সম্পাদকীয়

একুশ মানে মাথা নত না-করা

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৪ ১:০৩ পূর্বাহ্ণ | সম্পাদকীয়

আমরা কি করছি?

এবারের একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের বাহাত্তর বছর পূর্ণ করলো। ১৯৫২ সালের পয়ত্রিশ মিনিট। আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অত্যন্ত গৌরবজনক দিন-ক্ষণ। বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যদুপুরের ১-১০ মিনিট থেকে ১-৪৫ মিনিট সময়টি এক অপরিমেয় শক্তিতে ভবিষ্যতের কোন কালে দুনিয়া কাঁপাবে বলে কি কেউ জানতো সেদিন? আর কে জানতো ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি?’ গানটি কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে অমোঘ শক্তি হবে সংগ্রামের? কেউ কি জানতো, বিশ্বময় প্রতি বছর নিপীড়িত মানুষেরা গেয়ে ওঠবে নিজ নিজ ভাষা রক্ষার প্রেরণায়, অমরত্ব পাবে সে গান। সেটি কি জানতেন গানের লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী? শহীদ রফিক, বরকত আর শফিউরদের বুকের রক্তে নিপীড়কের বজ্রকঠিন দণ্ড আর দর্প ভেঙ্গে দেওয়ার গান গাইবে বিশ্ববাসী, অধিকার আদায় ও লড়াইয়ের মন্ত্রে দীক্ষিত হবেই মানুষ- কে জানতো? কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি প্রবল মমতা আর আত“মর্যাদায় বলিয়ান বাঙালী তরুণেরা জীবন দিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই বিশ্বাস ও চিরঞ্জীব চেতনার নাম আজ ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’। 

‘একুশ মানে মাথা নত না-করা’। এ বাণী এখন বিশ্ব-মানুষের আত্মসম্মান আর আত্মমর্যাদা প্রকাশের ভাষা। কী অপরূপ শক্তি এই বাক্যবন্ধে। পৃথিবীর সব নিপীড়িত মানুষ ভবিষ্যত মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলবে ‘একুশ মানে মাথা নত না-করা’ এই মন্ত্রে। বাঙালির প্রদর্শিত পথে, সংগ্রামের দীক্ষায়। কারণ, বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিনটির স্বীকৃতি এখন বিশ্বজুড়েই। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভের পর থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে সারা বিশ্বেই পালিত হয়।

একুশের ভাষা শহীদরা আমাদের কাঁধে যে অঙ্গীকার তুলে দিয়েছিলেন, বাহাত্তর বছর পর বাংলার এই বিশ্বায়নের পরও আমরা কি সে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? অথচ আমরা গর্বভরে উচ্চারণ করি, একুশের হাত ধরেই বাঙালি জাতিরাষ্ট্র একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। কিন্তু ঐতিহাসিক এই অর্জনের পর আমাদের অগ্রগতির মানদণ্ড কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা কি তলিয়ে দেখা হয়েছে গত বাহাত্তর বছরে? মাতৃভাষার ব্যবহারিক শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করার যে আলোকজ্জ্বল সুযোগ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পেয়েছিলাম, তা পরিচর্যা না-করে দিনে দিনে তার সংহার চলছে। আমাদের নিজস্ব শহীদ দিবসকে রেখে এখন আমরা একুশে ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনে অধিক উৎসাহী। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার আনন্দে বাঙালি ভুলেই গেছে যে আন্দোলনটি ছিল মূলত আমাদের রাষ্ট্রভাষার জন্য। এটি দুঃখজনক। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, আমরা বাংলাভাষাকে স্কুল পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কোন গুরুত্ব না দিয়ে ইংরেজীকে প্রাধান্য দিয়ে নিজ ভাষাকে দূরে ঠেলে চলেছি সজ্ঞানে। 

বাহাত্তর বছর আগের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অকুতোভয় বীর সন্তানরা নেমে এসেছিলেন রাজপথে।  আমরা নিজেরা সারা বছর মাতৃভাষাকে অনাদর-অবহেলা করে যাই। প্রদর্শনীর জন্য কোন ভবনের দেওয়ালে কিংবা কোনো স্থাপনায় বাংলা অক্ষরে আলোর ঝলকানি দেখে আমরা ক্ষণিকের উচ্ছাসে মাতি। অথচ সেই ভবনের ভেতরের বাংলা শিক্ষার আলো যখন নিভিয়ে দেয়া হয় অর্থাভাবের অজুহাতে তখন আমরা বিচলিত হইনা। অধিকার রক্ষার জন্য দাঁড়ানো তো দূরের কথা।

আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিৎ, আমরা কী করছি? শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে না দিয়ে আসুন আমরা সজাগ হই। মাতৃভাষার উন্নতিই একুশের শিক্ষা- এই বিশ্বাসে এবারের একুশে বিশ্বজুড়ে বাংলাভাষীদের সকল মনোযোগ জমা হোক।

সকল শহীদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, সংগ্রামীদের প্রতি অভিনন্দন ও ভালোবাসা।

আরও পড়ুন »

বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে হবে

ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের...

অভূতপূর্ব অবিস্মরণীয় এক বিপ্লব

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন খুবই জরুরী অভূতপূর্ব এক বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে। দেড় দশকের একক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিবর্তনের মূল কারিগর দেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে...

‘আসুন, ফিলিস্তিনীদের জন্য ‘ঈদ মোবারক’ পাঠাই

আসছে ১৬ জুন রোববার ব্রিটেনের মুসলমানরা পালন করবেন এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করবেন মহান এ দিনটি। ইসলামের অনুসারীদের জন্য বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর একটি হচ্ছে এই ঈদুল আজহা। একে কোরবানীর ঈদ নামেও...

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী, মুক্তি কত দূরে?

স্বাধীনতা অর্জন যত সহজ, রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন। কথাটা গুণীজনদের। উনিশ একাত্তর সালের ২৬ মার্চ সেই অমিত সাহস নিয়ে বাঙালি স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নেমেছিলো। সশস্ত্র সেই অসম যুদ্ধে জয়ও এসেছিলো।  যুগ যুগের অপশাসন ছিঁড়ে পরাধীন, উপনিবেশিত, অবদমিত এবং শোষিত...

বাংলাদেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক

মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর বাণিজ্য কবে বন্ধ হবে? বাংলাদেশের হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের কমতি ছিলো না আগেও। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে বাংলাদেশে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর...

আরও পড়ুন »

 

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

গাজীউল হাসান খান ♦ আবদুল লতিফের কথা ও সুরে আমাদের প্রিয় একটি গান, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাঙলা, কারো দানে পাওয়া নয়।’ অপরাজেয় বাংলা বড় বেশি মূল্যের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই দেশ। এটি কারো দান বা দয়ায় পাওয়া নয়। সে কারণেই আমাদের ভালোবাসার এই দেশটি সম্পর্কে কেউ...

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

গাজীউল হাসান খান ♦ এই বিশাল দিগন্তের কোনো প্রান্তেই অকারণে মেঘ জমে ওঠে না। এর পেছনেও অনেক কার্যকারণ নিহিত থাকে। প্রায় এক বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি এক দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এর আগে গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব...

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

গাজীউল হাসান খান ♦ যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন...