সকল ভিসা ও সেবার ফি বৃদ্ধির ঘোষণা
স্থায়ী হওয়ার আবেদন ফি ২৮৮৫ পাউণ্ড
হাজার ছাড়িয়ে ‘হেলথ সারচার্জ’
‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’য় শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শর্ত
পত্রিকা প্রতিবেদন ♦
লণ্ডন, ৩১ জুলাই: যুক্তরাজ্যে অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) খরচ তুলনামূলক এমনিতেই বেশি। এখন নতুন করে আবার খরচ বাড়ছে। হোম অফিস ভিসা ফিসহ অভিবাসন সংক্রান্ত সকল আবেদন ও সেবার ফি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফি বাড়ছে ১৫ শতাংশ আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফি বাড়ছে ২০ শতাংশ। যার ফলে ভিসা আবেদনের খরচ ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ পাউণ্ড থেকে ৪শ পাউণ্ডের বেশি বাড়বে।
সবচেয়ে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ‘ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’। ২০১৫ সালে যখন ‘ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’ চালু করা হয়, তখন এর পরিমাণ ছিলো বছরে ৪৫০ পাউণ্ড। সেটি গত কয়েক বছরে বেড়ে হয়েছে বছরে ৯৪০ পাউণ্ড। নতুন প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’ বেড়ে হবে বছরে ১ হাজার ৩৫ পাউণ্ড। তবে হোম অফিসের ঘোষিত এসব বর্ধিত ফি কবে থেকে কার্যকর হবে সে বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। সাধারণত ফি বৃদ্ধির কমপক্ষে ২১ দিন আগে হোম সেক্রেটারি পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপর সেটি কার্যকর হয়। তবে এবারের ফি বৃদ্ধির প্রস্তাব এখনও পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়নি। হোম অফিসের ঘোষণা অনুযায়ী, ‘সেটেলম্যান্ট’ বা ‘ইণ্ডিফিনিট লীভ টু রিমেইন’-এর আবেদন ফি বাড়বে ২০ শতাংশ। ফলে এ আবেদন ফি বর্তমানের ২ হাজার ৪০৪ পাউণ্ড থেকে বেড়ে হবে ২ হাজার ৮৮৫ পাউণ্ড। যা এক লাফে ৪৮১ পাউণ্ড বৃদ্ধি পাবে।
একইভাবে ‘ব্রিটিশ সিটিজেনশীপ’ বা ‘ন্যাচারালাইজেশন’-এর আবেদন ফিও ২০ শতাংশ বেড়ে ১৫শ ছাড়িয়ে যাবে। ‘স্কিলড ওয়ার্কার ভিসা’র সব ধরণের ‘কস’-এর ফি বাড়বে ১৫ শতাংশ। স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ও সকল প্রকারের ‘ভিজিটর ভিসা ফি’ বাড়বে ১৫ শতাংশ। ‘ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’ ১০ শতাংশ বেড়ে হবে ১ হাজার ৩৫ পাউণ্ড। তবে সবেচেয়ে বেশি বাড়ছে ১৮ বছরের কম বয়সী ‘ডিপেনডেন্টদের ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’। এই ফি ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী ‘ডিপেনডেন্টদের ‘ইমিগ্রেশন হেলথ সারচার্জ’ এতদিন ছিলো বছরে ৪৭০ পাউণ্ড। সেটি এখন বেড়ে হবে বছরে ৭৭৬ পাউণ্ড। ফি বাড়ানো হচ্ছে ভিসা আবেদনে ‘প্রায়োরিটি’ সেবা গ্রহণেরও। সুপার ‘প্রায়োরিটি প্রোসেসিং’-এর ফি বাড়বে ২০ শতাংশ। ফলে ‘এন্ট্রি ক্লিয়ারেন্স’ আবেদনের ক্ষেত্রে ‘সুপার প্রায়োরিটি প্রোসেসিং’-এর ফি ৯৫৬ পাউণ্ড থেকে বেড়ে হবে ১১শ ৪৭ পাউণ্ড। আর ‘পারমিশন টু স্টে’ আবেদনের ক্ষেত্রে ‘সুপার প্রায়োরিটি প্রোসেসিং’-এর ফি ৮শ পাউণ্ড থেকে বেড়ে হবে ৯৬০ পাউণ্ড। একইভাবে ‘প্রায়োরিটি প্রোসেসিং’-এর ফিও বাড়বে ২০ শতাংশ। ফলে এই সেবার ফি বেড়ে হবে ৬শ পাউণ্ডের বেশি।
এদিকে গত ১৭ জুলাই ঘোষিত এক নতুন নিয়মে ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’র ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু নতুন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে স্টুডেন্ট ভিসা থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পরিবর্তন করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। নতুন শর্তে বলা হয়েছে- শিক্ষার্থীরা কোর্স সম্পন্ন করার আগে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পরিবর্তন করতে পারবেন না। স্টুডেন্ট থেকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের কোর্স সম্পন্ন করার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। তবে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা ২৪ মাসের পড়াশোনা সম্পন্ন করার প্রমাণ দেখানো সাপেক্ষে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা কয়েক মাসের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন হবে এমন প্রমাণ দেখানো সাপেক্ষে ওয়ার্ক পারমিটে প্রবেশের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনা শেষ না করেই ওয়ার্ক পারমিটে চলে যাওয়ার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি উঠে। কেননা তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নেই। এতে শিক্ষার ফি থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কারণে স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যবহার বন্ধে হোম অফিস ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় প্রবেশের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট ভিসাধারীদের জন্য নতুন শর্ত আরোপ করলো।