বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন খুবই জরুরী
অভূতপূর্ব এক বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে। দেড় দশকের একক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিবর্তনের মূল কারিগর দেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ইতিহাসে। সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা পুরো রাষ্ট্রকেই পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন। বহু ছাত্র জনতার প্রাণহানি ও রক্তের বিনিময়ে দেশে নতুন এক রাজনৈতিক ফায়সালা এসেছে। ১৫ বছর ধরে চলা প্রায় এক দলীয় শাসনের অবসান হয়েছে। চরম রাজনৈতিক বৈষম্যের অবসান হওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। দেশের আপামর মানুষের আশা-সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। আজকের এই দিনে আন্দোলন করে বিজয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিনন্দন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মাঠে থাকা রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট নাগরিক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষও প্রশংসাযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারাও সমানভাবে অভিনন্দন পাওয়ার দাবিদার। ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় এই বিজয়ের আগে গত কয়েক দিনে প্রায় চারশো মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। রক্তাক্ত আহত হয়েছে বহু মানুষ। জীবন গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও। রংপুরের আবু সাঈদ বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করে যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা দুনিয়ার ইতিহাসে লেখা থাকবে বহু শতাব্দি ধরে। আন্দোলনে একের পর এক প্রাণ হারিয়েছেন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নির্বিচার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুও।
পরিবর্তনের সময়ে জীবন দেয়া এই মানুষদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, তাদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশের ভাষা আমাদের জানা নেই। সোমবার অনেকটা ঝড়ের মতোই অনেক ঘটনা ঘটে গেলো। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পাশাপাশি দেশও ত্যাগ করেন। এরপর থেকে সারাদেশের সড়ক, অলি-গলি ছাত্র জনতার বিজয় উৎসবে মুখর। উৎসবের সঙ্গে পাওয়া গেছে নানা অঘটন আর প্রাণহানির খবর।
প্রশ্ন হলো আওয়ামী লীগ সভাপতির পদত্যাগের সঙ্গে দেশ ছাড়তে হলো কেনো? একদিন আগেও বল প্রয়োগ করে যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করা হলো হঠাৎ কেন তা ভেস্তে গেলো। অনেকে বলছেন, ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ২০২৪ সনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হলো। মানুষ কেন এই বিজয়কে স্বাধীনতার সঙ্গে তুলনা করছে? বলতে গেলে এর একমাত্র কারণ- আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের অপশাসন। দলটির একতান্ত্রিক মানসিকতা, বিরোধীদের ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা রাখার কৌশল, সীমাহীন লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে মানুষের জীবন যে বিষিয়ে উঠেছিল তার বড় প্রমাণ দেখা গেছে সড়কে সড়কে। গণভবন তন্ন তন্ন করে জিনিষপত্র নিয়ে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিজয়ী জনতার অবস্থানকে অনেকটা শ্রীলংকার জনবিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো বিজয় উৎসব চলছে। আবার কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। যা হওয়ার হয়েছে। আর যাতে একটি প্রাণও না ঝরে। এক বিন্দু রক্তও যাতে না পড়ে তা আমাদের সর্বাত্মকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। হাজার বছরের লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে কোনো কারণে নষ্ট না হয় তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আজকে সবাই একতাবদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে যে বিজয় এসেছে তা দীর্ঘস্থায়ী সফলতা ও দেশের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। প্রিয় মাতৃভুমির স্থিতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এই মুহূর্তে খুবই জরুরী।