বাংলাদেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপির পুত্র সাফায়াত বিন জাকিরের (সৌরভ) বিবাহোত্তর বৌ-ভাতের দাওয়াতে হাজির হওয়ার জন্য গত রোববার (৮ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামের তিনটি উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিলো।
হতবাক করা এই সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের পুত্র সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বউভাতের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়ে সেই বন্ধ স্কুলগুলোর ১ হাজার ২৮০ জন শিক্ষক চাঁদা তুলে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও স্বর্ণালংকার সহযোগে দলে দলে ভোজবিলাসে যোগ দিয়েছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর- এই তিন উপজেলার ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জনপ্রতি বাধ্যতামূলক ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে এই ‘জবরদস্তি’ আতিথেয়তার জন্য। অথচ হাস্যকর এবং একই সাথে নির্লজ্জ মিথ্যাচার চলছে শিক্ষা কর্মকর্তাদের তরফে। তাদের দাবী- প্রতিমন্ত্রীর ছেলের বউভাতের সঙ্গে ২৬৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। অবশ্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম আরো অকাট্য যুক্তি হাজির করেছেন। তিনি দাবী করছেন, প্রচণ্ড শীত পড়ায় কোমলমতি শিশুদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের ক্ষমতায় একদিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করেছেন। এটি যে সত্যের কত বড় অপলাপ মাত্র সেটি বলা বাহুল্য।
কারণ, সংবাদমাধ্যমগুলোতে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেছেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই বউভাতে শিক্ষকদের ‘দাওয়াত’ দেওয়া হয়েছিল। দাওয়াত পেয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কুল বন্ধ করেছেন এবং প্রায় সব শিক্ষকের কাছ থেকে চাঁদা তুলে টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও সোনার গয়না নিয়ে রৌমারিতে গিয়ে দাওয়াত খেয়েছেন। আর এদিকে, স্কুল বন্ধ না জানায় অনেক শিশু শীতের মধ্যে স্কুলে এসে বাড়ী ফিরে গেছে। গত ৩০ নভেম্বর ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী ওরফে লাবুকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে নগরকান্দা উপজেলা সদরের সরকারি মহেন্দ্র নারায়ণ একাডেমির শিক্ষার্থীদের দুটি বিষয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা বলে কয়েক সপ্তাহ আগে মনে হলেও মন্ত্রীপুত্রের বউভাতের ‘জবরদস্তি’ আতিথেয়তায় ২৬৪ স্কুল বন্ধের ঘটনা তো বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের নৈরাজ্য আর স্বেচ্ছাচারিতার আর কর্তৃত্বপরায়ণতার সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলো।
আমরা জানি, এ ঘটনা নিয়ে জোর আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইবে। জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করবে কিছুদিন। কর্তাব্যাক্তিরা বিব্রত বিব্রত ভাব দেখাবেন। পরস্পরের প্রতি দোষারোপের প্রতিযোগিতা শুরু হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরংএই নবদম্পতির নতুন কোনো খোশখবরে পুরো এলাকাটাই বন্ধ ঘোষণা করা হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। জবরদস্তি দলীয় আনুগত্যের অন্যায্য পুরষ্কার প্রদানের কুফল এটি। এটি ক্ষমতান্ধদের দম্ভ। এই ঘটনা শিক্ষা এবং শিক্ষকের মর্যাদার প্রতি চুড়ান্ত অশ্রদ্ধা। জাতির সাথে তামাশা। তবে, ক্ষমতাসীনদের স্মরণ রাখা উচিৎ- এ ধরণের বিলাসিতা চিরস্থায়ী নয়। কারণ, ব্যবস্থার নিয়ম ভেঙ্গে ক্ষমতার ‘নিয়ম’ বড় হয়ে সভ্য সমাজে টিকে থাকতে পারে না।