শিক্ষার্থীদের পরিবার আনার সুযোগ বাতিল
যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থীদের পরিবার আনার সুযোগ বাতিলের ঘোষণা দিয়ে হোম অফিস নতুন কড়াকড়ি আরোপ করেছে। গত সপ্তাহে হোম অফিসের ঘোষিত সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আগামী জানুয়ারী মাস থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে?আসতে পারবেন না। ব্রিটেনে আগত অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে যুক্তরাজ্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে হোম অফিস দাবী করেছে। এর পেছনে সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হচ্ছে যে, যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে ৬ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী এসেছেন। দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড। আমরা জানি, ক্ষমতাসীন টোরী সরকারের ঘোষিত নীতিমালা হচ্ছে, বিদেশী শ্রমিকদের ওপর দেশটির নির্ভরশীলতা হ্রাস। তাই স্বভাবতঃই প্রশ্ন ওঠে, যুক্তরাজ্য সরকার এদেশে বিদেশী শিক্ষার্থী আসার দুয়ার সহসা খুলে দিয়েছিল কোন উদ্দেশ্যে?
এ ঘোষণায় যতটুকু যুক্তরাজ্য সরকার কতটুকু লাভবান হবে তা এখনই বলা না গেলেও ব্রিটেন আসতে আসতে ইচ্ছুক বিদেশী শিক্ষার্থীরা যে হতোদ্যম হবেন তাতে সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি, হোম অফিসের এই নতুন নীতি বিদেশী শিক্ষার্থীদের একটি অধিকারই শুধু খর্ব করবে না বরং?বিদেশে লেখাপড়া করতে আসা শিক্ষার্থীরা সরাসরি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, তারা তাদের সাথে আসা পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবেন। এর ফলে তাদের অধ্যয়ন ফি সংকুলান করতে হিমশিম খেতে হবে, চাপ পড়বে শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে অনেকেরই অবৈধ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। একই সাথে এই নীতিমালা কার্যকর হলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়লে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে।
ধারণা করা হচ্ছে, হোম অফিসের নতুন কড়াকড়ি আরোপের ফলে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকার আরেকটি চাপের মুখে পড়বে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যে আর্থিক সংস্থান পেতো, তাও মুখ থুবড়ে পড়ার বিপদ তৈরী হবে বলে মনে করছেন অনেকে। এই অবস্থায় সরকারের অভিবাসন কমানোর নীতিমালাটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞমহলের ধারণা। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এমনিতেই নতুন নতুন সংকট বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সেবামূলক অনেক প্রতিষ্ঠান হিমশিম খাচ্ছে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে বহু প্রতিষ্ঠান, ব্রেক্সিটের প্রভাব লক্ষ্যণীয়ভাবে দৃশ্যমান। এই পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য জীবন কঠিন করে তোলার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের জন্যও নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে।
এমনিতে বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যয়ন ফি প্রতি বছর বাড়ানোর ফলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিমুখ হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা জানি, উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা শুধু শিক্ষালাভের জন্য আসেন না। তাদের অনেকেই লেখাপড়া শেষে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়েও এসে থাকেন। তাই ‘যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থীদের পরিবার আনার সুযোগ বাতিল’ তাদের সেই সাধ ও সাধ্য এবং স্বপ্ন পূরণের পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আমরা জানি, যুক্তরাজ্যে বহুদিন ধরেই বড় রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে কাজ করছে অভিবাসন। ব্রেক্সিট গণভোটের সময় আলোচনার মূলে ছিল বিষয়টি।
ইউ ত্যাগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য অভিবাসনে লাগাম টানতে পারবে বলে প্রতিশ্রæতি দিয়ে আসছিল দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল। সেই প্রতিশ্রæতির মধ্যেই গত বছর অভিবাসী গ্রহণে রেকর্ড হলো। নতুন কঠোর নীতি আসছে নির্বাচনে ট্রাম কার্ড হতে যাচ্ছে কিনা তা সময়ই বলবে।