হতাশার বিপরীতে আশাই হোক আগামীর পাথেয়
আগামী শুক্রবার ১৪ এপ্রিল বাংলা নব বর্ষ ১৪৩০ সাল। বিশ্বে বহু দেশে বহু জাতির নিজস্ব সাল গণনা রয়েছে। বাঙালিরও সেরকম বাংলা বর্ষ। তবে, বাংলা বর্ষের মত আধুনিক বর্ষ গণনা খুবই কম।
মানুষের জীবনযাপনকে কেন্দ্র করে বাংলা বর্ষ বা সাল চালু করেন মোগল সম্রাট মহামতি আকবর। বহুজাতিক ভারতবর্ষের সমগ্র মানুষকে একটি ঐক্যবদ্ধ চিন্তাচেতনায় নিয়ে আসার দর্শন থেকে এ বাংলা সালের শুরু। বৈশাখ মাসকে ধরা হয় প্রথম মাস। এ মাসেই ফসল কাটা হয়, নতুন ফসল তোলা হয় ঘরে। নতুন ফসলের গন্ধে মানুষের জীবনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। আর নতুন ফসল পাওয়ার পর খাজনা পরিশোধটাও হয় সহজ। সম্রাট আকবর এটাকে ফসলী সাল হিসাবে প্রবর্তন করেন এবং যার দ্রুত বিকাশ ঘটে। হিজরী সালের চান্দ্রমাসের অনুসরণ করে সূর্য মাস প্রবর্তন করার মধ্যদিয়েই বাংলা সনের প্রচলন। যা মানুষের জীবনজীবিকার সাথে মিল রেখে প্রবর্তন করা একটি আধুনিক ধ্যানধারণার সূচনা। প্রাচীনকাল থেকে এদিন ব্যবসায়ীদের হালখাতার নিকাশ করার রীতি চালু হয়ে আসছে। পুরোনো লেনদেন শেষ করা বা নিকাশের মাধ্যমে নতুন খাতা চালুর রীতি আজ অবধি ব্যবসায়ীদের জন্য উৎসবের। গত বছরের লেনদেন চুকিয়ে নতুন বছরের শুরু তো উভয় পক্ষেরই স্বস্তির ও আনন্দের। একইভাবে ছিল খাজনা প্রদানের উত্তম সময় নববর্ষ শুরুর আগে চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র সংক্রান্তি আর ১লা বৈশাখ নববর্ষ দুটি পাশাপাশি পুরাতনকে মুছে ফেলা ও নতুনকে স্বাগত জানানো ও জীবন উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখন আর খাজনা প্রদানের জন্য যদিও সালকে ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু জীবনকে আবর্তিত করার একটি আনন্দময় নববর্ষ উতসব।
আগের দিনের হালখাতা এখনো চালু আছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এদিনে দোকানকে সাজিয়ে তোলা, মেহমানকে মিষ্টিমুখ করা এবং নতুন পোশাক পরাও নববর্ষের অন্যতম অঙ্গ। এদিকে দিনে দিনে সাংস্কৃতিক রূপ পেয়েছে নববর্ষের নানা আয়োজন। ভোরবেলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে নগর, গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় শুরু হয় এসো হে বৈশাখ, এসো এসো গানের মাধ্যমে নববর্ষকে আলিঙ্গন। নববর্ষ উদযাপন বর্তমানে জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে জাতিবিকাশের পথ ধরে। আমরা বাঙালিরা এখন স্বাধীন দেশ ও জাতি হিসাবে আধুনিক বিশ্বে উঁচু শির নিয়ে অবস্থান করছি। ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য ছড়িয়ে দিতে বাংলা নববর্ষ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন একটি মানবিক বর্ষ হিসাবে বিদ্যমান। কিন্তু এতো ভালো ভালো চিন্তা-চেতনার অম্লান মানবিকতার চারণভূমি বাংলাদেশের মানুষ কি শান্তিতে আছে, আছে কি সুখে?
দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসুস্থ প্রতিযোগিতা নববর্ষের আনন্দকে ম্লান করার মধ্য দিয়ে মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে বিপন্ন। জীবনজীবিকার সাথে সঙ্গতি নেই উপার্জনের, আয়ের। কে ধরবে এই দুঃসহ বেপোরোয়া ঘোড়ার লাগাম টেনে? লুটপাট এখন হয়েছে যেন নিয়তি! এতোসবের পরও জীর্ণ-পুরাতন সবকিছু পিছে ফেলে নতুন আশা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে আবার আসুক পয়লা বৈশাখ। নতুন বছরে বাঙালীর জীবন শুরু হোক নতুন আশা নিয়ে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন প্রত্যয় নিয়ে। ফেলে আসা দিনগুলোর ব্যর্থতা ও হতাশার বিপরীতে সাফল্য অর্জনের নতুন প্রেরণা ও সংকল্প নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নতুন অধ্যায় হোক শুরু। সকল অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসুক আমাদের পহেলা বৈশাখ।
জয় হউক বাংলা নববর্ষের। জয় হউক মানুষের। সবাইকে ১৪৩০ বঙ্গাব্দের আন্তরিক শুভেচ্ছা।