সম্পাদকীয়
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের অপকর্মের সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। দোষ এটাই। লজ্জিত না হয়ে উপরন্তু হামলে পড়েন অপকর্মকারি। কারণ তিনি চেয়ারম্যান। তা-ও আবার ক্ষমতাসীন দলের ধ্বজাধারী।
চেয়ারম্যান এই সরকারের নিবর্তনমূলক আইন ডিজিটাল আইনে মামলা করেন। সেখানেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত নিজে উপস্থিত থেকে পেটোয়াবাহিনী দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করান সাংবাদিক গোলাম রব্বানিকে। গোলাম রব্বানির ঘাতকেরা গ্রেফতার হয়েছে। তাঁর স্বজনরা সুষ্ঠু বিচার পাবেন কিনা সে প্রশ্নের জবাব তো অনেক দূর। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে, গোলাম রব্বানি সাংবাদিক হিশেবেও আর ফিরবেন না। আদরের সন্তান হিশেবেও মায়ের কোলে আর ফেরা হবে না তাঁর। পরিবারে এই শূন্যতা কখনো পূরণ হবে না।
এই অসহ্য অন্যায় আচরণ এবং হিংস্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রতিবাদ এসেছে সর্বমহল থেকে। কথায় আছে ‘অসির চেয়ে মসি শক্তিশালী’। কিন্তু এই আপ্তবাক্য যেনো মিথ্যা প্রমাণিত এখন বাংলাদেশে প্রতিদিন।
গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত বেশী অনিরাপদ- এই বিষয়টি দেশবিদেশের সকলের জানা। এই অনিরাপদ পেশায় সাংবাদিকরা দেশে একটি সুস্থ সমাজ নির্মাণের প্রত্যয় থেকে নিজের জানবাজি রেখে কাজ করেন। কিন্তু সুস্থ সমাজ গড়ার দায় কি শুধু সাংবাদিকের?
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক সমাজ গোলাম রব্বানির হত্যা বিচার ও ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। ঢাকায়ও সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রতিবাদ করেছে। জামালপুরের সাংবাদিকেরা জেলা পুলিশ সুপার নাসিরউদ্দিন আহমদের অপসারণ চেয়েছেন। কারণ, ঐ পুলিশ সুপার বলেছেন, খুনিচক্র নাকি গোলাম রব্বানিকে হত্যা করার জন্য মারধর করেনি। ‘শিক্ষা’ দেওয়ার জন্য মারধর করেছে। খুনিরা কি রব্বানিকে হত্যার আগে পুলিশ সুপারের সঙ্গে পরামর্শ করে গিয়েছিল? একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা কীভাবে খুনিদের পক্ষে সাফাই গাইতে এমন আবোলতাবোলও বকতে পারেন?
এই বক্তব্যটি এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। পুলিশ সুপারের এই বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রমাণ। বিচারকে প্রভাবিত করার উদ্দেশে দেয়া জামালপুরের জেলা পুলিশ সুপার নাসিরউদ্দিনের দেয়া এই বক্তব্য থেকে আগাম যে বার্তাটি পাওয়া যাচ্ছে, তা শুধু নিহতের পরিবারের জন্য?নয়, সাংবাদিকসহ সমাজের সভ্য যেকোনো নাগরিকের জন্য চরম অপমানজনক বলে আমরা মনে করি।
বছরের পর বছর ধরে সাংবাদিকদের ওপর যত খড়গ নেমে এসেছে, যত সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন- সবগুলোর ঘটনার পেছনে কার বা কাদের মদদ রয়েছে, সেসবের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া ছিলো সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার তো নিজেই সাংবাদিক নিপীড়নের হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরী করে যখন যাকে ইচ্ছে নাজেহাল করতে ছাড়ছে না। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এর ব্যবহার যে হচ্ছে সে নিয়ে সন্দেহ কম।
আমরা মনে করি, সাংবাদিকদের ‘শত্রু’ ভাবার এই বিনাশী সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশে কর্তব্যাক্তিদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই কাজটি শুরু হতে হবে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের নোংরা দলবাজী ভ্রষ্ট রাজনীতির ফলাফল। যে রাজনীতি আইনের শাসন নিশ্চি?কারী এবং সর্বব্যাপী বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাতা ও লালনকারি। দেশবাসী মূঢ়ের মত শুধু দেখছে এবং সহ্য করছে মানবতার পতন, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ ও মনুষ্যত্বের অপমান। প্রতিবাদ করতে গেলেই খড়গ নামে, শক্তির আস্ফালন মানুষের দোরগোড়ায় লাফালাফি করে।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকারিদের যথাযথ বিচার দাবী করছি আমরা। গোলাম রব্বানির খুনিদের বিচারের মধ্যদিয়ে?বাংলাদেশ সত্য আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে এক কদম হলেও এগিয়ে যাক।