পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ১৭ এপ্রিল: ইংল্যাণ্ডে চালু হচ্ছে ভোটারদের বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র প্রদর্শণের নিয়ম। আগামী ৪ মে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার (কাউন্সিল) নির্বাচনে প্রথমবারের মত এ নিয়ম কার্যকর হবে। এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হলে ভোটারদের অবশ্যই গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্র (আইডি) প্রদর্শণ করে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
এতদিন ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কেবল নাম-ঠিকানা বলেই ভোট দিতে পারতেন। নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর ভোটারদের পরিচয় যাচাইয়ের পুরনো পদ্ধতির অবসান হচ্ছে। এখন থেকে ইংল্যাণ্ডের যে কোনো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারদের গ্রহণযোগ্য পরিচপত্র দেখিয়ে তারপর ব্যালট সংগ্রহ করতে হবে। ৪ মে ইংল্যাণ্ডের মোট ২৩০ টি কাউন্সিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৮ হাজারের বেশি কাউন্সির পদের জন্য লড়াই হবে। পাশাপাশি বেডফোর্ড, লেস্টার, ম্যান্সফিলড এবং মিডলসবারা কাউন্সিলে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হবেন। ভোট প্রদানের জন পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্রæ ব্যাজসহ মোট ২২ ধরনের আইডি গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে ভোটার আইডির প্রয়োজন হবে না। ইংল্যাণ্ডে ৪ মে অনুষ্ঠেয় কাউন্সিল নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার নিবন্ধন আবেদন শেষ হয়েছে ১৭ এপ্রিল। আর পোস্টাল ব্যালট আবেদন শেষ হচ্ছে ১৮ এপ্রিল। প্রথমবারের মত চালু হওয়া এই নিয়ম কার্যকর করতে গিয়ে আগামী ৪ মের নির্বাচনে কাউন্সিলগুলো বিশৃৃখল পরিস্থিতির শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা, বহু ভোটার এখনও নতুন নিয়মটি সম্পর্কে জানে না। আবার প্রত্যোক ভোটারের পরিচয়পত্র যাচাই করে ব্যালট প্রদানে বাড়তি সময় ব্যয় হবে। তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, নতুন নিয়ম কার্যকর করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাউন্সিলগুলোকে প্রস্তুত করে তুলতে কমিশন বড় ধরণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, ভোট প্রদানের এ পরিবর্তন অপ্রোজনীয় এবং এ নিয়ম ভোটপ্রদানকে কঠিন করে তোলার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ক্ষতি করবে। তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, যদিও যুক্তরাজ্যে বড় ধরণের কোনো ভোট জালিয়াতির প্রমাণ নেই; তারপরও পরিচয়পত্র যাচাইয়ের নিয়মটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল থেকে ইংল্যাণ্ডে ভোট জালিয়াতির দায়ে ৯ জন দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আরও ৬ জন কে পুলিশ সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছে। স্থানীয় সরকারগুলোর প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন দ্য লোকাল গভার্নমেন্ট এসোসিয়েশন (এলজিএ) বলছে, কাউন্সিলগুলোর ওপর ভোটার পরিচয়পত্র যাচাইয়ের ধকলকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এলজিএ-এর মূখপাত্র কেভিন বেন্টলি বলেন, নির্বাচনের কর্মীরা ভোটার পরিচয়পত্র যাচাই এবং এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের চাপ মোকাবেলায় শৃৃখলা ধরে রাখতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে কাউন্সিলগুলোর উদ্বেগ রয়েছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, পরিচয়পত্র আনেনি এমন ভোটারদের কাছ থেকে পোলিং স্টেশন কর্মীরা আক্রমণ বা অন্যায় আচরণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ৪ মের নির্বাচনে ভোটার পরিচয়পত্র নিয়ে বড় ধরণের কোনো ঝামেলা হলে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে এ নিয়ম বাতিলের দাবি উঠার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেননি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের এক জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া ভোটারদের এক চতুর্থাংশ ভোট দিতে পরিচয়পত্র প্রদর্শণ বাধ্যতামূলক হওয়ার বিষয়টি জানেন না। নির্বাচন কমিশনের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক (কমিউনিকেশন্স ডাইরেক্টর) ক্রেইগ ওয়েস্টউড বলেন, ভোটাররা সাধারণত আগ থেকে ভোট নিয়ে মাথা ঘামান না। ভোটের ঠিক আগে আগে তারা ভোটার নিবন্ধন ও ভোট নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। নতুন নিয়ম সম্পর্কে সচেতন করতে কমিশন চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিশেষ প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছে বলে জানান তিনি। এর ফলে নতুন নিয়ম সম্পর্কে ভোটার সচেতনতা ইতিমধ্যে ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৬ শতাংশ হয়েছে। যাদের গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্র নেই তাদের জন্য ভোটার অথোরিটি সার্টিফিকেট প্রদানের নিয়ম চালু করা হয়েছে। নিজ নিজ কাউন্সিলে আবেদন করে ভোটাররা এই সার্টিফিকেট নিতে পারবেন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ভোটার অথোরিটি সার্টিফিকেটের আবেদন করা যাবে। তবে বিবিসির সাম্প্রতিক এক খবরে বলা হয়েছে- এই প্রকল্প চালুর পর থেকে মাত্র ৬০ হাজার ৩৬৮ জন ভোটার অথোরিটি সার্টিফিকেটের আবেদন করেছেন। আগামী ১৮ মে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ১১টি কাউন্সিলের নির্বাচন হবে। সেখানে ভোটারদের পরিচয়পত্র পদর্শণের নিয়মটি আগে থেকেই বলবদ রয়েছে।