লণ্ডন, ২৮ নভেম্বর: বাংলাদেশ পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে। নানা গুজব আর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। নির্বাচন ঘিরে চারদিকে অস্থিরতা। একতরফা নির্বাচন আয়োজনের জন্য কাঠগড়ায় নির্বাচন কমিশন। জাতীয় পার্টি ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দলই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করবে এটা নিয়েই যত আলোচনা। ঢাকায় বলাবলি আছে, নির্বাচন কমিশনের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কথাবার্তা থেকে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে দেশের অর্থনীতি, পোশাকশিল্প ও ভবিষ্যতের ওপর এর একটা বড় প্রভাব পড়বে।
সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ইসির ওপর যে চাপ আসছে এই বিষয়টিও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন সিইসি। নির্বাচন নিয়ে দেশ সঙ্কটে আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে এমনটাও বলেছেন তিনি। কাজী হাবিবুল আউয়াল সর্বশেষ যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে বিলম্বিত উপলব্ধি বলে মনে করছেন অনেকে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সিইসি’র বক্তব্যের বিষয়ে বলেন, উনার সর্বশেষ বক্তব্যটিও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ তিনি শুধু একটি দেশের কথা বলেছেন। অন্য যেসব দেশ দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে যে সব কথাবার্তা বলে আসছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, বর্তমান ইসি ক্ষমতাসীন দলকে আবারো ক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এ কারণে বাইরের দেশগুলো কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এর দায়ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।
সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারিক হাকিমদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- আমাদের নির্বাচনে বাইরে থেকেও থাবা, হাত এসে পড়েছে। তারা থাবা বিস্তার করে রেখেছে। আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, পোশাকশিল্পসহ অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য করতে হবে। তিনি বলেন, আমাকে ইউনাইটেড স্টেটস যেভাবে কমাণ্ড করতে পারে, আমি সেভাবে ইউনাইটেড স্টেটসে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিতে পারছি না, পারবো না। এটা আরেকটা বাস্তবতা। এ সময় প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও আপেক্ষিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ওরা খুব বেশি দাবি করে নাই। একটাই দাবি-বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এখানে কোনোরকম কারচুপির আশ্রয় নেয়া যাবে না। এই নির্বাচনের ফেয়ারনেসকে উপলক্ষ করে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিভক্ত হয়ে গেছে। এটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তিনি বলেন, ইলেকশন জিনিসটা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য, চোখে দেখা যায় না, যাবেও না। তারপরেও বলা হয় নির্বাচন ক্রেডিবল, ফ্রি হয়েছে কি না, ফেয়ার হয়েছে কি না। এই পাবলিক পারসেপশনের কোনো মানদণ্ড নেই। তবুও জনগণকে বলতে হবে, নির্বাচন ফ্রি এবং ফেয়ার হয়েছে। সার্বিকভাবে যদি জনগণ বলে থাকে যে, এবারের নির্বাচনটা ফ্রি ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়েছে, তাহলে এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, অতি সম্প্রতি আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং লক্ষ্মীপুরে। ওখানেও সিল মারা হয়েছে। আমরা সেটা প্রতিহত করতে পারি নাই। আমাদের প্রশাসন পারেনি। আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তারা পারেনি। এটা লজ্জাস্কর।
সিইসি তার বক্তব্যে দেশের গত ৫০ বছরের নির্বাচনী সংস্কৃতির হালচাল তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে আছে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে সমভাবে দায়িত্বশীল হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। গণতন্ত্রে আমরা স্থিরভাবে এগোতে পারিনি। সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য সবাইকে সমভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে তিনি বলেন, ভোট শুরুর ২১ দিন আগে প্রার্থী প্রচারণা করতে পারবেন না। হয়তো সভা করতে পারবে। এর আগে কোনো ধরনের প্রচারণা করতে পারবেন না।
এবারের সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রথমবারের মতো ৩০০টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এতে প্রমাণ হয়েছে সত্যিকার অর্থে আমরা ভিজিল্যান্সটা চাচ্ছি। বিচারকরা যেভাবে সাহসী হয়ে ভিজিল্যান্স করতে পারবেন, অনেকে সেটা করতে পারবেন না। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, সাহসিকতা দিয়ে যতদূর পারেন সাহায্য করবেন। তিনি বলেন, লাইন যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেমে না থাকে। যদি থেমে থাকে তাহলে মনে করা হবে ভেতরে এই (সিলমারা) কাজটি হচ্ছে। লাইনটা চলমান থাকতে হবে।