ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের ‘পাকিস আউট’ স্লোগান দেওয়ার ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব সামাল দিতে নিজের ছুটি বাতিল করেছেন। এ পর্যন্ত এই সহিংসতায় জড়িত ৭৪১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ৩০২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার শুরু সাউথপোর্টে হলেও ছুরিকাঘাতে জড়িত আটক সন্দেহভাজনকে মুসলিম শরণার্থী হিসেবে অনলাইনে প্রচারের পর দেশব্যাপী শরণার্থী ও মুসলিম বিরোধী তৎপরতা বাড়তে থাকে। তারা এসাইলাম আবেদনকারীদের হোটেল এবং মসজিদ লক্ষ্য করে আক্রমণ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে, পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং লুটতরাজ করে। গত ১১ আগস্ট ইস্ট লণ্ডনের ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে ‘স্ট্যাণ্ড আপ টু রেসিজম’ সংগঠনের এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। ১৯৭৮ সালে এক ঘৃণ্য বর্ণবাদী হামলায় নিহত বাঙালী যুবককে খুন করে শ্বেতাঙ্গ দুর্বত্তরা। ওই সমাবেশে ঐতিহাসিক ক্যাবল স্ট্রীট ব্যাটল এবং ৭০ ও ৮০’র দশকে ব্রিকলেনের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইডিএল নেতার উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারী দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পূর্ব লণ্ডনে কখনো বর্ণবাদকে জায়গা দেওয়া হবে না। এখানে সব সময় সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এক কাতারে, ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি বজায় রেখে চলে।
ব্রিটিশ সাংবাদিক রেমোনা আলি বলেছেন, এমন দৃশ্য দেখেছি, যা আমার চেয়ে বয়স্কদের মধ্যে সত্তর ও আশির দশকের বর্ণবাদী হামলার অস্বস্তিকর স্মৃতি জাগিয়ে তুলবে। ফ্যাসিস্টরা অবশ্য একটি গঠনমূলক কাজ করেছে। তাদের বর্ণবাদ ও গুন্ডামি প্রতিরোধ করতে বিভিন্ন সম্প্রদায় একতাবদ্ধ হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে সদিচ্ছা ও সংহতি গড়ে উঠেছে। সাউথপোর্টে একটি মসজিদে হামলার পর তারা যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তাতে ঘটনাস্থল পরিষ্কার করতে রাস্তায় মানুষে নেমে পড়েছিল; লিভারপুলে, একজন ইমাম দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও স্থানীয় লাইব্রেরি মেরামতে সাহায্যের জন্য অল্প অল্প করে তহবিল গঠনের সূচনা করেছিলেন। এখন মানুষ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত হাতে লড়াই করতে ঐক্যবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভ করেছে। এরই মধ্য দিয়ে ব্রিটেনবাসী এই স্পষ্ট ও জোরালো বার্তা পাঠিয়েছে যে, এই দেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান নেই। আমরা রেমোনা আলির সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, যুক্তরাজ্যে আতঙ্কের মধ্যে এই গণসংহতি যে আশা জাগিয়েছে তাতে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আরো শক্তিশালী হবে।
তবে, বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে এই সমাজের বর্ণবাদ বিরোধী সুস্থ চিন্তার মূলধারার মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।