ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধের দাবি
পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ৩০ অক্টোবর: গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদের পাশাপাশি ব্রিটিশ সরকারকে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর দাবি নিয়ে লণ্ডনে গত শনিবার আয়োজিত পদযাত্রা ও সমাবেশেও লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান ও স্থল হামলা জোরদার করার প্রতিবাদে ২৮ অক্টোবর শনিবার দুপর ১২টায় এ বিক্ষোভের আয়োজন করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন, ফ্রেণ্ডস অফ আল-আকসা ও তাদের সহযোগী সংগঠন।
গত তিন সপ্তাহ ধরে প্রতি শনিবার লণ্ডনসহ যুক্তরাজ্যের প্রধান শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভে ফিলিস্তিনের পতাকা ও নানা ফেস্টুন-ব্যানার হাতে অংশ নিচ্ছেন নানা বর্ণ ও বয়েসের মানুষ।
গত শনিবারের সমাবেশে যোগ দিতে উপস্থিতরা দুপুরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছেই গোল্ডেন জুবিলি ব্রিজের কাছে জড়ো হন। সেখান থেকে ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো’, ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’ ও ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান করো’ লেখা প্লেকার্ড ও ব্যানার নিয়ে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট অভিমুখে বিক্ষোভকারীরা যাত্রা শুরু করেন।
এ সময় সাউন্ড সিস্টেম থেকে ‘ইসরাইলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ কর, গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ কর’ ও ‘আমরা সবাই ফিলিস্তিনি’ স্লোগান ভেসে আসে। জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী ভূমির কথা উল্লেখ করে মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত ফিলিস্তিনি মুক্ত হবে’। গত শনিবার ফিলিস্তিনের পক্ষে অনুষ্ঠিত লণ্ডনের বিক্ষোভটি এর আগের সপ্তাহের চেয়েও অনেক বড় ছিলো। আয়োজকরা বলছেন, স্মরণকালের বৃহত্তম এই বিক্ষোভ সমাবেশে পাঁচ লাখের মতো মানুষ অংশ নিয়েছেন। তবে লণ্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের বরাতে বিবিসির বলছে, এই সমাবেশে মাত্র ৭০,০০০ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় অতিক্রম করার পর পার্লামেন্ট স্কোয়ারে সমাবেশের পর বিক্ষোভটি কর্মসূচী শেষ হয়।
এদিকে, ওয়াশিংটনের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যুক্তরাজ্যের সুনাক সরকার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো থেকে বিরত রয়েছে। এর পরিবর্তে গাজার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য মানবিক করিডরের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন সুনাক।
গত ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাকামী হামাস সেনাদের ইসরায়েল হামলার পর থেকে ইসরায়েলের তথাকথিত ‘আত্মরক্ষার অধিকারকে’ সমর্থন জানিয়ে আসছে ব্রিটেন।
তবে লণ্ডনের মেয়র সাদিক খান প্রকাশ্যেই গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন। যদিও তাঁর দল লেবার পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে এখনো পশ্চিমা অবস্থানের পক্ষেই কথা বলছেন। বিক্ষোভকারীদের একজন ক্যামিল রেভুয়েল্ডা বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকা পরাশক্তিরা এ মুহূর্তে যথেষ্ট কাজ করছে না। তাই আমরা আজ এখানে জড়ো হয়েছি। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি, ফিলিস্তিনিদের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, মানবাধিকার এবং সমস্ত অধিকারের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি হামাসের বিষয় নয়। এটি ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষার বিষয়।’
এর আগের শনিবারও ফিলিস্তিনপন্থী মিছিলে লাখো মানুষ গাজায় হামলা থামানোর পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানান। এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ভুল তথ্য ছড়ানো ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে এখন আগের মত পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর মিথ্যাচার কিংবা সত্য গোপন করে রাখার চেষ্টা কাজ করছে না। গাজায় কি হচ্ছে মানুষ দেখছে। অনেক ইহুদি ধর্মাবলম্বী এবং ইসরাইলের সাবেক সেনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিলিস্তিদের প্রতি ইসরাইলের বর্ণবাদী, বর্বর আচরণের কথা তুলে ধরছেন। ফলে রাজনীতিকরা ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান ঘোষণা করলেও লাখ লাখ জনগণ রাস্তায় বের হয়ে জানান দিচ্ছে তারা সরকারের অবস্থানের সাথে একমত নয়। তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ন্যায়বিচারের পক্ষে।
লণ্ডনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, তুরষ্ক এবং আরব বিশ্বের দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ইসরাইলি বর্বরতা থামাতে বিক্ষোভ করছে মানুষ।