শারমিনাও বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান। শামীমা বেগমের বন্ধু ছিলেন।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শারমিনা হঠাৎ নিখোঁজ হন। এর দুই মাস পর শামীমা ও অন্য দুই বন্ধু নিখোঁজ হন।
‘শামীমা ব্যর্থ ও অবিশ্বাসী নারী। তিনি আইএসে যোগ দেওয়া নারীদের ভাবমূর্তি চূর্ণ করে দিয়েছেন।’- শারমিনা বেগম
‘আমার মনে হয় শারমিনা এখনো ধর্মান্ধ। আমি বলব সে-ও আইএসএসের শিকার।’ – শামীমা বেগম
পত্রিকা ডেস্ক
লন্ডন, ২৭ মার্চ: ‘আইএস-বধূ’ হিসেবে পরিচিত শামীমা বেগমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শারমিনা বেগম সিরিয়ার একটি বন্দিশিবির থেকে পালিয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শারমিনাকে খুঁজে পেয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। পরে শামীমা ও শারমিনা-দুজনের সঙ্গেই কথা বলেছেন বিবিসি। শামীমা বিবিসিকে বলেছেন, শারমিনাই তাঁকে আইএসে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। আর শারমিনা বলেছেন, শামীমার সঙ্গে এখন তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, বন্ধুত্বও নেই। তিনি শামীমাকে অবিশ্বাসী বলেও তিরস্কার করেছেন।
শারমিনা লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন একাডেমিতে শামীমার সহপাঠী ছিলেন। তিনিও বাংলাদেশি পরিবারের সন্তান। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএসে) যোগ দিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শারমিনা হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন। এর দুই মাস পর শামীমা ও তাঁর অন্য দুই বন্ধুও নিখোঁজ হন।
শামীমা সিরিয়ায় আইএসের এক যোদ্ধাকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু কেউ বেঁচে নেই। আইএসের পতনের পর ২০১৯ সালে শামীমাকে সিরিয়ার একটি বন্দিশিবিরে পাওয়া যায়। পরে তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়।
শারমিনা সম্প্রতি সিরিয়ার একটি বন্দিশিবির থেকে পালান। আইএসের পতনের পর গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী ও শিশুদের এ শিবিরে রাখা হয়েছে। পালালেও শারমিনা এখনো সিরিয়ায় আছেন। তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে নানা জায়গায় লুকিয়ে থাকছেন। আইএসের সদস্যদের জন্য অনলাইনে তহবিল সংগ্রহ করছেন। সিরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের একজন সেনা কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, এ অর্থ হয়তো আইএসকে আবারও পুনর্গঠিত হতে সহায়তা করবে।
শারমিনাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেয়ে বিবিসির একজন সাংবাদিক তাঁর সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেন। ওই সাংবাদিক শারমিনার কাছে নিজেকে আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে তুলে ধরেন। তখন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন শারমিনা।
বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে শারমিনা দাবি করেন, তাঁর একসময়ের বন্ধু (শামীমা) আইএসের জন্য তেমন কোনো অবদান রাখেননি। তিনি বলেন, ‘শামীমা সিরিয়ায় এসেছিলেন কেবল তাঁর বন্ধুদের অনুসরণ করে, যা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্দশা ডেকে আনে।’
শামীমা বেগম হিসবায় (আইএসের গঠিত ধর্মীয় পুলিশ) কাজ করতেন এবং আত্মঘাতী বে? তৈরি করতেন-এমন ধারণা করা হলেও এ বিষয়ে শারমিনা বলেছেন, এ ধারণাগুলো ভুল। তিনি বলেন, শামীমা তাঁর স্বামী বাড়ির বাইরে না থাকলে ঘর থেকে বের হতেন না। কারণ, স্বামী তাঁকে বাইরে যেতে দিতেন না। শারমিনা বলেন, ‘শামীমা ব্যর্থ ও অবিশ্বাসী নারী। শামীমা আইএসে যোগ দেওয়া নারীদের ভাবমূর্তি চূর্ণ করে দিয়েছেন।’
আইএসে যোগদানের জন্য তিনি অনুতপ্ত কি না, জানতে চাইলে শারমিনা বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যে ফেরার চেয়ে কারাগারে থাকাকে শ্রেয় মনে করেন।
বিবিসি অনুসন্ধান করে দেখেছে, লুকিয়ে থাকা অবস্থায়ও শারমিনা বেগম আইএসের জন্য তহবিল সংগ্রহ করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বন্দিশিবিরের অবস্থা তুলে ধরে সহায়তার নামে বিটকয়েন চান। তিনি প্রায় সারা বিশ্বে তাঁর অনুসারী তৈরি করেছেন। মূলত তাঁদের কাছে তিনি এ বন্দিশিবিরে থাকা নারীদের জন্য নগদ অর্থসহায়তা চান।তবে এখন পর্যন্ত তিনি কত অর্থ সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁর একটি অ্যাকাউন্টে ২৯ বার অর্থ লেনদেন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সেই অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার ডলার আছে। তিনি আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন।
শারমিনার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন? জবাবে বলেছিলেন, গরিব নারী ও শিশুদের জন্য খাবার ও বস্ত্র জোগাতে এটা করছেন তিনি।
আর শামীমা বিবিসিকে বলেন, সিরিয়ায় যেতে তাঁর একসময়ের এই বন্ধু (শারমিনা) অনেক বড় অবদান রেখেছিলেন। ‘আমাকে বোঝানো হয়েছিল, এটা (আইএসের কর্মকাণ্ড) করা ঠিক। আমি কোথায় যাচ্ছি এবং আমি কী করব-সে বিষয়েও মিথ্যা বলে আমাকে প্রভাবিত করা হয়েছে। আমার মনে হয় শারমিনা এখনো ধর্মান্ধ। আমি বলব সে-ও আইএসএসের শিকার।’
২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে ব্রিটিশ এক সাংবাদিক সিরিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে এই শামীমার সাক্ষাৎ পান। তখন শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান। এখন শামীমা সিরিয়ার একটি শরণার্থীশিবিরে রয়েছেন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তখন বলেছিলেন, তিনি সমাজের কাজে আসতে পারেন। ওই শিবিরে থেকে তাঁর জীবন নষ্ট হচ্ছে।
শারমিনা যে বন্দিশিবির থেকে পালিয়েছেন, সিরিয়ায় সেই বন্দিশিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল নেওরোজ আহমেদ বলেন, আইএস পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে এবং অর্থ আসছে। এ অর্থ অস্ত্র কেনার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। শিবির থেকে পালানো বা হামলার পরিকল্পনায় ব্যয় হতে পারে সেই অর্থ।
জেনারেল নেওরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি শিবিরে দেখি, সেখানে অনেক ছোট ছোট শিশু। এই শিশুদের মনে হত্যার আদর্শ গেঁথে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, এই শিবিরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজন তাদের হত্যার লক্ষ্যবস্তু।
সিরিয়ার এই বন্দিশিবিরটিতে ৫৭টি দেশের ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ আছে। এখানকার রক্ষীরা বলেন, তারা গ্রেনেড, বন্দুক এবং বিস্ফোরক-বে? পেয়েছেন, যা শিবিরে পাচার করা হয়েছিল। গত ছয় মাসে এখানে ৫০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন।