এই দারিদ্র অবিশ্বাস্য! অপমানজনক
উন্নয়ন-জোয়ারে ভেসে যাওয়া আর হাজার কোটি টাকা বাজেটের বাংলাদেশের জন্য এক অবিশ্বাস্য দারিদ্রের দুঃসংবাদ। দেশটির জাতীয় দৈনিক মানবজমিনে গত ১৮ নভেম্বর (শুক্রবার) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এবারের প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের জন্য নির্ধারিত খাতা সরবরাহ করতে অক্ষম সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্তৃপক্ষ।?অর্থের অভাবই নাকি এর একমাত্র কারণ। বাংলাদেশের ৬৭ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আর মাত্র দিনকয়েক বাকী। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পরীক্ষা শুরুর কথা। এমনি পরিস্থিতিতে এক নির্দেশনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) বলেছে, কোনো অবস্থাতেই প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন গ্রহণ করা যাবে না। আর উত্তরপত্রের জন্য সাদা কাগজ শিক্ষার্থীদেরকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে হবে। এজন্য আগেভাগেই শিক্ষার্থীকে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলোকে। তাহলে কিভাবে দেয়া হবে প্রশ্নপত্র? বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের বোর্ডে প্রশ্নপত্র লিখে মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে প্রশ্নপত্র হাতে লিখে ফটোকপি করে শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র সরবরাহ করবে সংশ্লিষ্ট স্কুল। দুঃসংবাদ আরো আছে, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ শেষ পরীক্ষায় প্রতি শ্রেণিতে প্রতি বিষয়ে সর্বোচ্চ ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৬০ নম্বরের মধ্যে বার্ষিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, দেশটির আর্থিক সঙ্গতির অভাব শিশুদের অর্জিত জ্ঞান ও সক্ষমতার পরিমাপের পরিধিটাই ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এই নির্দেশনার পর এক অভিভাবক ফেইসবুকে কী লিখেছেন সেটিও তুলে ধরেছে মানবজমিন। ঐ অভিভাবক প্রশ্ন করেছেন, দেশের অবস্থা কী এতটাই খারাপ যে কর্তৃপক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন সরবরাহ করতে পারছে না। এই ক’টা টাকা বাঁচিয়ে দেশ কি উন্নয়নের শিখরে উঠবে? তারা কি একবারও ভাবছে না এই সিদ্ধান্তের ফলে শিশুদের মনে কতোটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক প্রধান শিক্ষকের মতে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনো অনেক শিশু আছে যাদের পরীক্ষার সময় কলম নিয়ে আসাটাই চ্যালেঞ্জ। সেখানে নিজের টাকায় কিনে সাদা খাতা নিয়ে আসতে সবাই পারবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ আরো অনেক ব্যক্তিবর্গ। গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, এভাবে প্রশ্ন দেয়ার মাধ্যমে যেসব শিক্ষক কোচিং বা টিউশনি বাণিজ্য করান তাদের জন্য সুবিধা হতে পারে। নৈতিকতাবোধ নষ্ট করে এসব শিক্ষক যে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দেবেন না আগেই তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এই বাচ্চাদের পরীক্ষা নিতে কতোটাই বা কাগজের প্রয়োজন হয়? এত ব্যয় করছি আমরা দেশে। কোনো একটা খাত থেকে সংকোচন করে শিক্ষার্থীদের কিছু ব্যবস্থা করা গেল না? তাঁর মতে, এই পরীক্ষার জন্য কতোটুকু বরাদ্দ লাগে তা সঠিকভাবে দেখা হলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতো না।
মাত্র কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি, দুই সচিবের বিলাসভবনের জন্য?গরীব জনগণের ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের খবর। সম্প্রতি কতিপয় অসাধু সরকারী কর্মকর্তার ‘ভার্চুয়াল’ সভার বিল বাবদ লাখ লাখ টাকার খবরে পরিকল্পনা মন্ত্রীর গোস্বার কথাও মিডিয়ায় এসেছে। এর আগেও তিনি ‘জুম মিটিংয়ে’ সিঙ্গারার বিল করার খবরেও ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। তাই এই ‘অসাধু’ এবং?‘উর্বর মস্তিষ্ক’ কর্মকর্তাদের লুটপাটের বলি যেনো দেশটির কোমলমতি শিক্ষার্থীরা না হয় সেজন্য সরকারের শীর্ষমহলের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারণ, দেশটির এমন দারিদ্র অবিশ্বাস্য! অপমানজনক।