শীর্ষ পর্যায় থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক
গত ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলে হোমল্যাণ্ড ইন্সুরেন্সের প্রধান অফিসে বিনিয়োগকারীদের সভা চলাকালে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ বিনিয়োগকারীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছিলো সিআইডি পুলিশ।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাগুরা জেলার সিআর আদালতে রুজু করা একটি ভূয়া মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো। সে সময় হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল মামলার বিষয়টি জানেন না বলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছিলেন।
এরপর প্রবাসী ৭ বিনিয়োগকারী মামলা মোকাবেলা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুলার আদালত থেকে মুক্তি পান। কিন্তু ঘটনার আট মাস পেরিয়ে গেলেও বিষয়টির সুরাহা তো হয়ইনি বরং তাদের বিরুদ্ধে নতুন একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভের পর বাংলাদেশের কয়েকটি কাগজে নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়। এনিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে রিট পিটিশনও হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোও গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগে করা।
গত ১৬ মে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ বিনিয়োগকারী এসব ঘটনা অবহিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রবাসীদের সম্পত্তি আত্মসাতকারী দখলদাররা এবার নয়া কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা বলছেন, “আগের মামলা কেবল আমরা ৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়েছিলো। এবারের মামলাগুলোতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮ জনের পাশাপাশি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যদেরও রাখা হয়েছে। যাতে মনে না হয় কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করা হয়েছে।”
আমরা জানি, বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বাড়ি পর্যন্ত তাড়া করা প্রবাসী হয়রানির নানা গল্প শুনে আসা প্রবাসীরা এরপরও কষ্টে উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেন দেশে। বিনিয়োগ করেন দেশের অর্থনীতিতে সামান্য অবদান রাখার স্বপ্ন ও আশায়।
আমরা আরো জানি, দেশে ‘প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়’ নামে একটি মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু প্রবাসীরা যত হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তত যেন এ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের নিকট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় যেন মহাঘুম দিচ্ছে। না হলে, প্রবাসীরা হেনস্থার শিকার হবেন আর মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হবে না কেনো।
এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটি বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে এই প্রজন্মের প্রবাসীদের উৎসাহ বিনষ্ট তো করবেই, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকেও বাংলাদেশ-বিমুখ করে তুলবে।
প্রশ্ন উঠেছে, প্রবাসীদের বিনিয়োগ করতে উদ্ধুদ্ধ করবেন আবার বিনিয়োগকারীকে কোন কারণ দর্শানো ছাড়া অসম্মানজনকভাবে হেনস্থা করবেন, এটা কোন ধরণের কর্মকাণ্ড সরকারের মুখে প্রবাসীবান্ধব বক্তব্য, কর্মে তার কোন প্রমাণ নেই। এই দ্বৈত অবস্থান কোন উপায়েই মেনে নেয়া যায় না।
হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কোনো অন্যায়ের শিকার হয়ে বিনিয়োগ হারালে সেটি বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম বাজে উদাহরণ তৈরি করবে।
আমরা মনে করি, কাউকে হয়রানি করার হাতিয়ার হিসাবে যেন সরকারের কোন সংস্থাই ব্যবহৃত না হয় সেটি নিশ্চিত করা দরকার যাতে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিলে তা কার্যকর করা সম্ভব হয়।