শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত
ফরিদপুরে এক সংসদ সদস্যের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য?স্থানীয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনার খবর গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। ‘সাজেদাপুত্রকে সংবর্ধনা দিতে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত’ শিরোনামে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবুকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে?নগরকান্দা উপজেলা সদরের সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির শিক্ষার্থীদের দুটি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ তাদের দলের নতুন নির্বাচিত এমপির জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করে গত ৩০ নভেম্বর, বুধবার। ঐদিন বেলা দেড়টায় ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা দুটি হওয়ার কথা ছিল। প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন একই সঙ্গে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
পরীক্ষার মাত্র একদিন আগে মঙ্গলবার এক নোটিশে ‘অনিবার্য কারণ’ উল্লেখ করে পরীক্ষা স্থগিত করে পরের দিনই বৃহস্পতিবার পরীক্ষার নতুন তারিখ ঠিক করে সময়সূচি জানানো হয়। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হচ্ছে, ওই নোটিশে শুধু ‘প্রধান শিক্ষক’ লেখা ছিল। দায়িত্বশীল প্রধান শিক্ষকের নাম কিংবা স্বাক্ষর পর্যন্ত ছিল না। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের যে নৈরাজ্য আর স্বেচ্ছাচারিতার নমুনা কতটা বাড়-বাড়ন্ত এই ঘটনাটি তার একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো।
মন্ত্রী-এমপি যাবেন বলে বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে বঞ্চিত করে তীব্র রোদে ঘন্টার পর ঘন্টা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে?রাখার ঘটনা অতীতে ঘটেছে। কিছুদিন আগে খোদ রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠ কেড়ে নিয়ে পুলিশের জন্য?থানা নির্মাণের তৎপরতার কথাও আমাদের অজানা নয়। যদিও পরে ব্যাপক জন প্রতিক্রিয়া আর শিক্ষানুরাগীদের আন্দোলনে মুখে তা বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু এমপির সংবর্ধনার কারণে বিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাতিলের ঘটনা সত্যিকার অর্থেই অবিশ্বাস্য। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটতে পারলো এই প্রশ্নের সহজ জবাব বেলায়েত হোসেনের মতো দলবাজ আর দাসসুলভ মনোবৃত্তির ব্যক্তির ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছে। তিনি একজন প্রধান শিক্ষক হিশেবে রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী হলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিশেবে তাঁর জন্য এমপির জন্য সংবর্ধনার আয়োজনটাই অনিবার্য হয়ে ওঠেছে। কারণ, তিনি জনগণের অর্থে পালিত হলেও চাকুরী করেন দলের। অবশ্য সবকিছু দলবাজদের হাতে ন্যস্ত করলে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। দলের কাছে তখন কয়েকটি শিশু কোন ছার, দেশ-জাতি সমাজ সবই তাদের কাছে নস্যি।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির এই পরিবেশ আমাদের শিশুদের সামনে কী দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে, কী শিক্ষা দিচ্ছে? এই প্রধান শিক্ষক আবার লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে সাফাই দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বিদ্যালয় ও মাঠ পাশাপাশি অবস্থিত। চারপাশে মাইক ছিল। পরিবেশ না থাকায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তা ছাড়া এটি কোনো পাবলিক পরীক্ষা নয়, নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পরীক্ষা। আমরা পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখও জানিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষাগুলো শেষ করা যাবে। কোনো সমস্যা হবে না।’ একজন ব্যক্তি নৈতিকভাবে কতটুকু দেউলিয়া হলে এটি বলা সম্ভব? তাঁর কাছে প্রশ্ন, পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট করলোটা কে? এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিরাপদ দূরত্বে সরে গিয়েছেন। তিনি ‘এমনটি করতে হলে নির্ধারিত প্রক্রিয়া বিদ্যালয়টি অনুসরণ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব সাংবাদিকদের কাছে ঠেলে দিয়েছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা হয়েও তাঁর কেনো দায়িত্ব নেই! পরীক্ষা স্থগিত করার অনিবার্য কারণটি কি আমরা আদৌ জানতে পারবো?