজেদের বিশুদ্ধ করে তোলা যায় তাহলে অন্যের হক নিয়ে কাড়াকাড়ি বন্ধ হবে। সবার জন্য এই ঈদ নিয়ে আসুক আনন্দ। ঈদ মোবারক।