সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪ ১১:৩৩ অপরাহ্ণ | সম্পাদকীয়

মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর বাণিজ্য কবে বন্ধ হবে?

বাংলাদেশের হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের কমতি ছিলো না আগেও। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে বাংলাদেশে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর বাণিজ্য একেবারে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ছে। এই অরাজক পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দিনের পর দিন মানুষ মারার মতো অমার্জনীয় অপরাধ করেও এরা পার পেয়ে গেছে বলে কোনো অঘটন ঘটলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়না। তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের নজরদারীর দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের কাজ আর দায়িত্বটা কী? 

সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে সত্যিকার অর্থেই ভয়ানক এক অবস্থা বিরাজ করছে। গত ৩১শে ডিসেম্বর খতনার জন্য পাঁচ বছরের আয়ান আহমেদকে অ্যানেন্থেসিয়া দেয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। সাত দিন পর ছেলের লাশ নিয়ে ফিরেছেন মা-বাবা। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ ঘটনায় দেশ জুড়ে তোলপাড়ের মধ্যেই গত মঙ্গলবার জে এস মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়হাম তাহমিদ মারা গেছে। এক্ষেত্রেও অভিযোগ অ্যানেন্থেসিয়ায় অবহেলা। এর আগের দিন গত সোমবার ধানমণ্ডির একটি হাসপাতালে এন্ডোসকপি করতে গিয়ে ৩২ বছরের যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ঘটনায় রিপোর্ট না দেখে অ্যানেন্থেসিয়া দেয়ার অভিযোগ করেছে পরিবার। গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানোর পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ পাঁচ-ছয়জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে পথে তাকে ভান্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একটি প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পৃথিবীতে কত মানুষ নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজের প্রাণও দেয়। আর বাংলাদেশে চিকিৎসার নামে কী অবলীলায়?এক সাথে দুটি জীবন সংহার করে তথাকথিত চিকিৎসকরা। বাংলাদেশে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলেই খবর বের হয়, ঐ হাসপাতাল বা ক্লিনিক অবৈধ। বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি বা লাইসেন্স ছাড়াই চলছিল হাসপাতালটি। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার আগেই কেন এমন হাসপাতাল বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না বা তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না দীর্ঘদিনের এই প্রশ্নের কোনো সুরাহা নেই। সুন্নতে খতনার মতো সাধারণ সার্জারিতে সম্প্রতি দুই শিশুর করুণ মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশের পরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দুটি হাসপাতালই অনুমোদনহীনভাবে চলছিল।

নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দায়িত্ব নেয়ার পর অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন। মন্ত্রীর এমন নির্দেশ দেয়ার পরও একের পর এক ঘটনা সামনে আসছে। কারণ, বিষয়টি তো এখানেই শেষ হচ্ছে না। অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স থাকলেও তারা শর্ত মানছে না। অনেকের বার্ষিক লাইসেন্সও নবায়ন করা নেই। অথচ ঢাকায় ৪১৫টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। ময়মনসিংহে ২৫২টি। চট্টগ্রামে ২৪০টি, খুলনায় ১৫৬টি, রংপুরে ১১১টি, রাজশাহীতে ৫৫টি, বরিশালে ৪৮টি ও সিলেট বিভাগে ৮টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরা কী করে মরণ-বাণিজ্যে টিকে থাকে- এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা এখন সবচেয়ে জরুরী।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চিকিৎসা খাত লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুরতার খাতে পরিণত করছে বলে মন্তব্য করছেন।

আমরা এই নিষ্ঠুরতা বন্ধে অবিলম্বে সরকারের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ দেখতে চাই। 

আরও পড়ুন »

বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে হবে

ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের...

অভূতপূর্ব অবিস্মরণীয় এক বিপ্লব

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন খুবই জরুরী অভূতপূর্ব এক বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে। দেড় দশকের একক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিবর্তনের মূল কারিগর দেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে...

‘আসুন, ফিলিস্তিনীদের জন্য ‘ঈদ মোবারক’ পাঠাই

আসছে ১৬ জুন রোববার ব্রিটেনের মুসলমানরা পালন করবেন এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করবেন মহান এ দিনটি। ইসলামের অনুসারীদের জন্য বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর একটি হচ্ছে এই ঈদুল আজহা। একে কোরবানীর ঈদ নামেও...

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী, মুক্তি কত দূরে?

স্বাধীনতা অর্জন যত সহজ, রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন। কথাটা গুণীজনদের। উনিশ একাত্তর সালের ২৬ মার্চ সেই অমিত সাহস নিয়ে বাঙালি স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নেমেছিলো। সশস্ত্র সেই অসম যুদ্ধে জয়ও এসেছিলো।  যুগ যুগের অপশাসন ছিঁড়ে পরাধীন, উপনিবেশিত, অবদমিত এবং শোষিত...

একুশ মানে মাথা নত না-করা

আমরা কি করছি? এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের বাহাত্তর বছর পূর্ণ করলো। ১৯৫২ সালের পয়ত্রিশ মিনিট। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গৌরবজনক দিন-ক্ষণ। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যদুপুরের ১-১০ মিনিট থেকে ১-৪৫ মিনিট সময়টি এক অপরিমেয় শক্তিতে...

আরও পড়ুন »

 

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

গাজীউল হাসান খান ♦ আবদুল লতিফের কথা ও সুরে আমাদের প্রিয় একটি গান, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাঙলা, কারো দানে পাওয়া নয়।’ অপরাজেয় বাংলা বড় বেশি মূল্যের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই দেশ। এটি কারো দান বা দয়ায় পাওয়া নয়। সে কারণেই আমাদের ভালোবাসার এই দেশটি সম্পর্কে কেউ...

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

গাজীউল হাসান খান ♦ এই বিশাল দিগন্তের কোনো প্রান্তেই অকারণে মেঘ জমে ওঠে না। এর পেছনেও অনেক কার্যকারণ নিহিত থাকে। প্রায় এক বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি এক দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এর আগে গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব...

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

গাজীউল হাসান খান ♦ যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন...