হত্যাযজ্ঞের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের
ফিলিস্তিনের সমর্থনে লণ্ডনে স্মরণকালের বৃহত্তম বিক্ষোভ সমাবেশ
সামরিক কার্গো বিমান থেকে ইসরাইলে নামলেন ঋষি সুনাক
পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ২৩ অক্টোবর: গাজায় নির্বিাচারে ইসরাইলি বোমা হামলা চলছে। নিহত হচ্ছে শত শত নারী ও শিশু। ১৭ দিনে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি। নিহতদের মধ্যে শিশু ২ হাজারের কাছাকাছি। জাতিসংঘ বলছে, হামাস যোদ্ধা যতজন নিহত হয়েছে তার চেয়ে বেশি নিহত হয়েছে গাজার শিশুরা। গাজাবাসীর ওপর ইহুদি উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের এমন বর্বরতাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেযুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও আইনের শাসনের রক্ষক দাবি করা যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত গাজায় হামলা বন্ধের সকল প্রচেষ্টায় বাধা দিয়েছে। ইসরাইল সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়ে এসেছেন তিনি নিজেই একজন জায়নিস্ট এবং ইসরাইলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অকূণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত থাকবে। বাইডেন আরও বলেন, ইসরাইলকে অর্থ ও সাহায্য দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সমর্থনে দুটি রণতরী পাঠিয়েছে। দিয়েছে ভয়ানক মরণঘাতী সব সমরাস্ত্র। বিপুল অর্থ সাহায্য দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে মার্কিন পার্লামেন্টে বিল উত্থাপন করেছে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, নেদারল্যাণ্ডস, থাইল্যাণ্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়শিয়া, বাংলাদেশ ও বেশ কয়েকটি আরব দেশে ফিলিস্তিনের ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লণ্ডনে গত শনিবার আয়োজিত স্মরণকালের বৃহত্তম বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ২১ অক্টোবর দুপুরে এ বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের নানা বর্ণের শান্তিকামী নারী-পুরুষ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুদের উপস্থিতিও ছিলো এই সমাবেশে।
আমেরিকা সব সময় ইসরায়েলের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরায়েলের পাশে থাকবে বলে দেশটির নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বৃহস্পতিবার ইসরায়েল সফরে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলে আমি যে বার্তাটি নিয়ে এসেছি, তা হলো, আপনারা হয়তো নিজেদের রক্ষায় যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে যত দিন আমেরিকা আছে, তত দিন আপনাদের একা লড়তে হবে না।’ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যাঁরাই শান্তি ও ন্যায়বিচার চান, তাঁদের অবশ্যই হামাসের সন্ত্রাসের নিন্দা জানাতে হবে। হামাসের লক্ষ্য একটাই, তা হলো ইসরায়েলকে ধ্বংস করা এবং ইহুদিদের হত্যা করা।’
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের জেরে মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত কোনো মার্কিন সেনার ওপর হামলা হলে তার বদলা নিতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত আছে। মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে রোববার তিনি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনাদের ওপর কোনো হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন তার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন শুক্রবার ইসরায়েল সফর করবেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং হামাসের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইসরায়েলকে সহায়তায় এরই মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রণতরি ইউএসএস জেরা? ফোর্ডসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ কাছাকাছি এলাকায় ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আরও একটি রণতরিও কাছাকাছি এলাকায় আনার ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গাজায় টানা বোমাবর্ষণ করতে থাকা ইসরায়েলি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য দেশটিতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েলকে যে ভয়ংকর অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সহায়তা মধ্যপাচ্যে নতুন প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি এবার এ অঞ্চলে আকাশ প্রতিরক্ষার প্রযুক্তি ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা ‘থাড’ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, এ অঞ্চলে ‘টার্মিনাল হাই অ্যালটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা ‘থাড’ ছাড়াও অতিরিক্ত সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্যাট্রিয়ট নামের প্রযুক্তিও দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনিদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে হামলা জবাবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য এমন প্রযুক্তি ছাড়াও এ অঞ্চলে নৌবহরকে শক্তিশালী করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আওতায় দুটি এয়াক্রফট ক্যারিয়ার এবং তাদের সহায়তায় জাহাজ ও ২০০০ নৌসেনা পাঠিয়েছে। মূলত হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের থেকে ক্রমাগত হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে আরও অতিরিক্ত কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত মার্কিন সেনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে তিনি সেনাদের সংখ্যা জানাননি। হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধের জেরে সম্প্রতি ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা বিভিন্ন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে।
এ ছাড়া ইয়েমেন উপকূলের কাছে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এমনকি এই যুদ্ধে ইসরায়েলকে সহায়তা করলে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি দিয়ে রেখেছে ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এমনকি ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এসব হুমকি-আলটিমেটামের মধ্যে মাত্র চার দিনে পাঁচবার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার পর এই অঞ্চলে মার্কিন সক্ষমতা বাড়াতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষা নিশ্চিত এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করবে। থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হলো ‘টার্মিনাল হাই অলটিচুড এরিয়া ডিফেন্স’।
এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যবর্তী পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম। অন্যদিকে প্যাট্রিয়ট হলো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা। মার্কিন প্রতিষ্ঠান রেথিয়ন এসব ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি করে। ব্যয়বহুল এই ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দিয়ে শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, যুদ্ধযান ধ্বংস করা সম্ভব। ইসরাইল ও ইউক্রেনের জন্য ১০৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন বাইডেন ইসরাইল ও ইউক্রেনের জন্য ১০৫ বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অর্থ দিয়ে দেশ দুটিকে সামরিক ও মানবিক সহায়তা দেয়া হবে। পাশাপাশি গাজার জন্য ও মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের ঠেকাতেও এখান থেকে অর্থ ব্যয় হবে।
শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই তহবিল চেয়ে কংগ্রেসের কাছে আবেদন পাঠিয়েছে হোয়াইট হাউস। এদিনই এক ভাষণে বাইডেন দাবি করেন, ইউক্রেন ও ইসরাইলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পর্কিত। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও দৃঢ় করতে এবং মার্কিনিদের সুরক্ষা নিশ্চিতে এই অর্থ অত্যন্ত জরুরি। ওয়াশিংটনের কঠোর সমালোচনা করল রাশিয়া ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তব্যের জেরে ওয়াশিংটনের কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা শুক্রবার মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এই সমালোচনা করেন। বাইডেনের এই মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া। তিনি বলেন, বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বাইডেনের মন্তব্য প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র আদর্শিক কারণে লড়াইয়ে জড়ায় না। তারা ছায়াযুদ্ধ (প্রক্সি ওয়ার) থেকে লাভবান হয়।
মারিয়া বলেন, বাইডেনের মন্তব্যে নৈতিক মানদণ্ডের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের বিশ্বাসঘাতকতা প্রকাশ পেয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রশাসন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের কথা বলে। কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে, এর পেছনে রয়েছে শুধুই হিসাব। ওয়াশিংটন মূল্যবোধের কথা বলে সব সময় বিশ্বকে বোকা বানিয়েছে। অথচ তারা কখনো এই মূল্যবোধ ধারণ করেনি। রাতভর বোমা হামলা, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা গাজা উপত্যকায় রোববার দিবাগত রাতভর বোমা হামলা জোরালো করে ইসরাইল। বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফার তথ্যমতে, ২৪ ঘন্টায় গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪০০ মানুষ। এ নিয়ে ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো কমপক্ষে ৪৭৪১। নিহত হয়েছেন আরও একজন সাংবাদিক। গাজা উপত্যকায় নিহত ওই ফটোসাংবাদিকের নাম রুশদি সারাজ। নিজের বাসভবনে তিনি ইসরাইলি হামলার শিকার হন। ইসরাইল হামলা চালিয়েছে আল শিফা এবং আল কুদস হাসপাতালের খুব কাছাকাছি এলাকায়। ফলে এই দুটি হাসপাতাল এখন ঝুঁকিতে আছে।
এর আগে প্যালেস্টাইনিয়ান রেডক্রসের মিডিয়া পরিচালক আল জাজিরাকে বলেছেন, আল কুদস হাসপাতালকে যেকোনো মুহূর্তে বোমা হামলা চালানোর হুমকি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে লেবানন সীমান্তে আরেক যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য লেবানন সীমান্তের গ্রামগুলো থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে হামাসের মতো যুদ্ধ শুরু করে ইসরাইল, তাহলে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। একদিকে হামাস, অন্যদিকে হিজবুল্লাহ অন্ততপক্ষে এই দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে ইসরাইলকে। এ ছাড়া সিরিয়ার দুটি বিমানবন্দরে আগেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে তার ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। সিরিয়া থেকে দাবি করা হয়েছে, এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য দায়ী ইসরাইল। এমনি করে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে ইসরাইল। ফলে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে বিশ্লেষণ করেন, এমন ব্যক্তিরা বড় যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে লেবাননের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ইসরাইলি সীমান্তে ১৪টি শহর থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। এর আগের সপ্তাহে একই রকম আদেশ দেয়া হয়েছে অন্য ২৮টি শহরকে। এর ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলাকালে তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই উদ্ধার অভিযানের নির্দেশই বলে দিচ্ছে ওই সীমান্তে কেমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওদিকে রোববার কুসুফ গাজায় গোলাগুলির মধ্যে পড়ে একজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্য তিনজন। এ সময় ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ও সামরিক যান তীব্র গোলাগুলির মধ্যে পড়ে।
এর আগে দখলীকৃত পশ্চিমতীরে জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা করে ইসরাইলি বাহিনী। সেখানে তারা আল আনসার মসজিদকে টার্গেট করে। তাদের অভিযোগ এই মসজিদের সঙ্গে জেনিন ব্রিগেডের সম্পর্ক আছে। তাই তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করতে হামলা চালানো হয়েছে। ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সেনা বা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছেন। হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১৪০০ মানুষ।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে লণ্ডনে স্মরণকালে বৃহত্তম বিক্ষোভ সমাবেশ
লণ্ডন, ২৩ অক্টোবর: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লণ্ডনে আয়োজিত স্মরণকালের বৃহত্তম বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ২১ অক্টোবর শনিবার দুপুরে এ বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের নানা বর্ণের শান্তিকামী নারী-পুরুষ। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুদের উপস্থিতিও ছিলো এই সমাবেশে। সমাবেশে অবৈধ দখলদার ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ, সত্তর বছর ধরে চলা আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধের দাবী জানানো পাশাপাশি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়। শনিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে অনুষ্ঠিত লণ্ডনের বিক্ষোভটি বিগত কয়েক বছরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আয়োজকরা বলছেন, স্মরণকালের বৃহত্তম এই বিক্ষোভ সমাবেশে তিন লাখেরও বেশী মানুষ অংশ নিয়েছেন। তবে বেলা দুইটার দিকে লণ্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, অন্তত এক লাখ মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন। মার্বেল আর্চ থেকে শুরু করে মিছিল নিয়ে তাঁরা ডাউনিং স্ট্রিটের দিকে এগোতে থাকেন। এর দেড় ঘণ্টা পরও বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন মানুষ। উল্লেখ্য, মিছিলটি ছিলো দুই মাইলেরও বেশী দীর্ঘ। বিক্ষোভকারীরা প্রথমে মার্বেল আর্চের সামনে জড়ো হন। এ সময় তাঁদের হাতে ‘মুক্ত ফিলিস্তিন চাই’ও ‘গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করো’ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন ফ্রেণ্ডস অফ আল-আকসা এ বিক্ষোভের সহ-আয়োজক। তাঁরা গাজায় অবিলম্বে আগ্রাসী ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সেখানে পুরোদমে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে বিক্ষোভে অংশ নেন নানা বর্ণ ও বয়েসের মানুষ। এ সময় পুরো এলাকা জনসমুদ্র পরিণত হয়। চারদিকে অনবরত একটি সৌাগান ভেসে বেড়াচ্ছিল, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত হবে।’ এদিকে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড, নেদারল্যাণ্ডস, থাইল্যাণ্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়শিয়া, বাংলাদেশ ও বেশ কয়েকটি আরব দেশে ফিলিস্তিনের ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ।
সামরিক কার্গো বিমান থেকে ইসরাইলে নামলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
২৩ অক্টোবর: বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতে দেশটিতে সফরে যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তবে তার এই সফর ব্যতিক্রমী। অস্ত্র পরিবহনে ব্যবহার হয় এমন একটি সামরিক বিমানে করে তিনি ইসরাইল পৌঁছেন। এর আগে বিশ্বে কখনো এমনটা দেখা যায়নি। ছবিতে দেখা যায়, তিনি একটি মিলিটারি কার্গো বিমানের অস্ত্র ও সরঞ্জামের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছেন। হামাসের হামলায় ইসরাইলে ৪০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার বিরুদ্ধে যে নিষ্ঠুর বোমা হামলা চালিয়ে সাধারণ ফিলিস্তিনীদের ওপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে সমর্থন দিতে তিনি এদিন সরকারি সফরে দেশটিতে পৌঁছেন। বিমানটি অবতরণ করার পর তাকে দেখা যায় লোহা ও গানপাউডার বোঝাই একটি স্তূপের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছেন। তাকে এদিন কোনো সরকারি পর্যায়ে অভ্যর্থনা বা লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, গাজায় নির্বিচার ফিলিস্তিনীদের হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে এর বৈধতা দিচ্ছে পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো।