লরা কুয়েন্সবার্গকে এবার কী জবাব দেবে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ও ব্যাপক অনিয়ম নতুন মাত্রা স্পর্শ করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে গত বুধবার গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে পুরো নির্বাচন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন নজির সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন।
কারণ এর আগে ভোট ডাকাতি ও জবরদস্তির দায়ে কোন উপনির্বাচন এভাবে বাতিল করেনি কোন নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজী হাবিবুল আউয়াল ভোট শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টা আগেই এই আসনের ভোট বাতিল করেন।
বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, নির্বাচনের সারাদিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে একতরফা প্রভাব বিস্তার ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারাও ইভিএমএ মেশিনে ভোট দিচ্ছেন!
বাংলাদেশে নির্বাচনকালে দলীয়, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মাস্তানদের দৌরাত্ম্যের নতুন কিছু নয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ডাকাতির উৎসবে শরিক হওয়ার ফুটেজ বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নতুন করে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করল।
ভোটের গোপন কক্ষে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগের পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ভোট কেড়ে নেয়ার গুরুতর অভিযোগ এনে বলছেন, নির্বাচন কমিশন থেকে টেলিফোন করে তাদেরকে ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করা হয়নি। তার মতে, এরাই দুর্বৃত্ত, এরাই ডাকাত।
এখন এই ডাকাত এবং ডাকাতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে কি ব্যবস্থা নেয়া হয় সেটি দেখার জন্য দেশের জনগণ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকরা গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন। কারণ বিগত মেয়াদের জাতীয় নির্বাচনে রাতের ভোটের দুঃস্বপ্নের পর আগামী বছর এই বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
মাস্তান পার্টির আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা এবং তাদের সমর্থকদের এই নজিরবিহীন ঘটনার জবাব বাংলাদেশের জনগণ পাবে কিনা, পেলে কীভাবে পাবে সে হিসাব এখনই করা দুষ্কর।
তবে মজার ব্যাপার, নজিরবিহীন এই ভোট বাতিলের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত একতরফা অভিহিত করে সিইসির শাস্তি দাবি করেছেন।
মাত্র চার সপ্তাহেরও কম সময়। লন্ডনে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে লরা কুয়েন্সবার্গকে দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগের আমলেই বাংলাদেশে ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন’ হয়। বিবিসির ওই সাংবাদিক আসছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কথা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে শেখ হাসিনা এই জবাব দিয়েছিলেন।
একটি সরকারের শীর্ষ ব্যক্তির কাছে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনের প্রতিশ্রুতি চেয়ে একজন বিদেশি সাংবাদিকের কাছ থেকে প্রশ্ন আসাটাই তো বিব্রতকর।
মাত্র চার সপ্তাহেরও কম ব্যবধানে ক্ষমতাসীনদের ভোট ডাকাতির কারণে গাইবান্ধার এই নির্বাচনী-কেলেঙ্কারি বিবিসির অজানা থাকবে না। গত নির্বাচনে কি হয়েছে তা-ও বিবিসির অজানা নয় নিশ্চয়।
এবার লরা কুয়েন্সবার্গ কিংবা অন্য কোন বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশনে’র দাবিদার ক্ষমতাসীনরা কী জবাব দেবেন?