প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ফেরা কঠিন
মৃত মায়ের ওসিয়ত পালন করতে গিয়ে কোন রকমে প্রাণ নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী বৃহত্তর সিলেটের মৌলবীবাজার জেলার বড়লেখার ফয়জুর রহমান। তবে ব্রিটেনে ফিরে এলেও জীবননাশের হুমকির মুখে রয়েছেন এই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি ব্যবসা করে অর্থ কামাতে বাংলাদেশে যাননি, যাননি রাজনৈতিক কোন অভিলাষ পূরণ করতে কিংবা কার্যক্রমে অংশ নিতে। গিয়েছিলেন মায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটির দেখভাল করতে। এর পাশাপাশি বিদেশের আয় দিয়ে দেশে বিভিন্ন চ্যারিটি কাজে নিজের জীবন সপে দিলেও কতিপয় আত্মীয়-স্বজনের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তিনি। গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অপচেষ্টা পর কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে ফিরেছেন ব্রিটেনে।
এ ধরনের বহু ঘটনা হাজার হাজার প্রবাসী হজম করে বসে আছেন। কারণ, বাংলাদেশের সমাজে ভূক্তভোগীরা বিচারহীনতার শিকার। আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিতরা মোটাদাগে অপরাধীর পক্ষে। তাই প্রবাসীদের হয়রানীর শিকার হয়ে কখনোবা প্রাণ নিয়ে সব ছেড়ে প্রবাসে ফিরে আসতে হয়। আমরা জানি গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার মতিঝিলে হোমল্যাণ্ড ইন্সুরেন্সের প্রধান অফিসে বিনিয়োগকারীদের সভা চলাকালে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ বিনিয়োগকারীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছিলো সিআইডি পুলিশ।
মাগুরা জেলার সিআর আদালতে রুজু করা একটি ভূয়া মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো। সে সময়?হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল মামলার বিষয়টি জানেন না বলে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর প্রবাসী ৭ বিনিয়োগকারী মামলা মোকাবেলা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুলার আদালত থেকে মুক্তি পান। কিন্তু ঘটনার পর বছর ঘুরে গেলেও বিষয়টির সুরাহা তো হয়ইনি বরং তাদের বিরুদ্ধে নতুন একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে মুক্তি লাভের পর বাংলাদেশের কয়েকটি কাগজে নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়। এনিয়ে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে রিট পিটিশনও হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে
আমরা জানি, বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বাড়ি পর্যন্ত তাড়া করা প্রবাসী হয়রানির নানা কাহিনী শুনে আসা প্রবাসীরা এরপরও কষ্টে উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করেন দেশে। সময় ও পরিশ্রমও বিনিয়োগ করেন নানা স্বপ্ন ও আশা নিয়ে। আমরা আরো জানি, দেশে ‘প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়’ নামে একটি মন্ত্রণালয় আছে। কিন্তু প্রবাসীরা যত হয়রানির শিকার হলে কিংবা বিপদে পড়লে তাদের দেখা মেলে না। প্রবাসীরা হেনস্থার শিকার হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হয় না- এটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সম্প্রতি ফয়জুর রহমানের সাথে যা ঘটে গেছে তাতে বাংলাদেশ থেকে প্রাণ নিয়ে ফেরা কঠিন- এই বার্তাটিই প্রবাসীদের মাঝে ছড়াবে। কারণ, আগস্ট মাসের গোড়ার দিকে তাঁর ওপর সংঘটিত হত্যা চেষ্টার মামলাটি মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। পরে আদালতের আদেশে মামলা নিলেও আসামী গ্রেফতারের ব্যাপারে কোনো তৎপরতা নেই। এমনকি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার পরও এতো বড় ঘটনায় গত সপ্তাহ পর্যন্ত কোন গ্রেফতার নেই। তাই বাংলাদেশে তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে বলেই তিনি মনে করছেন। অথচ মাদ্রাসা পরিচালনার স্বার্থে বিভিন্ন সময় তাকে বাংলাদেশে যেতে হয়। কিন্তু এবারে তাঁর ওপর হামলার ঘটনার পর তাঁর পরিবার ভীতসন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছেন। ছেলেরা বলছে, তারা কোনোদিন বাংলাদেশে যাবে না। তাকেও বাংলাদেশে যেতে বারণ করেছে। কারণ, তারা শঙ্কিত ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গেলে হয়তো তাদের বাবা ফিরেই আসতে পারবেন না। এই শঙ্কা দূর করার দায়িত্বটি কার? রাষ্ট্রের নয় কি?