ব্যাংক ঋণ নিতে এখন থেকে ঋণ আবেদনকারীর বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ নেয়া নির্দেশনা দিয়ে?একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনায় উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই নতুন জারী করা নিয়মে ঋণগ্রহীতার পাশাপাশি ঋণের জামিনদাতাদেরও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য সংরক্ষিত ডেটাবেজ থেকে ছাপ যাচাই করেই তা গ্রহণ করবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্তারা এই পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতোদিন ধরে তাহলে কীভাবে ব্যাংক ডাকাতরা ঋণের নামে লুটপাট চালিয়ে আসছে?
জবাবটা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনেই আছে। সেখানে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ মোতাবেক সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে বেশ কিছু রিট পিটিশন দায়ের করা হচ্ছে, যেখানে ঋণগ্রহীতা এবং ঋণের জামিনদাতা উভয়ে ঋণ গ্রহণ ও জামিন প্রদানসংক্রান্ত দলিলাদিতে স্বাক্ষর প্রদান করেননি মর্মে উল্লেখ করেছেন। ফলে সংশ্লিষ্ট চার্জ ডকুমেন্টগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ও জামিনদাতার স্বাক্ষরের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে ঋণ আদায়ের আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা বিঘ্নিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বৃদ্ধাঙ্গুলির’ প্রজ্ঞাপন এমন এক সময়ে জারি করা হয়েছে যখন সংবাদ মাধ্যমের খবর হচ্ছে- গত এক বছরে ৬৯৬ কোটি টাকা বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকেরই মন্দ ঋণ ১৮,২৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সংবাদ মাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অবলোপনকৃত ঋণের শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এরপর রয়েছে অগ্রণী, জনতা, বেসিক, বিডিবিএল ও রূপালী। তবে এপিএ’র লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, একমাত্র বেসিক ব্যাংকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে। হিসাব করলে দেখা যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই মন্দ ঋণের পরিমাণ বেশী। এর কারণ বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। এর বাইরে কিছু প্রাইভেট ব্যাংকে যে কেলেঙ্কারী ঘটে গেছে তা-ও আমাদের সবার জানা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঋণ বিতরণের আগে ঋণসংশ্লিষ্ট চার্জ ডকুমেন্টগুলো সম্পাদন করাসহ প্রাথমিক ও সহ-জামানতের ওপর চার্জ আরোপের নির্দেশনা রয়েছে। এতে গ্রাহকভিত্তিক, ঋণের ধরনভিত্তিক ও ঋণের জামানতভিত্তিক গৃহীত চার্জ ডকুমেন্টগুলো তালিকা আকারে উল্লেখ করা রয়েছে, যেখানে ঋণগ্রহীতা ও তৃতীয় ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাহলে সহজ প্রশ্ন হচ্ছে, এতোদিন ধরে যে এসব নিয়ম ফাঁকি দিয়ে ব্যাংকগুলো খালি করার সুযোগ দেয়া হলো সেজন্য কারা দায়ী? কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি এসব বিষয় আগে জানতো না? এখন আদালতের পর্যবেক্ষণে তাদের হুশ ফিরলো? ঋণের নামে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়প্রশ্রয়ে ব্যাংকগুলোতে এতোদিন যে হরিলুটের উৎসব চলেছে তা রুখতে এই নিয়ম কাজ করবে তখনই যখন বাংলাদেশে আইন-বিধান সকলের জন্য সমানভাবে অনুসরণ করা হবে। না হলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন কেউই মানবে না। কারণ সবাই জানবে খেলাপী আর লুটেরাদের জন্য আসকারা আছে। বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশবাসীকে লুটেরেরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই দুর্নীতির আসর আরো স্ফীত করে তুলবে।