সম্পাদকীয়

স্বাধীন দেশটির জনগণের মুক্তি কবে হবে?

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ২:২৯ অপরাহ্ণ | সম্পাদকীয়

এবারের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয়ের একান্ন বছর পূর্ণ হবে। সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয় এদিন ৯৩ হাজার পাকহানাদার বাহিনির আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে। এদিন, বিশ্বের মানচিত্র নতুনভাবে রচনা করেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর বাঙালি। বিশ্ববাসী বিস্ময়ের সাথে প্রত্যক্ষ করলো এক নতুন ইতিহাস। এই ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে আমাদের ত্রিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণদান ও তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। এই অসীম ত্যাগ ও বীরত্বগাথা বিশ্ব ইতিহাসের অংশ। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আকাঙক্ষা ছিল শোষণহীন প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থা, নিজস্ব স্বাধীন ভূখণ্ড, স্বশাসন, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে যাবার পরও আজ দেখা যাচ্ছে শুধু একটি ভূখণ্ড ও স্বশাসন ছাড়া কাঙিক্ষত প্রগতিশীল ও সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। স্বশাসন প্রতিষ্ঠা হলেও শান্তিপূর্ণ সুখী সমাজ সুদূর পরাহত রয়ে গেছে। দেশবাসী হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত, সাম্প্রদায়িকতার বিষবা? উৎপাটন সম্ভব হয়নি। পক্ষান্তরে নিরীহ জনগণ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থেকে দূরে, সমাজের দুর্বল, দরিদ্র ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি অন্যায়ের অবসান হয়নি। বরং?দিনে দিনে ক্ষমতার অপব্যহার, দাম্ভিকতার প্রসার, নারীর প্রতি অসম্মান আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়েও কেউ কেউ কটাক্ষ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। অথচ ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং ইজ্জত বলিদান করা মা-বোনের প্রতি সম্মান দেখানো তো দূরে কথা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য যেন সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি এমন, নারী সমাজ স্বাধীন দেশেও নিরাপদ নয়। 

রাষ্ট্র কাঠমোতেও ক্ষমাহীন ঘাটতি বিরাজমান। এ ঘাটতি শুধু হতাশারই জন্ম দিচ্ছেনা, বিশ্বাসহীনতার গহবরে জাতি ডুবতে বসেছে। স্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা চুরমার হয়েছে। এছাড়া বিচার ব্যবস্থার ভিত এতোই নড়বড়ে যে মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি প্রায় তিরোহিত, বিচারহীনতার বিশৃঙ্খল সংস্কৃতি এখন শকুন হয়ে মাথার ওপর ডানা মেলেছে। 

‘ভিন্নমত’ প্রকাশ তো বলতে গেলে এখন স্বপ্ন। ভয়ের সংস্কৃতি যেনো গলা টিপে ধরেছে সকল শুভবোধকে।  দেশজুড়ে ব্যাপক উন্নয়নের নানা ছবি ছাপিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অপশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশ ও জাতিকে প্রতিদিনই বিশ্ব দরবারে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এই বিচারে, বিজয়ের একান্ন বছরের হিসেব-নিকেশ মধুর নয় বরং বড় অপমানের, বড় দুশ্চিন্তার। 

ক্ষমতাসীন মহলের দাবী- দেশটির উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তর ঘটেছে, নানাক্ষেত্রে উন্নতির সূচক প্রতিবেশী অনেক দেশকে ছাড়িয়ে উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সমাজকে শোষণের নিগঢ়ে ঠেলে দিয়ে, ভিন্নমতকে রুদ্ধ করে এই উন্নয়ন কতটুকু কাঙিক্ষত কিংবা প্রয়োজনীয় দেশটির বাস্তব চিত্র যে অন্য কথা বলে তা অস্বীকারের সুযোগ কম। 

দেশটির বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের বিরল সময়ে আমরা দেখছি মন্ত্রীত্ব হারানো তথাকথিত সমাজপতি ব্যাপক অপরাধের বোঝা মাথায়?নিয়ে?নিজের দেশ থেকে পালিয়ে ভিন দেশে ছুটছেন। কিন্তু কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়েও তাঁর ঠাই হচ্ছে না কোথাও। দেশের অর্ধ ডজন বড় কর্তাকে আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছে সেই সময়ে। এটি বড় অপমানের বড় বেদনার, অমর্যাদার। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত কি নষ্টদের জন্য বৃথা যাবে? স্বাধীন দেশটির জনগণের মুক্তি কবে হবে?- এই প্রশ্নগুলো দেশটির বিজয়ের একান্ন বছরে পূর্ণ করার সময়ে?আরেকবার করা দরকার এর মর্যাদাবান সকল নাগরিকদের।  

আরও পড়ুন »

বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে হবে

ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের...

অভূতপূর্ব অবিস্মরণীয় এক বিপ্লব

বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্বশীল ভূমিকা এখন খুবই জরুরী অভূতপূর্ব এক বিপ্লব হয়ে গেলো দেশে। দেড় দশকের একক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এই পরিবর্তনের মূল কারিগর দেশের ছাত্র-জনতা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নজির সৃষ্টি করেছে...

‘আসুন, ফিলিস্তিনীদের জন্য ‘ঈদ মোবারক’ পাঠাই

আসছে ১৬ জুন রোববার ব্রিটেনের মুসলমানরা পালন করবেন এবারের পবিত্র ঈদুল আজহা। আর এক দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা উদযাপন করবেন মহান এ দিনটি। ইসলামের অনুসারীদের জন্য বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিনগুলোর একটি হচ্ছে এই ঈদুল আজহা। একে কোরবানীর ঈদ নামেও...

স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী, মুক্তি কত দূরে?

স্বাধীনতা অর্জন যত সহজ, রক্ষা করা তার চেয়ে বেশি কঠিন। কথাটা গুণীজনদের। উনিশ একাত্তর সালের ২৬ মার্চ সেই অমিত সাহস নিয়ে বাঙালি স্বপ্নের স্বাধীনতা অর্জনের পথে নেমেছিলো। সশস্ত্র সেই অসম যুদ্ধে জয়ও এসেছিলো।  যুগ যুগের অপশাসন ছিঁড়ে পরাধীন, উপনিবেশিত, অবদমিত এবং শোষিত...

বাংলাদেশে লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিক

মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর বাণিজ্য কবে বন্ধ হবে? বাংলাদেশের হাসপাতাল আর ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে রোগী ও সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের কমতি ছিলো না আগেও। কিন্তু সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার নামে বাংলাদেশে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর মানুষ মারার চরম নিষ্ঠুর...

আরও পড়ুন »

 

ট্রাম্পের ভাঁওতাবাজি এখন ঘাটে ঘাটে আটকে যাচ্ছে

গাজীউল হাসান খান ♦ নিয়তি বলে যে কথাটি প্রচলিত রয়েছে, রাজনীতির ক্ষেত্রে তা কতটুকু প্রভাব ফেলে, আমার জানা নেই। পশ্চিমা জগতের কট্টরবাদী রাজনীতিক, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্র পরিচালনায় এখন বহুমুখী অনভিপ্রেত চাপের মুখে নিয়তির খেলায় গা...

ইরান আক্রমণ নিয়ে ফাঁদে পড়েছেন ট্রাম্প

গাজীউল হাসান খান গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘দিশাহীন ও বেপরোয়া’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো গুরুতর ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত পাল্টাতে খুব বেশি সময় নেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে ট্রাম্প খুব ভেবেচিন্তে কোনো কথা বলেন না। তবে তিনি নিজেকে বিশ্বের...

কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান’ চ্যারিটির উদ্যোগে টাওয়ার হ্যামলেটসের হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান’ চ্যারিটির উদ্যোগে টাওয়ার হ্যামলেটসের হাজার বছরের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

হাসনাত চৌধুরী ♦ লণ্ডন, ২০ এপ্রিল: টাওয়ার হ্যামলেটসের অবস্থান ও এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে দুর্লভ শিল্পকর্মের এক বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। ‘কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান' চ্যারিটির উদ্যোগে লাইম হাউজের সেইন্ট অ্যান চার্চে এই প্রদর্শনীর...

ভবিষ্যতের সংঘাত ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন

গাজীউল হাসান খান ♦ পতিত হাসিনা সরকারের দীর্ঘ শাসনকালের একটা সময়ে, সম্ভবত শুরু থেকে মাঝামাঝি কোনো অবস্থায়, দেশের কোনো একটি গণমাধ্যমে একটি চমৎকার স্লোগান দেখতে পেতাম। সেটি হচ্ছে : ‘আপনি বদলে যান, সমাজ বদলে যাবে।’ চারিত্রিক দিক থেকে আমরা সবাই যদি পরিশুদ্ধ হতে পারি, তাহলে...