বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশ দমনের জন্য?বর্তমান সরকারের চরম নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জন্য শুরু থেকেই ব্যাপক বিরোধিতা ছিলো। এই আইনের বলে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের শাষকগোষ্ঠী যে কুখ্যাতি অর্জন করেছে তা নজীরবিহীন। কারণ, এ পর্যন্ত এই আইন দাবড়ে সাড়ে সাত হাজারের মতো মামলা হয়েছে। আর এসব মামলায় দেশের জনগণের প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ হয়রানীর শিকার হয়েছেন। এ আইনের মামলায় গ্রেফতার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের একটি দৈনিকের প্রতিবেদন মতে, এ পর্যন্ত প্রায় তিনশ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এই আইনেই। ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণের এই আইন প্রণয়ন যে নিষ্ঠুরভাবে বিরুদ্ধ মত দমন করে মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লক্ষ্য ছিলো প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধ, সর্বব্যাপী-সর্বগ্রাসী অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কথা বলতে না দেয়া। জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের এমন বেআইনী বিধানের প্রচলন কেনো সভ্য দেশে কি সম্ভব? গত প্রায় পাঁচ বছরজুড়ে এই আইনের নামে নানা অনাচারের পর দেশের জনগণ তো বটেই বিশ্বজুড়েই তীব্র সমালোচনা ওঠে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফোলকার টুর্ক এই আইন স্থগিত করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের শর্তের সঙ্গে সংগতি রেখে সংস্কারের আহ্বান জানান। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এই আইনের সমালোচনা করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। জাতিসংঘ তো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা সম্পূর্ণ বাতিল এবং ৮টি ধারার সংশোধন চেয়েছিল।
এতোকিছুর পর এখন আমাদের আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলে নাকি মানুষের মধ্যে চাপ তৈরি হয়। এ জন্য নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখন এটি ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ হবে। কিন্তু এই আইনের ক্ষমতায় তেমন কোনো হেরফের ঘটবে না। এর মানে দাঁড়াচ্ছে- নুতন পোষাকে পুরানো অস্ত্রের নির্বিচার অত্যাচার চলতেই থাকবে। কারণ, যখন-তখন যাকে-তাকে জেলে ঢোকানোর অবারিত ক্ষমতা পুলিশের কাছে থাকছেই। সরকার শুরু থেকেই দাবী করে আসছিলো যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা ভালো, কিন্তু এর অপব্যবহার হচ্ছে। অথচ এই অসভ্য আইনের বিরোধীরা বলে আসছিলেন যে, আইনটাই খারাপ এবং এতোটা খারাপ যে সংশোধন করলেও এর চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব কুকর্মই সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়ে একই কাজ করা যাবে। আইনের নাম পরিবর্তন হরেও বাস্তবে মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। এই আইন মানুষকে হয়রানি করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে নাম নতুন নামের আইনেও মানুষের হয়রানি অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ৭ আগস্ট ২০২৩ সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন এ আইনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবারও মন্ত্রিসভায় উঠবে। পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদের আগামী সেপ্টেম্বরের অধিবেশনে নতুন আইন পাশ করা হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশ হতে যাচ্ছে। সুতরাং এই আইনের পরিণতি নিয়ে আগে থেকেই সতর্কতা, ব্যাপক সমালোচনা এবং বিরোধিতা সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ মহল অবগত বা সচেতন নন এমন দাবী ভবিষ্যতে তোলা যাবে না। এর পুরো দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।