পহেলা মে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের স্মরণীয় দিন। শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে দাঁিড়য়েছিল সেদিন আমেরিকার হে মাকের্টের এক দল শ্রমিক, ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে। শোষকদের লেলিয়ে দেয়া বাহিনির বন্দুকের গুলিতে শহীদ হন কয়েকজন সংগ্রামী শ্রমিক। রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্যদিয়ে সেই দাবী বাস্তবায়ন হয়, পিছু হটে শোষকদল। শ্রমজীবী মানুষের সেই অবিনাশী বিজয় হয়ে যায় বিশ্ববাসীর প্রাণের স্পন্দন। এরপর থেকে পহেলা মে বিশ্ববাসী পালন করে আসছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। বিলেতে বাঙালিরা মূলত শ্রমজীবী। এদেশে বাঙালির জীবন তাই নিতান্ত হাঁড়ভাঙা খাটুনির শ্রমিকের জীবন। নিজ দেশে মাতৃভূমি বাংলাদেশে স্বজনদের সামান্য ভালো জীবনযাপনের জন্যে এই শ্রমিক জীবন বেছে নেয়া। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখনো শোষণ ব্যবস্থার নতুন নতুন শেকলে বাঁধা শ্রমজীবীর জীবন। বিলাতেও এর ব্যতিক্রম নেই। মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য নূন্যতম মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে তাই এদেশে চলছে একের পর এক ধর্মঘট। তবু আকাঙক্ষা- আসছে দিন ভালো হবে। তাই দিনরাত মানুষের খেটে যাওয়া। সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন আসে বাংলাদেশে কি আমাদের স্বজনরা ভালো আছে? আর সে প্রশ্ন নিয়েই আজ হাজির পহেলা মে রক্তস্নাত ত্যাগের দিন হিসাবে। বাংলাদেশের কৃষক, মজুর, শ্রমিক বা ছোট ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ কতটুকু শান্তিতে বসবাস করছে- এ প্রশ্নের জবাব যুগ যুগ থেকেই দীর্ঘশ্বাসের। একাত্তরে পাক শোষক ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে ছিনিয়ে আনা স্বাধীন ভূরাষ্ট্র কায়েমের মধ্য দিয়ে যার পরিসমাপ্তি কামনা করা হয়েছিল। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ন্যায়বিচারের পূর্ণ বাস্তবায়িত একটি ব্যবস্থায় শান্তিতে বসবাস করার স্বপ্ন দেখেছিল মানুষ- সেই স্বপ্ন কি সফল হয়েছে? সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও শ্রমিক শ্রেণির অধিকারের পরোয়া করছে না বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি শিল্প-কারখানার মালিকপক্ষ। আইএলও নির্ধারিত শ্রমঘণ্টা অমান্য শুধু নয়, বাংলাদেশে শ্রমিক শ্রেণি শুধু ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত নয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণও বটে। আগুনে পুড়ে ও ভবন ধসে প্রায়ই মরতে হয় তাদের। দশ বছরেও রানা প্লাজার ভয়াবহ বিপর্যয়ে?ক্ষতিগ্রস্তরা সুবিচার পাননি। এরপর এ ধরনের আরো কত ঘটনা ঘটে গেছে। কিন্তু শ্রমজীবী শ্রেণীর মর্যাদা তো দুরের কথা মানুষ হিশেবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সেই উদ্যোগও নেই। এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে তাদের জীবন ও শ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মে দিবসে শ্রমিক শ্রেণির মানবেতর জীবনের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকারে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংগ্রামী মে দিবসের উজ্জ্বল আকাঙক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়ন এখনো কোথাও নেই। শোষকদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও স্বার্থবাদী কূটচাল দরিদ্র দেশ ও জাতিসমূহকে বিভেদের মোড়কে সংহার করে চলছে। বিশ্ববাসী তাকিয়ে দেখছে এই গত সপ্তাহে সংঘটিত সুদানে জাতিগত দাঙ্গা এবং সহিংস পরিস্থিতি। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, নারীপুরুষ বিপন্ন হয়ে প্রাণরক্ষায় দেশছাড়া হচ্ছে। সেই সাথে মনে করতে হচ্ছে বিপন্ন ইউক্রেন, ইয়েমেন, মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীর মুখ। কী ভয়ানকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে মানবসভ্যতা? মানুষের এই বিপন্নতা বিশ্ব মানবকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, শোষকরা নানা ছলচাতুরীতে গলা টিপে ধরছে ছোট ছোট দেশ ও জাতির। এসব অপশক্তির কবল থেকে মুক্তির পথ মে দিবসের সংগ্রামের চেতনাতেই খুঁজতে হবে। ২০২৩ সালের মে দিবসের প্রত্যাশা হোক মানব মুক্তি। শ্রমজীবী মানুষের রক্তে গড়া মানবসভ্যতার জয় নিশ্চিত হোক। মহান মে দিবসে বিশ্বের সব দেশের সব শ্রমজীবী মানুষের প্রতি রইল আমাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
বর্ণবাদী ইডিএলকে রুখতে হবে
ব্রিটেনজুড়ে বর্ণবাদী ইডিএল-এর চলমান তাণ্ডব রুখতে লণ্ডনের শান্তিপ্রিয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত সপ্তাহে সাউথপোর্টে তিন শিশু মেয়েকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং রাস্তায় পথচারীদের...