হাজার বছরের পুরোনো রেওয়াজ মেনেই নজরকাড়া আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্রিটেনের রাজা হিসেবে অভিষেক হয়েছে তৃতীয় চার্লসের। গত শনিবার লণ্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে জাঁকজমকপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজা চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজমুকুট পরানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে গত ৭০ বছর পর এ রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠিত হলো। তাঁকে শপথ পাঠ করিয়ে?ক্যান্টারবারির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি তৃতীয় চার্লসের মাথায় রাজার মুকুট পরিয়ে দেন। রাজা চার্লসের মাথায় রাজমুকুট পরানোর পর পরই যুক্তরাজ্য জুড়ে তোপধ্বনি দিয়ে এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির ঘণ্টা দুই মিনিট ধরে “গড সেভ দ্য কিং” বাজিয়ে এই মূহুর্তটি উদযাপন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে যোগ দিতে বাকিংহাম প্রাসাদ এবং ট্রাফালগার স্কোয়ারের মাঝখানের প্রশস্ত সড়কটিকে সমবেত হন। এছাড়া রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানে বিশ্বের শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন। রাজা যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র-প্রধান। তবে তার ক্ষমতা প্রতীকী এবং আনুষ্ঠানিক। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন।
তবে রাজ্যাভিষেকের এই ব্যাপক আয়োজন আর উদ্দীপনার মাঝেও এর ব্যয় কিংবা রাজত্বের মেয়াদ নিয়েও প্রশ্ন জোরেশোরে উঠেছে। এটি ছিলো প্রথম কোনো রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান যা সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়। এ অনুষ্ঠান বিবিসি টেলিভিশনে দেখেছেন ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ। ব্রিটেনের জন্য একটি কঠিন অর্থনৈতিক সময়ে আয়োজিত এই অভিষেক অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ খরচই বহন করছে যুক্তরাজ্য সরকার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই খরচ ১০০ মিলিয়ন পাউণ্ড পর্যন্ত হিসাব করা হয়েছে। এর কিছু বাকিংহাম প্যালেসও দিলেও শেষ বিচারে অধিকাংশ খরচ ব্রিটিশ করদাতাদের পকেট থেকেই যাবে। ফলে এই আড়ম্বরপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠান অনেক ব্রিটিশ নাগরিককে অসন্তুষ্ট করেছে।
সিএনবিসি এক জরিপের বরাতে জানাচ্ছে, প্রায় ৫১ শতাংশ নাগরিক বলেছেন যে রাজ্যাভিষেকের জন্য সরকারের অর্থায়ন করা উচিত নয়। ব্রিটেনের পাশাপাশি সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ বা কমনওয়েলথভুক্ত আরও ১৪টি দেশ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, অ্যান্টিগুয়া অ্যাণ্ড বারবুডা, ব্রাহামাস, বেলিজ, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, সেন্ট কিটস অ্যাণ্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, টুভালু, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যাণ্ড গ্রেনাদাইনসের রাজারও আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিলেন চার্লস। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কত দিন চার্লস এসব দেশের রাজা বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকতে পারবেন? মায়ের মতো গ্রহণযোগ্যতা তাঁরও থাকবে নাকি একে একে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের আলংকারিক এই পদ ছাড়তে হবে একসময়ের ঔপনিবেশিক দেশটির রাজাকে?
এদিকে, খোদ যুক্তরাজ্যেই রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেকের সময়ে বিক্ষোভ করেছে রাজতন্ত্রবিরোধী সংগঠন রিপাবলিক। তাদরে দাবী নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান। বিক্ষোভকালে সর্বমোট ৫২ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেকের আগে রাজ-পরিবার সম্পর্কে জনগণের মনোভাব জানতে একটি জনমত সমীক্ষা পরিচালিত হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ রাজতন্ত্র অব্যাহত রাখার পক্ষে। তাদের সংখ্যা ৫৮ ভাগ। আর ২৬ ভাগ চায় নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত করা হোক। রাজপরিবারের প্রতি ব্রিটেনের বিভিন্ন বয়সের লোকজনের মনোভাব একেক রকমের। তাদের প্রতি বয়স্ক লোকজনের সমর্থন বেশি। তরুণ প্রজন্মের কাছে রাজপরিবারের সমর্থন তুলনামূলকভাবে কম। প্রতিবেশী ফ্রান্স, রাশিয়াসহ অনেক দেশের রাজতন্ত্র প্রায় বহু আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। সেসব দেশে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র এখনো এদেশের বেশিরভাগ মানুষের সমর্থন আর ভক্তির জোরে টিকে আছে।