লণ্ডনে পরিচালিত এক অভিযানে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ভূমিকায় নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন ২০টি দেশের নাগরিক।
পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ১৯ জুন: বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে লণ্ডনে সম্প্রতি পরিচালিত এক অভিযানে হোম অফিসের কর্মকর্তা এবং পুলিশের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বার্মিংহাম মেইল জানিয়েছে, গত ১৫ জুন সেই অভিযান শেষ হয় ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০৫ জন বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। আটককৃতরা মোট ২০ দেশের নাগরিক।
রেস্তোরাঁ, কার ওয়াশ, চুলকাটার দোকান এবং মুদি দোকানের মতো জায়গায় বেআইনীভাবে কাজ করা এবং জাল কাগজপত্র রাখাসহ ইমিগ্রেশন আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ উপায়ে যুক্তরাজ্যে বসবাসের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরে এই অভিযানে অংশ নেন ঋষি সুনাক। অভিবাসন বিভাগের সাধারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাস্তায় দেখা যায় তাঁকে। এই পোশাকে রেস্তোরাঁ, নরসুন্দরের দোকানসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালান তিনি। লণ্ডনের উত্তরাঞ্চলের ব্রেন্ট এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করেন ঋষি সুনাক।
নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অভিবাসন বন্ধের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছেন কনজারভেটিভ নেতা সুনাক।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। ক্ষমতায় আসার আগেও এ নিয়ে কথা বলেছেন ঋষি সুনাক। ক্ষমতায় আসার পরও এ নিয়ে কথা বলেছেন। আগামী বছর যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের আগে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রাভারম্যান বলেন, ‘অবৈধভাবে কাজ করে অনেকেই আমাদের ক্ষতি করছেন। যাঁরা ভালো এবং সৎ শ্রমিক, তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যুক্তরাজ্যে অবৈধ শ্রমবাজার সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। এই অবৈধ শ্রমবাজারের কারণে অনেকেই বিপজ্জনক এবং অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে আসেন। এই অভিযান থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে, আমরা এভাবে চলতে দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার ১৫৯টি অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে দেখা যায়, অনেকেই ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে সেখানে কাজ করছেন। এই অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে পাউণ্ডও উদ্ধার করা হয়েছে। যে ১০৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁর মধ্যে ৪০ জনকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করছে হোম অফিস। আর বাকিদের অভিবাসন আইনে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হবে। পরে তাঁরা নিজেরাই নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন বলে হোম অফিস জানিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন কর্মকর্তারা ১৩০৩টি অভিযান চালায়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঋষি সুনাক ঘোষণা দিয়েছিলেন, নৌকায় চড়ে অবৈধভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসা তিনি বন্ধ করবেন। এর পর জানুয়ারি-মার্চ সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের ঘটনা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
কিন্তু সুনাক তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে গত সপ্তাহে পার্লামেন্টের এক বিতর্কে বলেছেন, ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে ছোট নৌকায় করে অভিবাসীর আগমন ঠেকাতে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রকে পরাজিত করতে তিনি নতুন নতুন উদ্যোগ পন্থা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই অবৈধ অভিবাসী প্রবেশের একটি সুরাহা করার জন্য তাঁর সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানান সুনাক।