যুদ্ধপন্থীদের বেহায়াপনার চরম নজীর প্রত্যক্ষ করছে মানবিক বিশ্ব
বৃষ্টির মত পড়বে বোমা, পালানোর জায়গা নেই গাজাবাসীর। পানি ও খাবারের জন্য হাহাকার। এ পর্যন্ত খুন হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৫শ ফিলিস্তিনী। ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে উপত্যকাটি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, হাসপাতালগুলোর মর্গে লাশ রাখার জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে আইসক্রিমের ফ্রিজারে লাশ রাখতে দেখা গেছে। সম্প্রতি আল-জাজিরা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সব মিলিয়ে চরম মানবিক বিপর্যয়ে দিন কাটাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ গাজাবাসী।
এরপরও ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা মিত্ররা।
নেতারা ঘটা করে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছেন। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের এই আচরণ যুদ্ধাপরাধের শামিল।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। সেই হামলায় কয়েকশত ইসরায়েলী নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার অজুহাতে ইসরায়েল গাজায় সব গুড়িয়ে দেয়ার হুংকার দিয়ে নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়। হাসপাতাল, স্কুল কোন কিছুই তাদের হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। গাজার অধিবাসীদের ৫০ শতাংশই শিশু। গাজার ২ মিলিয়ন ফিলিস্তিনীকে ইসরায়েল এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরপরও বিশ্বের মানবতাবাদের ধ্বজাধারীরা আগ্রাসী হন্তারক ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। তাদের সুরক্ষার অধিকারের কথা বলে এই চরম অপরাধের সাফাই গাইছেন। কারণ, তাদের চোখে গাজার নির্বাচিত হামাস ‘সন্ত্রাসী। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয়, নেলসন ম্যাণ্ডেলাকেও ব্রিটেনসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ‘সন্ত্রাসী বলে তকমা দিয়ে রেখেছিলো। অথচ ফিলিস্তিনের মাটিতে ইসরায়েল প্রতিনিয়ত তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ফিলিস্তিনীদের জন্য দমবন্ধ পরিবেশ তৈরী করছে। আন্তর্জাতিক সকল আইন ও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চলেছে।
নতুন করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদেশগুলো বরাবরের মতোই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। ২ মিলিয়ন ফিলিস্তিনীর জীবন সংহারে উদ্যত ইসরায়েলের গণহত্যা ঠেকাতে তাদের কোনো উদ্যোগ তো দূরের কথা এর প্রতিবাদ কিংবা নিন্দা জানানোর মতো সাহস প্রদর্শনে তারা চরমভাবে ব্যর্থ। তবে পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুর এই গণহত্যার জন্য ইসরায়েলের ইউরোপীয় বন্ধুদের কথা মানবিক পৃথিবী কখনো ভুলবে না।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, এই বাঁচা-মরার সময়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইইউ আগামী দিনে তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা চালিয়ে যাবে, না বন্ধ করবে।
তবে যুদ্ধপন্থীদের বেহায়াপনার চরম নজীর প্রত্যক্ষিত হলেও মানবিক বিশ্ব ফিলিস্তিনীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। দুনিয়ার দেশে দেশে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন ফিলিস্তিনীদের পক্ষে, তাদের প্রতি সমবেদনা আর সংহতি জানাতে। লণ্ডনে গত শনিবার দেড় লক্ষ মানুষ ক্ষমতার কেন্দ্রতে গিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের বিচারের মুখোমুখি করার আইনী উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ মাসাদ লিখেছেন, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যে একজোট হয়েছে, সেটি মোটেও কাকতালীয় বিষয় নয়। নামিবিয়া, তাঙ্গানিকা, রোডেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, কেনিয়াসহ যত জায়গায় শ্বেতাঙ্গরা উপনিবেশ গড়েছিল, সবখানে তারা একজোট হয়েছিল। এর কারণ হলো তারা প্রচণ্ড রকম বর্ণবাদী। ইসরায়েল যেহেতু একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র, সেহেতু তারা তাদের পাশে থাকবেই। সুতরাং, অসহায়, বিপন্ন যুদ্ধপন্থীদের বেহায়াপনার চরম নজীর ভরসা বিশ্বের সাধারণ মানবিক মানুষ।
আসুন, ক্ষমতাসীন যুদ্ধপন্থীদের বেহায়াপনার বিপরীতে আমরা সাধারণ মানুষ সাধ্যমতো ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়াই সব ভয় আর হুমকি উপেক্ষা করে।