গত সপ্তাহে পূর্বলণ্ডনের বাঙালী কমিউনিটিতে দুটি ব্যতিক্রমী এবং অনুসরণীয় অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। এ দুটি আয়োজনের একটি ছিলো শিক্ষকদের মর্যাদার সাথে স্মরণ এবং অন্যটি ছিলো এদেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সংহতি প্রদর্শনের স্বীকৃতি। দুটো অনুষ্ঠানেই সম্মাননা জানানো হয়েছে গুণী ব্যক্তিদের। সমাজের আলোকিত ও শ্রদ্ধেয় মানুষ শিক্ষকদের সম্মাননা দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কল্যাণ সংগঠন টি আলী স্যার ফাউণ্ডেশন। সম্মাননাপ্রাপ্ত অনুষ্ঠানে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষক অদ্বৈত কান্ত দাস ও সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির খানের আবেগআপ্লুত বক্তব্যে একটি সুরই উঠে এসেছে। আর তা হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া শ্রদ্ধা এবং সম্মানটুকু একজন শিক্ষকের জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।
বাংলাদেশের এক বিরল গুণের প্রয়াত শিক্ষক তজম্মুল আলীর নামে গড়ে তোলা এই সংগঠনটি গুণী শিক্ষকদের খুঁজে বের করে সম্মাননা প্রদান করে আসছে বেশ কবছর ধরে। পাশাপাশি শিক্ষকদের অবসরকালীন সময়কে আনন্দময় করতে শিক্ষার্থীদের সাথে একটি হার্দিক সম্পর্ক অটুট রাখার লক্ষ্যে নানা রকম সৃজনশীল উদ্যোগ এবং সামাজিকভাবে শিক্ষাগুরুদের সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর উদ্যোগ নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা ও অনুপ্রেরণা দানে কাজ করে চলেছে। এছাড়া আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল কিংবা অসুস্থদের শিক্ষকদের কাছে মর্যাদার সাথে সহায়তা পৌঁছে দিতেও কাজ করে থাকে সংগঠনটি। এই সংগঠনের কাজে বিলাতের বাংলাদেশী কমিউনিটির সকলেরই সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমরা মনে করি।
দ্বিতীয় আয়োজনে যুক্তরাজ্যে মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার দশ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। চমৎকার আয়োজনের এই অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছিলো মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন। ব্রিটেনের মুসলমান কমিউনিটির পক্ষ থেকে অমুসলিমদের প্রশংসাসূচক এ ধরনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দানের উদ্যোগ এ প্রথম। ব্রিটেনে ধর্মীয় সম্প্রীতির উন্নয়ন ও সংরক্ষণ এবং কমিউনিটির বন্ধনকে সুদৃঢ়করণে মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ থেকে এটিকে একটি মাইলফলক উদ্যোগ বললে ভুল বলা হবে না।
যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমাজের বৃহত্তর কমিউনিটির মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের কাজ করে যাওয়ার মাধ্যমে মানবিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাদেরকে এই বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এই আয়োজনে আনুষ্ঠানিকভাবে এমনসব ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানানো হয়েছে যারা মুসলিম না হয়েও মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছিলেন সোচ্চার, যারা মানুষের মানবিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকারকে উচ্চাসনে রেখে একে-অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও গতিশীল সমাজগঠনের জন্য এক অনুসরণীয় অবদান রেখেছেন। এ ধরণের উদ্যোগ শুধু ভিন্নধর্মের গুণী ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিত্বদের কর্মের প্রতি শুধু সম্মান প্রদর্শনই নয় বরং ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য এটি এক অনুপম দৃষ্টান্ত। সামাজিক সম্প্রীতি ও সমাজে পারস্পরিক মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এবং মানবিক মর্যাদা সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা ভিন্ন ধর্মের মানুষকে স্বীকৃতি দেয়াটাও যে জরুরী ইসলামের সেই বার্তাই দিয়েছে এই অনুষ্ঠান। কারণ, এরা সবাই তাদের প্রতিটি কাজে ইসলামের প্রতি ও এর অনুসারীদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় ছিলেন এক একজন দিকপাল। এ ধরনের স্বীকৃতি ও সম্মাননা মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার মানুষকে আরো বেশী মানবিক কাজে উৎসাহিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
এ দুটি আয়োজনের পেছনে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা মনে করি বিলেতে বাংলাদেশীদের অন্যান্য সংগঠনেরও এ ধরনের উদ্যোগে শামিল হওয়া এবং সর্বাত্মক সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার।