পত্রিকা ডেস্ক♦
লণ্ডন, ২৯ মে: যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরিবার (ডিপেনডেন্ট বা স্বজন) নিয়ে?আসার ক্ষেত্রে নতুন কড়াকড়ি আরোপ করেছে হোম অফিস। গত সপ্তাহে হোম অফিসের ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ডিপেনডেন্ট হিসেবে নিজেদের স্ত্রী/স্বামী/সন্তানকে আর যুক্তরাজ্যে আনতে পারবেন না। আগামী জানুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সরকার। দেশটিতে আগত অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে
২০২২ সালে ৬ লাখের বেশি অভিবাসীর আগমন
এ সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী যারা ডিপ্লোমা, ফাউণ্ডেশন বা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোর্স করতে যুক্তরাজ্যে আসবেন তারা আর ডিপেনডেন্ট আনতে পারবেন না। তবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের গবেষক হিসেবে যারা অধ্যায়ন করবেন তারা চাইলে তাদের স্বজন বা ডিপেনডেন্ট আনতে পারবেন।
২৫ মে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বৈধ অভিবাসীর সংখ্যার আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান প্রকাশের দুই দিন আগে নতুন এই ঘোষণা এল। প্রকাশিত সেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাজ্য ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী নিয়েছে। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড। এ নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। কারণ, আগে থেকেই বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসছিল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল।
সরকারি হিসাবে, যুক্তরাজ্য ২০২২ সালে দেশটিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি ভিসা দিয়েছিল, যা ২০১৯ সালের চেয়ে প্রায় ৯ গুণ বেশি।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মন্ত্রীদের বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে নতুন এই নীতি অভিবাসী কমাতে সাহায্য করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের তথ্য অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা ‘অভিবাসীর সংখ্যায় বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করবে’। গত সপ্তাহে ঋষি সুনাক বলেছিলেন, অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে অনেকগুলো পদক্ষেপের বিষয় বিবেচনা করছেন মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলার পরে এমন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এল।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা বছরে এক লাখে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এ অবস্থান থেকে সরে আসে দলটি।
সরকারি হিসাবে গত বছর যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদ্যের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৮৮টি ভিসা দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তির অধীনে ওই বছর যতগুলো ভিসা দেওয়া হয়েছিল, এই সংখ্যা তার ৫ ভাগের ১ ভাগ। অথচ ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ শতাংশ।
হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রেভারম্যান এর আগে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়া এভাবে বেড়ে যাওয়াটা নজিরবিহীন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে তাঁদের (শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা) ভিসা দেওয়ায় লাগাম টানার এখনই সময়।
৬ লাখের বেশি অভিবাসী নিয়েছে যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য ২০২২ সালে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী নিয়েছে। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড। ২৫ মে ২০২২ সালে অভিবাসীর সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (ওএনএস) আন্তর্জাতিক অভিবাসন সেন্টারের পরিচালক জে লিনডপ বলেন, ২০২২ সালজুড়ে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন সব ঘটনা ও করোনা মহামারির পর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে যুক্তরাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ আন্তর্জাতিক অভিবাসন হয়েছে।
এই অভিবাসীরা কোন কোন দেশ থেকে বেশি এসেছেন, তার একটি ধারণা দিয়েছেন জে লিনডপ। তাঁর ভাষ্যমতে, ২০২২ যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী গেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত নয়, এমন দেশ থেকে। তাঁরা মূলত চাকরি, পড়াশোনা ও মানবিক বিভিন্ন কারণে দেশটিতে বসবাস শুরু করেছেন।
যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার হামলার মুখে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকজনও। এ ছাড়া হংকংয়ের অনেক বাসিন্দাও ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে এসেছেন। হংকংয়ে নাগরিক অধিকারের ওপর চীনের দমন-পীড়ন শুরুর পর সেখানকার বাসিন্দাদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে শিথিলতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৮ সাল থেকে ছোট ছোট নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বহু শরণার্থী। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এমন ৪৫ হাজারের বেশি শরণার্থী রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
যুক্তরাজ্যে বহুদিন ধরেই বড় রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে কাজ করছে অভিবাসন। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের সময় আলোচনার মূলে ছিল বিষয়টি। ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করে যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য অভিবাসনে লাগাম টানতে পারবে বলে প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসছিল দেশটির ক্ষমতাসী কনজারভেটিভ দল। সেই প্রতিশ্রæতির মধ্যেই গত বছর অভিবাসী গ্রহণে রেকর্ড হলো।