যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলের পক্ষে আর কত সাফাই দেবেন মানবতাবাদের ধ্বজাধারী ব্রিটিশ রাজনীতিকরা?
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসনের শিকার হয়েছে ফিলিস্তিনী নবজাতক উদয় আবি মোহসেন। রোববার ইসরাইলি বাহিনীর বোমায় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে শিশুটি। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রামাণ্য নথি সংরক্ষণ করার কাজে নিয়োজিত ফিলিস্তিনের ফটোসাংবাদিক বেলাল খালেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি হৃদয়বিদারক পোস্টে শিশুটির কাফনে মোড়ানো ছবি দিয়ে এই প্রাণহরণের খবরটি দিয়েছেন। কাফনে আরবিতে লেখা ছিল: ‘উদয় আবি মোহসেন। তার বয়স হয়েছিল মাত্র এক দিন। এখনো তার নামে কোনো জন্মসনদ দেওয়া হয়নি। অবশ্য এর আগেই তার নামে মৃত্যুসনদ দেওয়া হলো।’
২৯ অক্টোবর রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুসারে, গাজা উপত্যকায় মাত্র ২০ দিনের ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞে নিহতের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। আহত হয়েছেন ২০ হাজার ২৪২ জন। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, গাজায় ৩১৯৫ শিশু নিহত হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে আরো ১ হাজার। এমন হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা উপত্যকাকে বিরামহীন বোমার আঘাতে গুড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল। রেহাই পাচ্ছে না, হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা মসজিদ-গির্জা। চারদিকের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে চলছে এমন হত্যাযজ্ঞ। জীবন বাঁচাতে ফিলিস্তিনিদের গগনবিদারী হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর হৃদয়।
গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদের পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর দাবি নিয়ে গত শনিবার আবারো লণ্ডনের রাস্তায় নেমেছেন প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ যোগ দিয়েছেন। গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি শনিবারই লণ্ডনসহ যুক্তরাজ্যের প্রধান শহরগুলোতে এমন বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন নানা বর্ণ ও বয়েসের মানুষ।
কিন্তু নিরব মানবতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথিত ফেরিওয়ালা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অন্যান্য মিত্ররা। এসব পশ্চিমা রাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন ও সাহায্যে বিশ্বকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফিলিস্তিনি নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলবাজ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েল। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোও ইসরাইলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছে।
ইসরাইলের প্রতি অযাচিতভাবে সহানুভূতি দেখিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাঙালী কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত প্রথম এমপি রুশনারা আলী। তাকে দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্রের সমর্থক আখ্যায়িত করে আগামী নির্বাচনে ভোট না দেয়ার জন্য দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে মুসলিম ভোটাররা যাতে লেবার পার্টিকে বর্জন করে সে দাবিও উঠেছে। গত শুক্রবার বিক্ষোভ হয়েছে রুশনারা আলী এমপির পার্টি অফিসের সামনে।
যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়াসহ অভিবাসী কমিউনিটিতে একচেটিয়া আধিপত্য এবং আনুগত্য যে লেবার পার্টির সেই দলের অবস্থান বিশেষ করে দলনেতা কিয়ার স্টারমার যেভাবে প্রকাশ্যে ইসরাইলের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তা দলটির সমর্থক সংখ্যালঘু কমিউনিটির মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।
যেসব জনপ্রতিনিধি তাদের বিবেক বিসর্জন দিয়ে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যাকে সমর্থন করে যুদ্ধাপরাধের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন তাদের মনে রাখা দরকার- বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজ যে অবস্থান নিয়েছে ইতিহাস এসব নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের তাদের বিরুদ্ধেই দাঁড় করাবে। ফিলিস্তিনীদের রক্তের দাগ তাদের হাত থেকেও মুছে যাবেনা।