ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিশ্ববিবেক
এমন বর্বরতা আগে দেখেনি দুনিয়া। ফিলিস্তিনের গাজায় গত এক মাস ধরে যে মাত্রার গণহত্যা, বর্বরতা, বোমা হামলা ও ধংসযজ্ঞ চালাচ্ছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল তা অতীতের সকল নৃশংসতা আর বীভৎসতাকে অতিক্রম করেছে। ইসরাইলের নৃশংস হামলায় গাজার স্কুল, হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, শরণার্থীশিবির কোনো কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। গাজা উপত্যকা আয়তনে লণ্ডন শহরের চাইতেও ছোট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ২৩ লক্ষ ফিলিস্তিনির ঘনবসতিপূর্ণ এই আবাসে ইসরাইল যে মাত্রার বোমা হামলা চালিয়েছে, তা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেরও সময়েও ঘটেনি। চরম হতাশাজনক সত্য হচ্ছে, এসব কিছুই চলছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ এর মিত্রদের সরাসরি সমর্থনে। শুধু সমর্থন নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাঠানো অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে এই হামলায়।
বোমা হামলায় এ পর্যন্ত ১০ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল যার অর্ধেকই শিশু। গাজায় পানি, বিদ্যুত, তেল, ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে দখলদার ইসরাইল। জাতিসংঘ বলছে, গাজার পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়কেও ছাড়িয়ে গেছে।
শুধু গাজাবাসী নন, জাতিসংঘের কর্মী, সংবাদকর্মী, চিকিৎসক কিংবা দাতব্য সংস্থার কর্মী কেউ রেহাই পাচ্ছে না সন্ত্রাসী ইসরাইল রাষ্ট্রের হামলা থেকে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তাদের ৮৮ জন কর্মী গত এক মাসে গাজায় নিহত হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো সংঘাত বিবেচনায় এটি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ কর্মী হত্যার ঘটনা।
ইসরাইলের হামলায় এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় মোট ১৭৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও ৩৪ জন নাগরিক সুরক্ষাকর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বসংস্থা জাতিসংঘের ওপর এমন আক্রমণের পরও বিশ্ব মোড়লরা নির্বাক, নির্বিকার।
অথচ যে আমেরিকা ইসরাইলকে এই যুদ্ধাপরাধ সংগঠনে প্রকাশ্য সমর্থন আর সহায়তা দিয়ে চলেছে সেই আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার গাজাকে বহু আগেই ‘খোলা আকাশের নীচে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কারাগার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর এবারের ইসরাইলে গণহত্যার ঘটনায় আরেক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, এই সংঘাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একপেশে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ওবামা বলেছেন, হামাস যা করেছে, তা ভয়ংকর। একে ন্যায্য বলে দাবি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটাও সত্য যে ফিলিস্তিনে যে দখলদারি চলছে এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যা কিছু ঘটছে, তা অসহনীয়।’
কিন্তু দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন আর সেই সাথে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানাতে নারাজ। উল্টো ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মিছিল-সমাবেশ বন্ধ করার জন্য নানা সরকারী পায়তারা চলছে। এমনকি ব্রিটেনের লেবার পার্টি সরকারে না থেকেও এই নিষ্ঠুরতাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। দলটির নেতা কিয়ার স্টারমার ইসরাইলের পক্ষে জোর দুতিয়ালিতে নেমেছেন। তিনি এমন কথাও বলেছেন যে, গাজায় পানি, বিদ্যুত, তেল ও খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে- সেটি ইসরাইলের অধিকার। চরম মানবিকতাহীন, বিবেকবর্জিত তাঁর এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে লেবার পার্টিতে শুরু হয়েছে তুলকালাম কাণ্ড। নজীরবিহীনভাবে দেশব্যাপী তিন শতাধিক কাউন্সিলার লেবার নেতার বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে গাজায় হামলা বন্ধের দাবি জানাতে চিঠি দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩৪ জন কাউন্সিলার দল থেকেই পদত্যাগ করেছেন। দলের তৃণমূল সমর্থকরা দাবি করছেন লেবার দলকে বয়কটের। অক্সফোর্ড ও বার্নলী কাউন্সিলের ক্ষমতা হারিয়েছে দলটি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইহুদিবিদ্বেষী উন্মাদ আচরণের পুনরাবৃত্তি করে চলেছে ইসরাইল। আর এই উন্মাদ নৃত্যে বিশ্বের ক্ষমতাসীনরা যোগ দিলেও আশার কথা হচ্ছে, ফিলিস্তিনের সমর্থনে দেশে দেশে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন। মানুষেরই জয় হবে, জানোয়ারদের নয়- সেই আশা ও বিশ্বাসে আমাদের দাঁড়াতে হবে ফিলিস্তিনের পাশে, মানুষের পাশে।